প্রচ্ছদ সারাদেশ খুলনা বিভাগ কুষ্টিয়ায় উৎসাহ-আমেজের মধ্যদিয়ে রথযাত্রা উৎসব অনুষ্ঠিত

কুষ্টিয়ায় উৎসাহ-আমেজের মধ্যদিয়ে রথযাত্রা উৎসব অনুষ্ঠিত

সুজন কুমার কর্মকার, কুষ্টিয়া ॥ সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব শ্রীশ্রী জগন্নাথদেবের রথযাত্রা উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে। কুষ্টিয়ার কেন্দ্রীয় মন্দির শ্রীশ্রী গোপীনাথ জিউর মন্দির প্রাঙ্গন থেকে ১৪ জুলাই শনিবার বিকেল সাড়ে ৪ টায় বিভিন্ন বাদ্যবাজনার তালে তালে উৎসব শুরু হয়। কুষ্টিয়ার ঐতিহ্যবাহী এ রথযাত্রা উৎসবের আয়োজন করে শ্রীশ্রী গোপীনাথ জিউর মন্দির কমিটি। রথটি শতশত ভক্তবৃন্দ আনন্দ-উল্লাসে টেনে বড় বাজর মন্দির প্রাঙ্গনে রেখে আসে। এ রথযাত্রা উৎসবের নেতৃত্বে ছিলেন শ্রীশ্রী গোপীনাথ জিউর মন্দির কমিটির সভাপতি (পি.পি) এ্যাডঃ অনুপ কুমার নন্দী। এ সময় উপস্থিত ছিলেন শ্রীশ্রী গোপীনাথ জিউর মন্দির কমিটির সাধারণ সম্পাদক তরুণ কান্তি চাকী (খোকন), কুষ্টিয়া জেলা পূজা উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি নরেন্দ্র নাথ সাহা, সহ-সভাপতি বিজয় কুমার কেজরীওয়াল, শ্রীশ্রী গোপীনাথ জিউর মন্দির কমিটির সহ-সভাপতি সরজিত কুমার বোস, সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা স্বপন কুমার নাগ, যুগ্ম-সম্পাদক এ্যাডঃ রমেশ চন্দ্র দত্ত, কুষ্টিয়া বড় বাজার সার্ব্বজনীন পূজা মন্দির কমিটির সাধারণ সম্পাদক অশোক সাহা, বিশিষ্ট সমাজ সেবক মাধব চন্দ্র কর্মকার, হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ কুষ্টিয়া সদর উপজেলা শাখার সভাপতি ব্যারিস্টার গৌরব চাকী, এজিপি এ্যাডঃ শীলা বসু, শ্রীশ্রী গোপীনাথ জিউর মন্দির কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক বাবলু সরকার সহ শ্রীশ্রী গোপীনাথ জিউর মন্দির কমিটির অন্যান্য নেতৃবৃন্দ এবং শহরের বিভিন্ন মন্দির কমিটির নেতৃবৃন্দ, পূজা উদ্যাপন পরিষদ জেলা শাখা ও উপজেলা শাখার অন্যান্য নেতৃবৃন্দ, হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ জেলা শাখা ও উপজেলা শাখার নেতৃবৃন্দ এবং শত শত ভক্তবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
রথযাত্রা উৎসব বাঙালির এক মিলন মেলায় পরিণত হয়। কুষ্টিয়ার এ রথযাত্রা উৎসবে পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে কঠোর নজরদারী ছিলো। উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্যদিয়ে রথযাত্রা উৎসব পালিত হয়েছে। এ রথযাত্রাকে ঘিরে বড় বাজার থেকে সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় পর্যন্ত বসে বিশাল লম্বা এক মেলা। মেলায় বিভিন্ন মুখরোচক খাবার সামগ্রী ছাড়াও বিভিন্ন পসরার সমাহার ঘটে। নয় দিন পর আবার হবে উল্টো রথ উৎসব।
জানাগেছে, কুষ্টিয়ার এ রথের ইতিহাস বহু পুরাতন। ১৯২০ সালে কুষ্টিয়াতে কাঠের বড় রথ ছিল। সেই কাঠের রথটি প্রতি বছর অনুষ্ঠানের ২/৩ মাস আগে থেকে রং ও পরিস্কারের জন্য কুষ্টিয়ার ধনি ব্যাক্তিদের নিটক চাঁদা নির্ধারণ করার জন্য, শ্রীশ্রী গোপীনাথ জিউর মন্দিরে সভা হত। কুষ্টিয়া শহরতলীর বাড়াদী গ্রামে এক ধনী ব্যাক্তি ছিল। তিনি সভায় নিয়মিত উপস্থিত থাকতেন। একবার সভা শেষ হবার পর তিনি দেরীতে উপস্থিত হয়। তখন অন্যান্য সদস্যগণ তার প্রতি ঠাট্টা করে বলেছিলেন যে, ‘‘দেরী করে আসলে কি আপনার চাঁদা কম হবে নাকি?’’ তখন তিনি বলেছিলেন ঠিক আছে এরপর থেকে আর কাউকে চাঁদা দিতে হবে না। আমি নিজেই একটা পিতলের রথ নির্মাণ করে দেব। আর তার পর থেকে কুষ্টিয়ায় পিতলের তৈরী রথে, রথযাত্রা উৎসব করা হত। তবে ১৯৭১ সালে পাক হানাদার বাহিনী কর্তৃক এটি ধবংস হয়। রথের মাথায় একটি পিতলের বিগ্রহ ছিল। যা স্বাধিনতার পরে চুরি হয়ে যায়।