প্রচ্ছদ বিনোদন সেই মেয়েকে বাঙালি নারী ডাকবো নাকি বাংলাদেশি নারী?

সেই মেয়েকে বাঙালি নারী ডাকবো নাকি বাংলাদেশি নারী?

মাকসুদা আক্তার প্রিয়তি। ‘মিস আয়ারল্যান্ড’ হিসেবে বাংলাদেশে তার বেশ খ্যাতি রয়েছে। নিজের দেশকে বহিঃবিশ্বের সামনে তুলে ধরতে বিভিন্ন প্রতিযোগিতার মাধ্যমে এগিয়ে যাচ্ছেন তিনি। তার প্রাপ্তির সঙ্গে যোগ হচ্ছে নতুন পালক। কিন্তু সমাজে প্রতিনিয়ত যেসব ঘটে যাচ্ছে সেই বিষয়গুলো সকলের সামনে তুলে ধরতে কিংবা সমাজের চোখে বিভিন্ন প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েও নানা আলোচনার জন্ম দেন প্রিয়তি। মেয়েদের অপমানস্বরূপ যে বিষয়গুলো খুব সামান্য ভাবে দেখা হয় প্রিয়তি সেই বিষয়গুলো চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেন। এই গুনটির জন্যই তাকে আলাদাভাবে চেনা যায়।

এবার নিজের বোনের স্বামীর কর্মকাণ্ড নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দীর্ঘ এক স্ট্যাটাস দিয়েছেন প্রিয়তি। ১১ মে, শুক্রবার তার দেওয়া পোস্টে তিনি ব্যক্ত করেছেন তার বোনের দাম্পত্য জীবনের নানা দিক। তিনি লিখেছেন, ‘বাংলাদেশি নাকি বাঙালি? কোন শব্দটা বেশি প্রযোজ্য এই মেয়ের বেলায়? বলতে চাই একটি সাধারণ মেয়ের কথা। যে স্বামীর মন রক্ষার্থে নিজের বোনের সঙ্গে ছয়-সাত বছর যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রাখতে দ্বিধাবোধ করেনি। সংসারে দ্বিমত হলে অশান্তি হতে পারে তার জন্য নিজের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ বিছিন্ন করে এক ঘরে পড়েছিল বছরের পর বছর। স্বামীর ভাষ্যমতে, কোনো ভদ্র ঘরের মেয়েরা ঘর থেকে বের হয় না, তাই চার দেয়ালের মধ্যে নিজেকে বন্দী করে রেখেছে দিনের পর দিন। নিজের মগজে, মনে- প্রাণে বিশ্বাস করে রেখেছে স্বামী ছাড়া তার আর কোনো গতি নেই। আর স্বামীর থেকে পৃথিবীর আর কেউ আপন নেই (যেহেতু তার বাবা-মা বেঁচে নেই)। আর সেই মেয়ে নয় বছর স্বামীর অমানবিক শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন সহ্য করে, স্বামীর ভুল ও অন্যায় ঢাকার জন্য প্রস্তুত থাকে সর্বদা, সেই মেয়েকে বাঙালি নারী ডাকবো নাকি বাংলাদেশি নারী?

কোন নারী এভাবে নয় বছর মারধোর খেয়ে ঐ একই ঘরে থাকার পর জানতে পারে যে বাহিরে তার স্বামীর একাধিক নারীদের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক, তারপরেও যেন স্বামীর আসল মুখোশ সমাজের সামনে না খুলে তার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা, সেই মেয়েকে বাঙালি নারী ডাকবো নাকি বাংলাদেশি নারী?

