প্রচ্ছদ আজকের সেরা সংবাদ এই রাস্তা আর কতো ছোট হবে?

এই রাস্তা আর কতো ছোট হবে?

অপরিকল্পিত যানবাহন পার্কিং ও গড়ে উঠা অসংখ্য মোটরগ্যারেজে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ শহরের মধ্যকার অংশটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এ সকল গ্যারেজের সামনে জায়গা না থাকায় মহাসড়কের পাশ ঘেঁষে আবার কখনও কখনও সড়কের ওপর যানবাহন রেখেই চলছে মেরামতের কাজ। ফলে রাস্তাটি এখন অনেক ছোট হয়ে গেছে। এতে এই রাস্তার ওপর যানবাহনের চাপ বেড়েছে তাই ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ার পাশাপাশি ঘটছে ছোটোখাটো দুর্ঘটনা।সরজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, শহরের নিমতলা বাসস্ট্যান্ড হতে চিনিকল গেটের আগ পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার জুড়ে মহাসড়কের পাশ ঘেঁষে এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ফলে ব্যস্ততম এ অংশটিতে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। আবার সড়ক দখলের কারণেই প্রতিনিয়ত যানজটে আটকে যাচ্ছে যাত্রীবাহী ও মালামাল বহনকারী যানবাহন। শহরের এ অংশ ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনায়  সমাধানে উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির মিটিংয়ে একাধিকবার আলোচনা করা হলেও সভাকক্ষ ত্যাগ করার পর দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা যেন সবকিছু ভুলে যান। ফলে প্রতিকার তো হচ্ছেই না বরং মহাসড়ক দখলে জনদুর্ভোগ যেন পাল্লা দিয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। দেশের দক্ষিণাঞ্চলের বেশ কয়েকটি জেলার সকল ধরনের হাজার হাজার যানবাহন এ মহাসড়ক দিয়ে চলাচল করছে। আর এ মহাসড়কটি কালীগঞ্জ শহরের মধ্য দিয়েই অবস্থিত। শহরের নিমতলা বাসস্ট্যান্ড থেকে মোবারকগঞ্জ চিনিকলের প্রধান গেটের আগ পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটারে মধ্যে অর্ধ শতাধিক মোটর গ্যারেজ গড়ে উঠেছে। বিশেষ করে শহরের পুরাতন ব্রিজ সংলগ্ন সড়কের উত্তর পাশে, আয়েশা খাতুন তেল পাম্পের পশ্চিম পাশে, বৈশাখী তেল পাম্পের পূর্বে মহাসড়কের পাশ ঘেঁষে বেশ কিছু গ্যারেজ রয়েছে।স্থানীয়রা জানান, সড়ক ঘেঁষে যানবাহন রেখে সারাবছরই মেরামতের কাজ চলে। এসকল স্থানে যানবাহনগুলো পার্কিংও করা হচ্ছে অপরিকল্পিতভাবে। এছাড়াও নিমতলা বাসস্ট্যান্ডসংলগ্ন মানু বাবুর ঘোষ মার্কেটের সামনে কোনও মোটরগ্যারেজ না থাকলেও এখানে সড়ক ঘেঁষে পার্কিং করা হয় বিভিন্ন ধরনের যানবাহন। আর পার্কিং করা গাড়িগুলো ঘুরিয়ে সড়কে উঠানোর সময় মহাসড়কের দুদিক থেকে আসা দ্রুতগামী যানবাহনের প্রায়ই ধাক্কা লেগে দুর্ঘটনা ঘটে। প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার শিকার হন পথচারীরাও। তারা আরও জানান, শহরের বৈশাখী তেলপাম্প সংলগ্ন বেশ কয়েকটি গ্যারেজে গাড়ি রেখে নতুন পুরাতন গাড়ির বডি তৈরি করা হচ্ছে। কোনও কোনও গ্যারেজের সামনে সড়ক ঘেঁষে কয়েকদিন ধরে নষ্ট যানবাহন রেখে দেয়া হয়। শাহাজান আলী নামের এক ব্যক্তি অভিযোগ করেন, মেইন স্ট্যান্ডের পাশেই প্রতিদিন সকালে সড়ক ঘেঁষে রাখা হয় বালুভর্তি ট্রাক। আবার ট্র্যাফিক আইল্যান্ডের মুখেই পূর্বপাশে গড়ে তোলা হয়েছে ইজিবাইকস্ট্যান্ড। আর পশ্চিমপাশে সড়ক ঘেঁষে করা হয়েছে সিএনজিস্ট্যান্ড। মেক্সি সুপার মার্কেটের সামনে সড়ক ঘেঁষে করা হয়েছে স্যালো ইঞ্জিনচালিত নসিমনের স্ট্যান্ড।