প্রচ্ছদ হেড লাইন করোনা: ইতালিতে জরুরি অবস্থা, ফ্রান্সে মন্ত্রী আক্রান্ত

করোনা: ইতালিতে জরুরি অবস্থা, ফ্রান্সে মন্ত্রী আক্রান্ত

করোনা ভাইরাস সংক্রমণ চীনের পরে সবচেয়ে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে ইতালিতে। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সেখানে বাড়ছে মৃতের সংখ্যা। সোমবার সকাল পর্যন্ত ইতালিতে মারা গেছেন ৩৬৬ জন। কিন্তু দিনশেষে তা লাফিয়ে বেড়ে দাঁড়ায় ৪৬৩। এর ফলে পুরো ইতালিতে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে। ভ্রমণে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। জনসমাগম নিষিদ্ধ করা হয়েছে পুরো দেশে। সারা দেশে ফুটবল ম্যাচসহ সব খেলাধুলা বিষয়ক ইভেন্ট স্থগিত করা হয়েছে।

৩ এপ্রিল পর্যন্ত সব স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকবে। বিশ্বজুড়ে এখন করোনা ভাইরাসে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে কমপক্ষে ৩৮৯০। সোমবার প্রধানমন্ত্রী গুসেপ্পে কোন্টে জনসাধারণকে ঘরের ভিতর অবস্থান করার নির্দেশ দিয়েছেন। অত্যাবশ্যকীয় কোনো সফরের প্রয়োজন হলে কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে বলা হয়েছে। এর আগে করোনা সংক্রমণের কারণে দেশেটির ল্যাবারডি ও ১৪টি এলাকায় জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছিল। তা এখন পুরো দেশের জন্য প্রযোজ্য বলে ঘোষণা দিয়েছে সরকার। টেলিভিশনে এ নিয়ে ভাষণ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী কোন্টে। তিনি বলেছেন, ভয়াবহভাবে বিপন্ন যারা তাদেরকে রক্ষার জন্য এমন পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। তাদেরকে রক্ষার জন্য হাতে আর বেশি সময় নেই। সরকারি তথ্যমতে, রোববারের তুলনায় ইতালিতে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পেয়েছে শতকরা ২৪ ভাগ। ইতালিতে রয়েছে মোট ২০টি অঞ্চল। এর প্রতিটিতেই ছড়িয়ে পড়েছে এই ভাইরাস।
তাই জনগণকে সতর্ক করে প্রধানমন্ত্রী কোন্টে বলেছেন, সর্বোত্তম উপায় হলো জনগণের বাড়িতেই অবস্থান করা। সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে। বিষয়টি অত্যন্তু গুরুত্ব দেয়ার ব্যাপার। সোমবার সন্ধ্যায় দেয়া ভাষণে তিনি বলেন, পুরো ইতালি হবে একটি সুরক্ষিত এলাকা বা প্রটেকটেড জোন। ইতালির ভালোর জন্য আমাদেরকে অবশ্যই কিছু ত্যাগ করতে হবে এবং তা এখনই করতে হবে। তাই আমি আরো কঠোর, আরো কড়া পদক্ষেপ নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি করোনা ভাইরাসকে নিয়ন্ত্রণ করতে এবং আমার দেশের সব নাগরিকের স্বাস্থ্য সুরক্ষিত রাখতে। লা রিপাবলিকা পত্রিকার সঙ্গে এর আগে একটি সাক্ষাতকার দিয়েছেন তিনি এই প্রাদুর্ভাব নিয়ে। প্রধানমন্ত্রী কোন্টে বলেছেন, উইন্সটন চার্চিলের পুরনো দিনের একটি ভাষণের কথা মনে পড়ছে আমার। তাহলো- ইট ইজ আওয়ার ডার্কেস্ট আওয়ার, বাট উই উইল মেক ইট। অর্থাৎ এটা হলো আমাদের জন্য সবচেয়ে অন্ধকার সময়। কিন্তু আমরা তা কাটিয়ে উঠবো।
