প্রচ্ছদ জাতীয় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সম্ভব হয়নি: কমিশনার

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সম্ভব হয়নি: কমিশনার

রোহিঙ্গাদের মিয়ানমার ফিরে যাওয়ার অনীহার কারণে আজ প্রত্যাবাসন সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছেন শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন বিষয়ক কমিশনার মো. আবুল কালাম।বৃহস্পতিবার বিকেলে কুতুপালং শরণার্থী শিবিরে সাংবাদিকদের তিনি একথা জানান।এসময় আবুল কালাম আরও বলেন,  রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের পরবর্তী তারিখ জানাবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

এর আগে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে প্রত্যাবাসনের জন্য মনোনীত রোহিঙ্গাদের ট্রানজিটে নিয়ে যাওয়ার জন্য বাস, ট্রাক ও খাদ্য-সামগ্রী নিয়ে তৈরি থাকলেও একজন রোহিঙ্গাও যেতে রাজি হননি।তারা বলেন, মিয়ানমারে তাদের নাগরিকত্ব, ভিটেমাটি ফিরিয়ে দেয়া ও অবাদ চলাফেরার সুযোগ নিশ্চিত না করা হলে তারা ফিরে যাবেন না।

প্রত্যাবাসন তালিকায় নাম উঠা নারী রাহেলা বেগম বলেন, মিয়ানমারে আমাদের নাগরিকত্ব নিশ্চিত করতে হবে, তাহলেই আমরা মিয়ানমার ফিরে যাব।রমজান নামের আরেক বৃদ্ধ কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমরা কোনও অবস্থাতেই মিয়ানমার ফিরে যাব না। সেখানে ফিরে গেলে তারা আমাদের নির্যাতন করে মেরে ফেলবে।

এদিকে  রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে ফিরে না যাওয়ার জন্য বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই বিক্ষোভ মিছিল করছে। অনেকেই আবার ক্যাম্প ছেড়ে অন্য ক্যাম্পে পালিয়ে গেছেন।

প্রসঙ্গত, গেল বছরের ২৪ আগস্ট নিরাপত্তা বাহিনীর তল্লাশি চৌকিতে হামলার পর রাখাইনে পূর্ব পরিকল্পিত ও কাঠামোবদ্ধ সহিংসতা জোরালো করে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। নিপীড়নের মুখে গেল বছরের ২৫ আগস্ট থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে সাত লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা। এর আগে থেকে আশ্রয় নেওয়াসহ ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের ৩০টি ক্যাম্পে অস্থায়ীভাবে অবস্থান করছে। এই রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে আন্তর্জাতিক চাপের মুখে গেল ২০১৭ সালের নভেম্বরে বাংলাদেশ-মিয়ানমার প্রত্যাবাসন চুক্তি হয়।

রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসনের জন্য এ বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে দুই দেশের সমন্বয়ে গঠিত জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের সভায় একটি সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করা হয়। স্মারকের অংশ হিসেবে বাংলাদেশ মিয়ানমারের কাছে আট হাজার রোহিঙ্গার তালিকা পাঠায়। যাচাই-বাছাই শেষে মিয়ানমার ওই তালিকা থেকে ৫ হাজার ৫শ’ জনকে প্রত্যাবাসনের ছাড়পত্র দেয়।গেল ৩০ অক্টোবর জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের সভায় প্রথম ধাপে ২ হাজার ২৫১ জন রোহিঙ্গাকে প্রত্যাবাসনের বিষয়টি চূড়ান্ত করা হয়।

চুক্তি অনুযায়ী, প্রতিদিন ফেরত নেওয়া হবে ১৫০ জন রোহিঙ্গাকে। প্রথম ধাপের প্রত্যাবাসন কার্যক্রম আজ ১৫ নভেম্বর থেকে শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। প্রত্যাবাসনের জন্য টেকনাফের কেরুনতলী ট্রানজিট ক্যাম্প প্রস্তুত করা হয়েছে। অন্যদিকে, বান্দরবানের ঘুমধুমে আরও একটি ট্রানজিট ক্যাম্প প্রায় সম্পন্নের পথে।

এদিকে, প্রত্যাবাসনের জন্য তৈরি করা তালিকায় থাকা রোহিঙ্গারা জানান, মিয়ানমারের ফেরার বিষয়টি কিছু দিন আগে তারা জেনেছেন। তবে কীভাবে এবং কখন যেতে হবে, সে সম্পর্কে তাদের ধারণা নেই। মিয়ানমারের অবস্থান সম্পর্কেও নূন্যতম ধারণা তাদের দেয়া হয়নি। এ কারণে অনেকেই ক্যাম্প ছেড়ে পালিয়ে গেছে। যতদিন পর্যন্ত মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব, বসতভিটা, জমিজমা ফিরিয়ে না দেবে, ততদিন পর্যন্ত তারা মিয়ানমারে ফিরে যাবেন না।