প্রচ্ছদ সারাদেশ হরিরামপুরের রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়ন পরিষদের অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে এলাকাবাসীর বিক্ষোভ

হরিরামপুরের রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়ন পরিষদের অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে এলাকাবাসীর বিক্ষোভ

জ. ই. আকাশ,হরিরামপুর :
মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়ন পরিষদ যেন অনিয়ম-দুর্নীতির অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। আর এই অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে এলাকাবাসী ফুঁসে উঠেছে। বুধবার (১৩ মে) এলাকাবাসী বিক্ষোভ মিছিল করেছে।

জানা গেছে, পরিষদর চেয়ারম্যান মোঃ কামাল হোসেন, ২ নং ওয়ার্ডের মেম্বার কামাল হোসেন, ৬ নং ওয়ার্ডের মেম্বার আঃ কুদ্দুস, ৮ নং ওয়ার্ডের মেম্বার শেখ ছালাম এদের বিরুদ্ধে পৃথক ভাবে বেশ কয়েকজন ভুক্তভোগী অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ এনে জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ প্রদান করেছেন।

ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের ঈশাখাবাদ গ্রামের হতদরিদ্র মোঃ জামাল মোল্লার স্ত্রী মিনু বেগম তার অভিযোগে উল্লেখ করেছেন, ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরে গরীব দুস্থ পরিবারের গৃহ নিমার্ণ প্রকল্প থেকে ঘর প্রদানের প্রতিশ্রুতিতে অত্র ওয়ার্ডের মেম্বার মোঃ কামাল হোসেন ৫০,০০০ (পঞ্চাশ হাজার) টাকা দাবি করেন। মিনু বেগম প্রথম দফায় ৩০,০০০ (ত্রিশ হাজার) টাকা দেয় এবং ঘর পাওয়ার পরে বাকি ২০,০০০/- (বিশ হাজার) টাকা দেয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করে। কিন্ত ৬ মাস অতিবাহিত হলে ঘরের কোন হদিস না পেয়ে এ অভিযোগ দায়ের করেন। সরেজমিনে হতদরিদ্র জামাল মোল্লার বাড়ি গিয়ে অভিযোগের বিষয়টি জানতে চাইলে ষাটোর্দ্ধো এই বৃদ্ধা জানান, আমি গরীব। এই ভাঙ্গা ঘরে কোনো রকম মাথা গুঁজে বসবাস করছি। তাই একটা সরকারি ঘরের জন্য কামাল মেম্বারের সাথে যোগাযোগ করি। সে খরচ পাতির জন্য ৫০,০০০ (পঞ্চাশ হাজার) টাকা চায়। আমি ধার দেনা করে ৩০, ০০০ (ত্রিশ হাজার) টাকা দেই। আর ঘর পাওয়ার পরে বাকি ২০,০০০ (বিশ হাজার) টাকা দেয়ার জন্য রাজি হই। এখন ঘরও পাইনা টাকাও ফেরত দেয় না।

একই প্রকল্পের ঘর না পাওয়া ঈশাখাবাদ গ্রামের আরেক ভুক্তভোগী দশমী রানী রাজবংশী তার অভিযোগে প্রকাশ করেন, ঘরের চেয়ারম্যান কামাল হোসেনের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি ঘর দেয়ার প্রতিশ্রুতিতে ৫০,০০০/- (পঞ্চাশ হাজার) টাকার দাবি করেন। ঘর পাওয়ার জন্য তাতেই রাজি হয়ে প্রথম কিস্তিতে চেয়ারম্যানকে ১৫,০০০/-(পনের হাজার) টাকা দেই। তার কিছু দিন পরে আমাদের ২ নং ওয়ার্ডের মেম্বার কামাল হোসেন এর কাছে ২৪,০০০/-(চব্বিশ হাজার) টাকা দেই। এখন পর্যন্ত ঘরের কোনো খবরবার্তা না পেয়ে অভিযোগ প্রদান করছি। এ ব্যাপারে সরেজমিনে দশমী রাজবংশীর বাড়িতে গেলে তাকে বাড়ি না পেয়ে ফোন করলে ভুক্তভোগী অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করেন।

৮নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা বকচর গ্রামের মোঃ হালিম শিকদারের স্ত্রী আমেনা বেগম তার অভিযোগ পত্রে উল্লেখ করেন, মাতৃকালীন ভাতা কার্ড প্রদানের মেম্বার ছালাম শেখ ২০০০/- ( দুই হাজার) টাকা নিলেও অদ্যবদি আমি মাতৃকালীন ভাতার কার্ড পাইনি। সরেজমিনে গিয়ে আমেনা বেগমের কাছে জানতে চাইলে তিনি অভিযোগের কথা স্বীকার করে বলেন, ৪ বছর আগে আমার ছেলর বউয়ের বাচ্চা হওয়ার সময় কার্ড করে দেয়ার জন্য ছালাম মেম্বার ২০০০ (দূই হাজার) টাকা নেয়। এখন পর্যন্ত কার্ডও দেয় নাই, টাকাও ফেরত দেয় না।

