প্রচ্ছদ আইন আদালত শিশু অপহরণ মামলায় দুই আসামির মৃত্যুদণ্ড, ৮ জনের যাবজ্জীবন

শিশু অপহরণ মামলায় দুই আসামির মৃত্যুদণ্ড, ৮ জনের যাবজ্জীবন

রাজধানীর ক্যান্টনমেন্ট থানার শিশু অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায়ের মামলায় দুই আসামিকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে আরও আটজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এছাড়া অপর দুই আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়া তাদের খালাস দিয়েছেন বিচারক।

বৃহস্পতিবার ঢাকার ৭ নম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইবুনালের বিচারক মো. খাদেম উল কায়েস এ রায় ঘোষণা করেন।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামি হলেন- ঝালকাঠি জেলার কাঠালিয়ার মো. মশিউর রহমান মন্টু (৪০) ও বরগুনা জেলার আমতলী থানার দক্ষিণ টেপুরার মিজানুর রহমান (৩৫)।

যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- মো. রেজাউল করিম (৩৬), নজরুল ইসলাম (৩২), আব্দুল্লাহ আল মামুন ওরফে আব্দুল্লাহ (৩৮), ইকবাল হোসেন শুভ (২৮), সজীব আহম্মেদ কামাল উদ্দিন (৪৭), মো. আলিম হোসেন চন্দন চঞ্চল (২৭), কাউছার মৃধা (২৫) ও মো. রেজা মৃধা (৩০)।

খালাসপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন, জহিরুদ্দিন মো. বাবর ও শাহ মো. অলিউল্লাহ। যাবজ্জীবনের আসামিদের প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে তিন মাসের কারাদণ্ড দিয়েছেন বিচারক। এই আসামিদের মধ্যে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত মিজানুর এবং যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত দুই ভাই কাওসার ও রেজা পলাতক।

মামলা সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫ সালের ২ মে দুই কোটি টাকা মুক্তিপণের দাবিতে আট বছর বয়সী শিশু অপহৃত হয় রাজধানীর ক্যান্টনমেন্ট এলাকা থেকে। শিশুটির বাবা তৈরি পোশাক ব্যবসায়ী ২ কোটি টাকা মুক্তিপণ দিয়ে তার সন্তানকে ফেরত পান চারদিন পর। এ ঘটনায় শিশুটির মামা এনায়েত উল্লাহ বাদী হয়ে ক্যান্টনমেন্ট থানায় মামলা দায়ের করেন। ঘটনার ১২ দিন পর র‌্যাব অভিযান চালিয়ে ওই অপহরণে জড়িত অভিযোগে পাঁচজনকে গ্রেফতার করে। সেই সঙ্গে উদ্ধার করে মুক্তিপণের টাকাসহ অন্যান্য মালামাল।

মামলা সূত্রে জানা গেছে, শিশু আবির উত্তরার একটি মাদ্রাসায় পড়ে। তাকে অপহরণের জন্য প্রায় এক বছর ধরে পরিকল্পনা, প্রস্তুতি ও তথ্য সংগ্রহ করেছিল অপহরণকারীরা। এজন্য পল্ল­বীতে একটি বাসাও ভাড়া করা হয়। তারা নিয়মিত শিশুটির গতিপথ অনুসরণ করে। যে মাদ্রাসায় শিশুটি পড়ে, সেই মাদ্রাসায় পরিচিত একজনের বাচ্চাকে ভর্তিও করে অপহরণকারীরা। এ ছাড়া অপহরণকারীদের সঙ্গে যুক্ত টিএনজেড গ্রুপের তিন কর্মী বিশেষ করে গাড়িচালক রেজাউল নিয়মিত তথ্য দিত। পরে ২ মে শিশুটি গাড়িতে করে মাদ্রাসা থেকে ফেরার পথে বনানী উড়ালসড়কের নিচে অপহরণকারীরা তিনটি গাড়ি নিয়ে ওই গাড়ির গতিরোধ করে। নিজেদের একটি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য পরিচয় দিয়ে শিশুটি, ওই গাড়ির চালক ও শিশুটির তত্ত্বাবধানকারীকে নিজেদের গাড়িতে তুলে নেয় অপহরণকারীরা। প্রথমে শিশুটিকে তারা আশ্বস্ত করে যে, তারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, অপরাধীদের হাত থেকে তাকে রক্ষা করতে এসেছে। এরপর শিশুটিকে নিয়ে তারা পল্ল­বীর ভাড়া বাসায় যায়। পরিস্থিতি বুঝতে পেরে শিশুটি কাঁদতে থাকে। অপহরণকারীরা শিশুটির বাবাকে ফোন করে তার কান্নার শব্দ শোনায়। শিশুটির মুক্তিপণ হিসেবে ১০ কোটি টাকা দাবি করে অপহরণকারীরা। শুরু হয় দর-কষাকষি। ওই রাতেই শিশুটিকে বহনকারী গাড়িটি ৩০০ ফুট (পূর্বাচল) সড়কে গাড়ির চালক ও তত্ত্বাবধানকারীসহ বিমানবন্দর এলাকায় ফেলে রেখে আসে অপহরণকারীরা। চার দিন দর-কষাকষির পর দুই কোটি টাকায় রফা হয়। পরে তিনটি ব্যাংকের মাধ্যমে ১ কোটি ৭৩ লাখ টাকা অপহরণকারীদের ব্যাংক হিসাবে স্থানান্তর করা হয়। ওই দিন সন্ধ্যায় হোটেল র‌্যাডিসনের সামনে ২৭ লাখ নগদ টাকা নিয়ে নিজেই অপহরণকারীদের দেন শিশুটির বাবা। এরপর একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশায় আসা অপহরণকারীরা শিশুকে তার বাবার কাছে বুঝিয়ে দেয়। ব্যবসায়ী তার সন্তানকে ফিরে পাওয়ার পর অপহরণকারীদের ধরতে তৎপরতা শুরু করে র‌্যাব। র‌্যাব বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে ব্যাংক হিসাব থেকে অপহরণকারীদের টাকা তোলার সুযোগ বন্ধ করে দেয়। তাদের আটকের পর মিজানুরকে নিয়ে ব্যাংক থেকে ওই টাকা তোলা হয়।

আটক হওয়া টিএনজেড গ্রুপের গাড়িচালক রেজাউল স্বীকারোক্তিতে জানায়, মিজান মতুব্বর তাদের নেতা। বিভিন্ন সময় রেজাউল তার গাড়িতে করে নগদ টাকা আনা-নেওয়া করত। মিজানুর সেই টাকা ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা করে। পরে তাদের মনে হয় যে মালিকের ছেলেকে অপহরণ করলে আরও বেশি টাকা পাওয়া যাবে। সেই ধারণা থেকে তারা পরিকল্পনা শুরু করে। পুরো ঘটনায় ১২ জন যুক্ত ছিল।