প্রধানমন্ত্রী কোন্টে বলেন, তার গৃহীত পদক্ষেপের মধ্যে ‘আমি বাড়িতেই অবস্থান করবো’ প্রাধান্য পাচ্ছে। লোকজনকে জনসমাগমে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। রাতের বেলায় কেউ বাইরে থাকতে পারবেন না। বিষয়টি প্রাণঘাতী। তাই আমরা আর এটাকে অনুমোদন দিতে পারি না।
সরকার বলেছে, শুধু ওই সব ব্যক্তিকে ভ্রমণের অনুমতি দেয়া হবে যাদের বৈধভাবে কাজ করার অনুমতি আছে অথবা পারিবারিক কারণ থাকবে তার ভ্রমণ স্থগিত করা যাবে না। যেসব মানুষ ফ্লাইটে করে দেশের বাইরে যাচ্ছেন তাদেরকে করোনা পরীক্ষা দিতে হবে। আবার যারা আসছেন তাদের বেলায়ও একই নিয়ম প্রযোজ্য। ট্রেন স্টেশনগুলোতেও নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। সেখানে যাত্রীদের শরীরের তাপমাত্রা চেক করা হচ্ছে। কতগুলো বন্দরে প্রমোদতরীর নোঙর নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
ওদিকে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়া নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকার গৃহীত পদক্ষেপের কারণে ইতালির বিভিন্ন জেলখানায় আটক বন্দি স্বজনের সঙ্গে আত্মীয়দের সাক্ষাত স্থগিত করে কর্তৃপক্ষ। এর ফলে দেশজুড়ে জেলখানাগুলোতে দাঙ্গা দেখা দেয়। এতে কমপক্ষে ৭ জন বন্দি নিহত হয়েছেন। এর সূত্রপাত হয় মোডেনা শহরের সান্টান্না জেলখানায়। সেখানে বন্দিরা জেলখানার ভিতর একটি হাসপাতালে চড়াও হয়। সেখান থেকে তারা অতিমাত্রায় হেরোইন নেয়। ফলে দু’জন মারা যায় সেখানে। মিলানে সান বিট্টোরে জেলখানায় বন্দিরা একটি সেল ব্লকে আগুন ধরিয়ে দেয়। তারপর তারা ভবনটির জানালা দিয়ে ছাদে উঠে যায়। ব্যানার উড়াতে থাকে। দক্ষিণের ফোজ্জিয়া শহরে বন্দিরা একটি ভবন থেকে বেরিয়ে পড়ে। পরে দ্রুততার সঙ্গে তাদের অনেককে আটক করা হয়েছে। ৯ জন নিখোঁজ রয়েছে। উত্তর ইতালিতে অন্য জেলখানায়ও দাঙ্গা দেখা দেয়।
ওদিকে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু তার দেশে যাওয়া যে কোন ব্যক্তিকে ১৪ দিনের জন্য স্বেচ্ছায় কোয়ারেন্টিনে থাকার নির্দেশ দিয়েছে। ইরানে নতুন করে ২৪ ঘন্টায় মারা গেছে ৪৩ জন। সব মিলিয়ে সেখানে সরকারি হিসাব মতে মৃতের সংখ্যা ২৩৭। আক্রান্ত হয়েছেন ৭১৬১ জন। তবে বাস্তবে এই সংখ্যাগুলো আরো বেশি বলে মনে করা হচ্ছে। এ অবস্থায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সতর্কতা দিয়ে বলেছে, বিশ্বজুড়ে করোনা ভাইরাস মহামারি ‘ভেরি রিয়েল’। কানাডায় প্রথম এই ভাইরাসে একজন মারা গেছেন। তিনি বৃটিশ কলাম্বিয়ার ভ্যানকোভারে একটি নার্সিং হোমে মারা যান। মৃত এই ব্যক্তি একজন বয়স্ক পুরুষ। ফ্রান্সে সংস্কৃতি বিষয়কমন্ত্রী ফ্রাঁঙ্ক রিস্টার সে দেশের সরকারের সদস্যদের মধ্যে প্রথম আক্রান্ত হয়েছেন করোনায়।