একই ওর্য়াডের অন্য ভুক্তভোগী মিলন এই মাতৃকালীন ভাতা কার্ডের জন্য ১৫০০/- (পনের শত) টাকা দিয়ে কার্ড না পাওয়ায় একই অভিযোগ পত্রে অভিযোগ করেন। সরেজমিনে মিলনের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, আজ থেকে তিন বছর আগে আমার স্ত্রীর জন্য মাতৃকালীন ভাতার কার্ড করে দেয়ার নামে ছালাম মেম্বার ১৫০০ (পনের শত) টাকা নেয়। আজ পর্যম্ত কার্ড বা টাকা কিছুই পাইনি। মিলন আরও দাবি করে বলন, শুধু আমি একা নই্ আমার আপন বোন হাজেরার কাছ থেকে ১৫০০(পনের শত), আমার চাচা তো বোন কলিও দিছে ১৫০০ (পনের শত)। তিন বছর হয়ে গেল। কার্ডও দেয় না, টাকাও দেয় না। টাকার কথা বললে শুধু দিমু, দিচ্ছি করে।

একই ওয়ার্ডের বাহিরচর গ্রামের মৃত আব্দুল লতিফের স্ত্রী রেনু বেগমও এই অভিযোগপত্রে অভিযোগ করেন, চেয়ারম্যান মোঃ কামাল হোসেন বয়স্ক ভাতার কার্ড দেয়ার নাম করে দীর্ঘ ৯ বছর আগে ৪০০০/-(চার হাজার) টাকা নেয়। সরেজমিনে রেনু বেগমের বাড়িতে গিয়ে তাকে বাড়ি পাওয়া যায় না, রেনু বেগমের মেয়ে ফারাজানা জানায়, বয়স্ক ভাতার কার্ড দেয়ার নামে চেয়ারম্যান কামাল হোসেন আর কু্দ্দূুস মেম্বার ৯ বছর আগে ৪০০০/- টাকা নেয়। কিন্তু ৯ বছরে আমরা কোনো কার্ড পাইনি। চেয়ারম্যানকে জিজ্ঞেস করলে কয়, বয়স হয় নাই। বয়স না হলে বিধবা ভাতার একটা কার্ড তো করে দিতে পারত। ফারজানা আবেগ জড়িত কণ্ঠে আরও জানায়, অনেক আগে আমার বাবা মারা গেছে। আমার একট ভাই নাই। মেয়ে মানুষ হয়ে আমি রাস্তায় রাস্তায় কাম কইরা আমার মায়রে খাওয়াই। চেয়ারম্যান আমার আত্নীয়। পরিচয়ও দেয়। তারপরেও সে আমাগো এক সের রিলিফ দিয়েও সহযোগিতা করে না। আজ বাধ্য হয়ে আপনাদেরকে এসব কথা বলছি।

এ ব্যাপারে রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ কামাল হোসেনের মুঠো ফোনে একাধিক বার ফোন করলেও তিনি ফোন ধরেননি।
২নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোঃ কামাল হোসেন বলেন, সামনে নির্বাচন। তাই আমার প্রতিপক্ষরা এই ধরনের রিউমার ছড়াচ্ছে। আমার ঘর দেয়ার কোন এখতিয়ার নাই। এটা সম্পূর্ণ চেয়ারম্যানের ব্যাপার। শত্রুতার জের ধরেই আমাকে অন্যায়ভাবে ফাঁসানো হচ্ছে।

৬নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আঃ কুদ্দুস এর কাছে মুঠোফোনে অভিযোগের কথা জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিক পরিচয় পেয়েই ফোনের লাইন কেটে দেন। আর ফােন রিসিভ করেননি।

৮ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ছালাম শেখ অভিযোগ সম্পর্কে বলেন, এ ধরনের কোনো টাকা পয়সা আমি গ্রহণ করিনি। কেউ শত্রুতা করে বললে আমি আর কি করতে পারি। এলাকায় অনেক উন্নয়নমূলক কাজ করেছি। সামনে নির্বাচন আসছে। আর আমাকে নিয়ে হেয়পতিপন্ন করার চেষ্টা করছে।

এই অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগপত্র বিভিন্ন দপ্তরের অধীনে অনুলিপিও প্রদান করা হয়।

এ ব্যাপারে হরিরামপুর উপজেলার নির্বাহী অফিসার সাবিনা ইয়াসমিনের কাছেৃ জানতে চাইলে তিনি জানান, রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ কামাল হোসেনসহ কয়েকজন ইউপি সদস্যদের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসক বরাবর বেশ কয়েকটি অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ এর অনুলিপির কপি আমি পেয়েছি।

জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগের বিষয়ে জানতে জেলা প্রশাসকের মুঠো ফোনে একাধিক বার ফোন করেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।