প্রচ্ছদ সারাদেশ ঢাকা বিভাগ শিবালয়ে অবৈধ বালু উত্তোলনে বাধা, ছাত্রলীগ নেতাদের নামে মিথ্যা মামলা

শিবালয়ে অবৈধ বালু উত্তোলনে বাধা, ছাত্রলীগ নেতাদের নামে মিথ্যা মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক, মানিকগঞ্জ :

মানিকগঞ্জ জেলার শিবালয়ে পাটুরিয়া ১ নম্বর ফেরিঘাট এলাকা থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনে বাঁধা দেওয়ায় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের নামে চাঁদাবাজির মামলা করেছেন অবৈধ বালু ব্যবসায়ী আমিনুল ইসলাম মিন্টু। বুধবার শিবালয় থানায় চাঁদাবাজির মামলা দায়ের করা হয়। মামলায় ছাত্রলীগের ৯ জন নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরো অন্তত ২০-২৫ জনকে আসামী করা হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আমিনুল ইসলাম মিন্টু, মো. মানিক, মোনতাজ উদ্দিন (মোনতাজ মাস্টার) ও পান্নু মন্ডলরা দীর্ঘদিন ধরে পাটুরিয়া ফেরিঘাট ফোরশোর এলাকা থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছিল। তারা অবৈধ ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করায় ফেরি ঘাটটি মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হয়। এ কারনে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা অবৈধ ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলনে বাঁধা দেয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে চাঁদাবাজির নাটক সাজিয়ে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের নামে মিথ্যা মামলা করেছে অবৈধ বালু ব্যবসায়ী মিন্টু।

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, চলতি মাসের ১২ তারিখ রাত ১১টার দিকে পাটুরিয়া ঘাটের ট্রাক টার্মিনালে ২০-২২ জনের একটি দল এনডিই কোম্পানির ম্যানাজার আইনাল হক, এমএম এন্টারপ্রাইজের ম্যানাজার আলমগীর হোসেন, কোম্পানির কর্মরত রাজিব, ভেকু ড্রাইভার মতিনসহ বেশ কয়েজনের উপর দেশীয় অস্ত্র দিয়ে চারপাশ ঘেরাও করে। এ সময় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা তাদের মারধর করে দুইটি ভেকু ভাঙচুর করে ও তাদের কাছে নগদ টাকাসহ মালামল ছিনিয়ে নেয়। এ সময় আত্মচিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে আসলে তারা বিভিন্ন প্রকার হুমকি ও ভয়-ভীতি দেখিয়ে চলে যায়।

তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিআইডব্লিউটিসির একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী জানান, এ রকম কোনো ঘটনার কথা তারা শোনেননি। আর পাটুরিয়া নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মামুন জানান, তিনিও এ রকম কোনো ঘটনার বিষয়ে কিছু জানেন না।

শিবালয় থানার ওসি ফিরোজ কবীর বলেন, প্রাথমিকভাবে অভিযোগের সত্যতা পেয়ে মামলা রেকর্ড করেছি। ভাঙা ভেকু এখনো ঘটনাস্থলে রয়েছে। ইতিমধ্যে তিনজন আসামী গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে। তবে রাত ১১ টার দিকে ট্রাক টার্মিনালে দুটি ভেকু আসল কোথা থেকে, সে বিষয়ে কিছু বলতে পারেননি তিনি। ফলে ওসির তদন্ত নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

এদিকে, মামলার বাদী আমিনুল ইসলাম মিন্টু নিজেকে এমএম এন্টারপ্রাইজ প্রোপাইটার দাবি করলেও আরিচা নদী বন্দর কর্মকর্তা মো. মাসুদ পারভেজ বাদী হয়ে ফেরিঘাট এলাকা থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের অভিযোগে করা মামলায় তাকে এক নম্বর আসামী করা হয়েছে। সেখানে তাকে অবৈধ বালু উত্তোলনকারী হিসেবে চিহিৃত করা হয়েছে।

জানতে চাইলে আরিচা নদী বন্দর কর্মকর্তা মো. মাসুদ পারভেজ বলেন, আসামীরা পাটুরিয়া ১ নং ফেরিঘাট এলাকা থেকে ড্রেজার বসিয়ে ও হাইওয়াটার ফেরিঘাটের নীচ থেকে ৪/৫টি ভেকু দিয়ে ১৫ থেকে ২০ ফুট গভীর করে অবৈধভাবে বালি/মাটি কেটে নিচ্ছেন। অপরিকল্পিতভাবে দেশীয় প্রযুক্তির ড্রেজার দিয়ে বালি/মাটি উত্তোলন ও ফোরশোর ভূমি থেকে ভেকু দিয়ে মাটি কাটার ফলে ইতিমধ্যে ফেরিঘাটটি মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। যার ফলে আসন্ন বর্ষা মৌসুমে এর বিরূপ প্রভাবস্বরূপ ফেরিঘাট ভেঙ্গে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ কারণে অবৈধভাবে মাটি কাটা বন্ধ করা ও আসামীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মামলা দায়ের করেছি।

শিবালয় উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রেজাউর রহমান জানু বলেন, ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের নামে দায়ের করা মামলা মিথ্যা ও সাজানো নাটক। দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনে এলাকাবাসী বাধা দেওয়ায় যারা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তারাই এই মামলা করেছেূ। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর জিরো টলারেন্স ও সফল নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী কঠোর নির্দেশনায় এবার পাটুরিয়া – আরিচায় নদীর মাটি খেকোদের বিরুদ্ধে সাড়াশি অভিযান ও মামলা করলো বিআইডব্লিউটিএ । এসব প্রভাবশালী মাটি ব্যবসায়ীদের বাচাতে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলার নাটক সাজিয়ে অন্তরালে চলছে সার্কাস।

উল্লেখ্য, পাটুরিয়া ফেরিঘাটের ফোরশোর এলাকা থেকে দীর্ঘদিন যাবত অবৈধ বাল উত্তোলন করার অপরাধে গতকাল বৃহস্পতিবার ৬ জনকে আসামী করে শিবালয় থানায় অবৈধ বালু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীন নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ)’র উপ-পরিচালক মো: মাসুদ পারভেজ বাদী হয়ে মামলা করেন। আসামীরা হলেন শিবালয় উপজেলার নবগ্রামের ভাসান মন্ডলের ছেলে মো: আমিনুল ইসলাম মিন্টু, দাসকান্দি গ্রামের মৃত নিয়ামতের ছেলে মো: মানিক, ধুতরাবাড়ী গ্রামের কেতাব আলীর চেলে মো; মোনতাজ উদ্দিন, মৃত আফছার মন্ডলের ছেলে পান্নু মন্ডল, মো: কেবারত আলীর ছেলে পলাশ ও এলমেছের ছেলে আলমগীর।