স্থানীয়দের অভিযোগ, বাস ছাড়ার সময়সীমা থাকলেও যাত্রীবাহী বাসগুলো কাউন্টার ত্যাগ করেও সড়কের ওপর অযথা দাঁড়িয়ে থাকে। এ কারণে ওই গাড়ির পেছনে যে আরও অনেক গাড়ি লাইন পড়ে গেছে এটা তারা দেখেও না দেখার ভান করেন। ফলে বিনা কারণে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। এ সকল কারণে মহাসড়কের কালীগঞ্জ শহরের অংশ হয়ে পড়েছে অধিকতর ঝুঁকিপূর্ণ। ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন এই সড়ক দিয়ে চলাচলরত যাত্রীবাহী বাস ও ট্রাকসহ অন্যান্য যানবাহনের যাত্রীরা।ভুক্তভোগীদের দাবি, মেইন টার্মিনালে অনেক জায়গা পড়ে থাকে। যাত্রীবাহী বাসগুলো যদি নিয়ন্ত্রণ করে সেখান থেকে যাত্রী উঠানামা করিয়ে ছাড়া হয় তাহলে যানজট অনেকটা কমে যাবে।বৈশাখী তেল পাম্প এলাকার বাসিন্দারা অভিযোগ করেছেন, বৈশাখী তেলপাম্প থেকে নলডাঙ্গা ভুষণ হাইস্কুল হয়ে বাজার রোডের বৈশাখী মোড়টি দখল করে রেখেছে স্থানীয় কয়েকজন মোটরগ্যারেজ মালিক। তারা তাদের গ্যারেজে গাড়ি না ঢুকিয়ে  ওই সড়কের মুখেই গাড়ি মেরামত করছেন। যে কারণে ভুষণ সড়ক দিয়ে বৈশাখী তেল পাম্প এলাকায় ঢুকতে গেলে মহাসড়ক দেখা যায় না। ফলে স্থানটি দুর্ঘটনার পয়েন্টে পরিণত হয়েছে।বিষয়টি নিয়ে এর আগেও কালীগঞ্জ উপজেলা আইনশৃঙ্খলা সভায় বেশ কয়েকবার আলোচনা করা হয়েছে। সাবেক উপজেলা নির্বাহী অফিসার মানোয়ার হোসেন মোল্লা, ছাদেকুর রহমান, উত্তম কুমার রায় কয়েকটি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করলেও মহাসড়ক দখল বন্ধ হয়নি। ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জরিমানা করার ঘণ্টাখানেক পরও আবার রাস্তার ওপর গাড়ি রেখে গ্যারেজ মালিকদের গাড়ি মেরামত করতে দেখা গেছে। এছাড়াও মহাসড়কের দখলমুক্ত করতে এর আগে সাবেক ইউএনও ছাদেকুর রহমান মোটর মালিক ও গ্যারেজ মালিকদের সঙ্গে বৈঠকও করেছিলেন। এটাও কাজে আসেনি। তবে এখন কালীগঞ্জবাসী তাকিয়ে আছে  নতুন যোগদানকারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুবর্ণা রানী সাহা, কালীগঞ্জ থানার ওসি ইউনুচ আলী ও পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত মেয়র আশরাফুল আলম আশরাফের দিকে।এ ব্যাপারে কালীগঞ্জ পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত মেয়র আশরাফুল আলম আশরাফ জানান, বিষয়টি নিয়ে গত আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় আলোচনা হয়েছে। খুব শিগগিরই গ্যারেজ মালিক ও মোটর মালিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুবর্ণা রানী সাহা জানান, বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। চলতি মাসেই সংশ্লিষ্টদের সঙ্গেই মতবিনিময় সভা করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তিনি বলেন যেকোনোভাবে এ মহাসড়কের দখলমুক্ত করা হবে।