একাডেমিক শিক্ষায় তার স্বামী বৈমানিক হতে পেরেছেন কিন্তু নৈতিকতা শিখতে পারেননি বিন্দুমাত্র। তার স্বামী তাকে বিয়ের পূর্বেই আরেকটি বিয়ে করে রেখেছিল কিন্তু তার স্বামী তাকে এবং তার পুরো পরিবারকেই অন্ধ বানিয়ে বোঝাতে সক্ষম হলো ঐ মেয়ে তার গরিব খালাতো বোন, অসুস্থ মাকে দেখাশুনা করার জন্য মেয়েটিকে তার বাসায় রাখা। চুল পরিমাণ কেউ বুঝতে পারেনি এতো নিখুঁত খেলা।

যখন কয়েক মাস পর হাতে-নাতে ধরা পড়ল, তখনও সমাজের কটাক্ষ চোখ থেকে বাঁচার জন্য মাফ করে দিলো তার সেই দুর্দান্ত স্বামীকে। তারপরেও তার স্বামী ক্ষান্ত নন। পাইলট পেশার ছায়া তলে যেকোনো মেয়েকে তার জন্য জোগার করাটা খুব বেশি কষ্টসাধ্য নয়। আর যদি মেয়েদের কাছে একটু ইনিয়ে বিনিয়ে চোখে দুফোঁটা জল এনে বলে, দাম্পত্য জীবন দুর্বিষহ, কোনো শারীরিক সম্পর্ক নেই, কয়েকদিনের মধ্যে ডিভোর্সও হয়ে যাবে। তাহলে তো এক শ্রেণীর মেয়েরা নিজেকে রানি ভাবতে শুরু করে দেয়।

তথ্য কতটুকু সত্য না মিথ্যা তা পর্যন্ত যাচাই করার প্রয়োজন মনে করে না কিন্তু শরীর বিলিয়ে দেওয়ার জন্য তৈরি। আচ্ছা বলুনতো, নিজেদের এতো মূল্যহীন কেন ভাবেন? শর্টকাটে নিজের জীবন গুছানো পেতে গিয়ে নিজের বিবেকের সঙ্গে কতটা বেঈমানি করছেন তার কি কখনো হিসেব নিকেশ করেছেন?

উপরের যার কথা বললাম, সে বেশি দূরের কেউ না, আমারই বোন। কিন্তু আমরা নিষ্প্রাণ হয়ে শুধু দূর থেকেই দেখছি, কিছুই করার অধিকার নেই আমাদের। কারণ এই ভদ্রমহিলা কিছুই করতে আগেও দেয়নি, এখনো দিচ্ছে না। সর্বশেষ যখন তার স্বামী তাকে মেরে বাসা থেকে চলে যায় এবং অন্য মেয়ের সঙ্গে থাকা শুরু করে, তখন আমার বোন পল্লবী থানাতে এফআইআর করতে গেলেও থানার কর্মরত কর্মকর্তারা তার স্বামীকে পূর্বপরিচিত থাকায় যথেষ্ট প্রমাণ নেই এই কারণ দেখিয়ে কেসটি উনারা নেননি।

পরবর্তী সময়ে আমি প্রেস কনফারেন্স করে বিষয়টি সবার সামনে আনার কথা বলি, যাতে প্রশাসন এক তরফা অনুগ্রহ না করে। কিন্তু আমি বা আমরা আবারও হেরে যাই, তার জেদের কাছে। তার জেদ, তার স্বামীকে বাঁচানোর জেদ, তার স্বামীর নাম রক্ষার জেদ। তার সেই স্বামী, যেই স্বামী তাকে প্রতিদিন খুন করছে নতুন করে।

মজার ব্যাপার শুনুন, আমার বোনকে তার স্বামী এমনভাবে গত নয় বছরে তৈরি করেছে যে, তার বাসায় কোনো ইন্টারনেট ছিল না, এখন পর্যন্ত আমার বোনের হাতে কোন স্মার্ট ফোন নেই। সে জানে না, কীভাবে গুগল করতে হয়, কীভাবে ফেসবুক চালাতে হয়, কীভাবে একটা অ্যাপ ডাউনলোড করতে হয়। এতটাই অজ্ঞ বানিয়ে রাখতে তার স্বামী ‘প্রাক্তন বিমান বাহিনী অফিসার’ সক্ষম হয়েছেন। উনি উনাদের ক্রিমিনাল ট্রেনিং পুরোদমে আয়ত্তে করতে পেরেছেন , তাতে কোনো সন্দেহ নেই। (আমি এই বছর জানুয়ারিতে যখন বাংলাদেশে আসি তখন ওদের ইন্টারনেট নেয়ার অনুরোধ করে একটি রাউটার কিনে দিই। তারপরই আসে তাদের বাসায় ইন্টারনেট সংযোগ, যা মাঝে আবার বিছিন্ন ছিল)।

