প্রচ্ছদ জাতীয় ১৯৮৮ সালের পরে এবার সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যা বাংলাদেশে

১৯৮৮ সালের পরে এবার সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যা বাংলাদেশে

 

বিডি রিপোর্ট টোয়েন্টিফোর ডটকম :
১৯৮৮ সালের ভয়াবহ বন্যার পর এবারের বন্যাই সব থেকে বেশি সময় ধরে স্থায়ী হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে রাষ্ট্রপুঞ্জ। রাষ্ট্রপুঞ্জের কো-অর্ডিনেশন অব হিউম্যানিটারিয়ান অ্যাফেয়ার্স বা ওসিএইচএ তাদের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে এ আশঙ্কার কথা জানিয়েছে।
উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে ও অবিরাম বৃষ্টিতে ক্রমেই ভয়াবহ হচ্ছে বাংলাদেশের বন্যা পরিস্থিতি। বিভিন্ন জেলায় নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে।
বন্যার জেরে বিভিন্ন সড়কে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। সড়ক-মহাসড়ক ভেঙে যাচ্ছে। ভাসছে ঘরবাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাট-বাজার ও সাইক্লোন শেল্টার। বন্যায় গৃহহীন মানুষ এখন আশ্রয়ের সন্ধানে দিশেহারা।
কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাট জেলায় বানভাসি গ্রামে কুড়িগ্রামের ১৬ জন শিশু-সহ ১৮ জন ও লালমনিরহাটে ৬টি শিশু বন্যার জল ডুবে মারা গেছে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ২৪ লাখের বেশি মানুষ। এর মধ্যে ১৩ লাখ শিশু রয়েছে বলে জানিয়েছে ইউনিসেফ।
তবে সিলেট, সুনামগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও নেত্রকোনা জেলায় বন্যা পরিস্থিতির আজ থেকে উন্নত হতে পারে বলে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে।
মানিকগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, ফরিদপুর, মাদারীপুর, চাঁদপুর, রাজবাড়ী, শরীয়তপুর ও ঢাকা জেলার নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকবে।
কিন্তু কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, নাটোর, বগুড়া, জামালপুর, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল ও নওগাঁ জেলার বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ঢাকা জেলার আশপাশের নদীগুলোর জল বাড়ছে।
বর্তমানে ১০১টি জল স্টেশনের মধ্যে জল বাড়ছে ৪৯টির, কমছে ৪৯টির এবং স্থিতিশীল রয়েছে ৩টির। বন্যা আক্রান্ত জেলা ২০টি। বিপদসীমার ওপর দিয়ে ১৯টি নদীর জল প্রবাহিত হচ্ছে।
গঙ্গা-পদ্মা নদীর তীরবর্তী অঞ্চলগুলোতে ২৭ জুলাইয়ের পর বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে। আর ঢাকার আশপাশে ৩০ জুলাই পর্যন্ত বন্যা স্থায়ী হতে পারে।
পূর্বাভাসে আরো বলা হয়েছে, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদীর জল বাড়তে পারে।
২৬ জুলাই পর্যন্ত কুড়িগ্রাম, বগুড়া, গাইবান্ধা, সিরাজগঞ্জ, জামালপুর, টাঙ্গাইল ও মানিকগঞ্জ জেলার বন্যা পরিস্থিতি অবনতি হতে পারে।
জামালপুরে তৃতীয় বার বন্যার প্রকোপ শুরু হয়েছে। যমুনার জল বৃদ্ধি পেয়ে বাহাদুরাবাদ ঘাট পয়েন্টে বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে। বক্সিগঞ্জে বন্যার জলে ডুবে দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে। মাদারিপুরের চরে ভাঙনের তীব্রতা বেড়েছে।

মেঘনার ভাঙনে লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার ৯টি ইউনিয়নের মধ্যে চরকালকিনি, সাহেবেরহাট, চরফলকন ও পাটারিরহাট ইউনিয়নের ১০টি ওয়ার্ডের অধিকাংশ এলাকাই নদীতে মিশে গিয়েছে।
এ দিকে তিস্তায় বিলীন হয়েছে গঙ্গাচড়ায় তিনশতাধিক বাড়ি। চাঁদপুর সদর উপজেলার রাজরাজেশ্বর ইউনিয়নে পদ্মা নদীর স্রোতে নির্মাণের দুই মাসের মধ্যে তলিয়ে গেছে ২ কোটি ২৯ লাখ টাকায় নির্মিত স্কুল তথা দুর্যোগ আশ্রয় কেন্দ্র।
ঢাকা-শরীয়তপুর সড়কের বিভিন্ন অংশ বন্যার তলিয়ে যাওয়ায় এই দুই জেলার মধ্যে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। জামালপুরের মাদারগঞ্জে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। শরীয়তপুর পদ্মা নদী বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। জলবন্দি রয়েছেন অন্তত সাড়ে ৩ লাখ মানুষ।
পদ্মা ও মেঘনা নদীতে তীব্র স্রোতের কারণে চারটি ফেরি চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। যে কারণে নরসিংহপুর ও হরিনা ঘাটে আটকা পড়েছে আট শতাধিক যানবাহন।
কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র নদের জল বেড়ে রৌমারী ও রাজিবপুর উপজেলার প্রায় ২ লাখ মানুষ জলবন্দি হয়ে পড়েছেন। বেশ কিছু বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় নতুন নতুন গ্রাম প্লাবিত হচ্ছে।
সিলেট ও সুনামগঞ্জে কানাইঘাটে সুরমা এবং ফেঞ্চুগঞ্জে কুশিয়ারা নদীর জল এখনো বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এমন বন্যা পরিস্থিতি জুলাইয়ের শেষ পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। অগস্টের প্রথম সপ্তাহে ক্রমান্বয়ে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতির সম্ভাবনা রয়েছে।