প্রচ্ছদ সারাদেশ চট্টগ্রাম বিভাগ সম্মিলিত ইফতারের অনন্য দৃষ্টান্ত

সম্মিলিত ইফতারের অনন্য দৃষ্টান্ত

সমবেত হাজারো মানুষ। কেউ বসছেন গোলাকার হয়ে, কেউ সারিবদ্ধ হয়ে। কারো কোনো উচ্চবাচ্য নেই। গোলাকার একটি থালিকে ঘিরে বসছেন চার-পাঁচজন। প্রতিটি থালিতে পৌঁছে যাচ্ছে হরেক রকম ইফতারি। যেন সম্মিলিত ইফতারির এক অনন্য দৃষ্টান্ত। সকলেই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন ‘আল্লাহু আকবর’ ধ্বনীর জন্য। মুয়াজ্জিনের কণ্ঠে আযান ধ্বনিত হলেই সাঙ্গ হবে সকলের স্বাদ। সবাই একযোগে করবেন ইফতার।

চট্টগ্রাম নগরের অন্যতম বৃহত্তম জমিয়তুল ফালাহ জামে মসজিদে ইফতারের সময় এমন চিত্র দেখা যায়। প্রতিদিন এ মসজিদে ইফতার করেন ৭০০ থেকে ৮০০ রোজাদার। ইফতারে দেওয়া হয় ছোলা, পেয়াজু, বেগুনি, খেজুর, আলুর চপ, সমুচা, জিলাপি, মুড়ি, সেমাই ও ঠাণ্ডা পানির শরবত।

ইফতার বিতরণে নিয়োজিত আছেন ১০ জন স্বেচ্ছাসেবক। ইফতার তৈরিতে আছে বাবুর্চিসহ ছয়জন। জমিয়তুল ফালাহ মসজিদের নিচতলায় মাস জুড়ে চলবে সম্মিলিত এ ইফতার আয়োজন।

গত শনিবার ইফতারের সময় সরেজমিনে দেখা যায়, সন্ধ্যা হওয়ার আগে আগেই মসজিদের নিচ তলায় সমবেত হতে শুরু করেন রোজাদাররা। সন্ধ্যা ৬টা থেকে শুরু হয় হামদ-নাত ও ওয়াজ মাহফিল। রমজান নিয়ে দেওয়া হয় সারগর্ভ বক্তব্য। আস্তে আসে যোগ দেন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, শ্রমিক, হকার, রিক্সাচালক, অটোরিক্সা চালক, ভিক্ষুক, ছিন্নমূল শিশু ও  পথচারিরা।

মসজিদ সূত্রে জানা যায়, মসজিদের সাবেক খতিব আল্লামা জালাল উদ্দিন আলকাদেরীর উদ্যোগে ১৯৮৬ সালে যাত্রা করে এ ইফতারি। তখন মুসল্লি থাকতেন ৬০ থেকে ৭০ জন। পর্যায়ক্রমে বর্তমানে এখানে দৈনিক প্রায় ৮০০ মানুষ ইফতার করছেন। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগ এবং মুসল্লি মাহবুবুল আলমের সমন্বয়ে বর্তমানে ইফতারের আয়োজন হয়ে আসছে।

ইসলামিক ফাউন্ডেশন চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালক মুহাম্মদ মনিরুজ্জামান বলেন, ‘মসজিদের মুসল্লি, আশপাশের পথচারিসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ প্রতিদিন এ মসজিদে ইফতার করেন। সবাই মিলে সম্মিলিতভাবে বসে এক সঙ্গে ইফতারি করার মধ্যে একটা ফজিলত আছে। তাই এভাবে ইফতারের আয়োজন করা হয়।’

ইফতারের সমন্বয়ক মো. মাহবুবুল আলম, ১৯৮৬ সালে যাত্রা করা এ ইফতার ২০১১ সাল থেকে বড় পরিসরে শুরু হয়। এ ইফতারের জন্য বিভিন্ন ব্যাক্তি প্রতিষ্ঠান নিজ উদ্যোগ-উৎসাহে মসজিদে অর্থ প্রদান করে যান। এখানকার ইফতারের ব্যতিক্রম হলে এক থালিতে করে এক সঙ্গে চার-পাঁচজন ইফতার করেন। সম্ভবত এমন দৃশ্য অন্য কোথাও নেই।’

তিনি বলেন, ‘২০ রজমান থেকে এখানে ইতেকাফকারীদের সেহরির ব্যবস্থা করা হয়। গত বছর ২০৪ জন ইতেকাফ করেছিলেন। এবার হয়তো আরও বেশি হবে।’