যা হোক, উনি যে পরনারীর প্রতি আসক্ত বা শারীরিক সম্পর্ক করছেন, তার বিন্দুমাত্র আন্দাজ ছিল না আমার বোনের। কিন্তু দেখুন প্রকৃতির কি নির্মম পরিহাস, যেই মেয়ের সঙ্গে প্রেমের অভিনয় করে, তার শরীর ভোগ করার পর তাকে ছেড়ে দিয়ে আবার অন্য মেয়ের কাছে চলে যায়, সেই মেয়েরাই আবার ফোন করে আমার বোনকে সব তথ্য দিতে থাকে। কিন্তু তার স্বামী বরাবর অস্বীকার করে আসে আর মারধোর করতে থাকে। সর্বশেষ, ৫ মে আমার বোন ভাবীকে নিয়ে ধানমন্ডি স্টার কাবাবে চা খেতে গেলে, মেয়েসহ তার স্বামীকে হাতে নাতে ধরে ফেলে। সেই নাটক দেখেছে রেস্টুরেন্টসহ অত্র এলাকা। বোনকে ঐ মেয়ে জানায়, একবছর পর তাদের বিয়ে করার পরিকল্পনা রয়েছে। নিজের স্ত্রীকে অগ্রাহ্য করে ঐ লোক ব্যস্ত হয়ে যায় উনার প্রেমিকাকে সামলাতে এবং মানাতে। অথচ, এই একই লোক বাসায় তার স্ত্রীকে প্রতিনিয়ত বলতেন হাদিস পড়তে, তাদের একমাত্র সন্তানকে হাদিস শোনাতে। পরবর্তী সময়ে ঐ লোকের পরিবারকে এইসব ঘটনা জানানো হলে, আমার বোন ঠিকমত রান্না করতে পারে না, এই দোষে সাব্যস্ত করে উনাদের পুত্রকে শাসন না করে ,পুরোপুরি সমর্থন করেন।

আর সমাজ? সমাজের দোষ দিয়ে তো লাভ নেই। সমাজ তো আমরাই। আজ সমাজে আমার বোনের মতো মানুষেরা ঘটনাগুলো ঘটতে দিচ্ছে বলেই নারীর দুর্বলতা বাড়ছে, কটাক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি ও বাড়ছে। হ্যাঁ, স্বীকার করছি সবার মনোবল সমান নয় ,সবার যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলার ক্ষমতাও সমান নয়। সেই ক্ষেত্রে নিজের আবেগের থেকে নিজের বিশ্বস্ত মানুষের উপর বিশ্বাস রাখা জরুরি। আমি বিশ্বাস করি কোথাও না কোথাও কেউ না কেউ থাকেই কথা শোনার, পাশে থাকার, সাপোর্ট করার, আর তার জন্য মনের দরজা খোলা রাখা জরুরি।

ডাটা প্রোটেকশনের কারণে আমি কারও নাম উল্লেখ করিনি। কনসেন্ট অ্যান্ড প্রুফ ছাড়া কারও নাম বা ব্যক্তিগত তথ্য ব্যবহার করা আইনগত নিষিদ্ধ । আমার এতগুলো কথা বলার কারণ হলো, অন্যান্য সাধারণ মেয়েদের সতর্ক-সচেতন করে দেওয়া, আর সঙ্গে আমার যদি কখনো কিছু হয়ে যায়, পরবর্তী সময়ে এই স্টেটম্যানটি হয়তো কোনো কাজে লাগতেও পারে।

তবে, দুঃখ থেকে যাবে, আমি আমার বোনকে শক্ত করতে পারিনি। বাস্তবতার কাছে আগেই হার মেনেছে এই বাঙালি অথবা বাংলাদেশি নারী ।’