প্রচ্ছদ হেড লাইন শঙ্কা নিয়েই হাওরে ধান কাটা শুরু

শঙ্কা নিয়েই হাওরে ধান কাটা শুরু

SAMSUNG CAMERA PICTURES

বিডি রিপোর্ট টোয়েন্টিফোর ডটকম : 

করোনাভাইরাসের আতংক নিয়েই সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ, তাহিরপুর, ধর্মপাশা, দিরাই-শাল্লা ও দক্ষিণ সুনামগঞ্জসহ প্রায় উপজেলাতেই দেশী জাত ধানের সাথে বিআর-২৮ ধান কাটা শুরু হয়েছে।

ফসলী মাঠজুড়ে পাকা-আধাপাকা ধানের মৌ-মৌ গন্ধে ভরে গেছে জেলার সব কটি হাওর। তবে আংশিক ধানে চিটা হয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষকরা। করোনা ভাইরাসের আতংক নিয়েও ইতোমধ্যে সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, পাবনা, ময়মনসিংহ, ফরিদপুরসহ উত্তারাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা থেকে ধান কাটার শ্রমিকরা আসতে শুরু করেছেন কৃষকদের বাড়িতে। তবে তুলনামূলকভাবে শ্রমিক সংকটের কারণে কিছুটা উদ্বিগ্ন রয়েছেন কৃষকরা।

চলতি বোরো মওসুমে সুনামগঞ্জের ছোট-বড় ১৫৪টি হাওরে ২ লাখ ২৪ হাজার ৭১৯ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ করা হয়েছে। ধানের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রায় ১৩ লাখ ৩২ হাজার ৭৯২ মেট্রিক টন। টাকার অংকে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকার ধান উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। জামালগঞ্জ, তাহিরপুর, ধর্মপাশা, দিরাই-শাল্লা, বিশ্বম্ভরপুর, দক্ষিণ সুনামগঞ্জসহ ১১ উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামে-গ্রামে এখন শুরু হয়েছে আংশিক বোরো ফসল কাটা। বছরে একটি মাত্র বোরো ফসলকে ঘিরেই হাওরাঞ্চলের মানুষের যত স্বপ্ন। বহু প্রতিক্ষা ও ত্যাগের পর কৃষকদের বছরজুড়ে থাকা অভাব-অনটন আর জমাট বাঁধা দুঃখ-কষ্ট পেরিয়ে, এবার কিছুটা হলেও সোনাঝরা হাঁসি ফোটেছে তাদের মুখে। বহু প্রত্যাশীত সোনালী ধান ঘরে তুলতে করোনা আতংকের মাঝে কৃষকরা ব্যস্ত ধান কাটতে মাঠে, আর কৃষাণীরা মাড়াইকল দিয়ে ধান শুকানোর জন্য খলা প্রস্তুতের কাজ করছেন।

আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আর সপ্তাহ খানেকের মধ্যে পুরোদমে ধান কাটা শুরুর হবে, এসময় সবার ঘরে-ঘরে থাকবে ধান আর ধান। হাজারো স্বপ্নে বিভোর কৃষকরা এখন রাত যাপন করছেন ধান কাটার অধীর আগ্রহে। কিন্তু এত স্বপ্নের মাঝেও তাদের মনে আতঙ্কের কোন কমতি নেই। রোদ উঠলেই হাসি আনন্দের ঝলকে ভরে উঠে কৃষাণ-কৃষাণীর মন। আর মেঘলা আকাশ বা বৃষ্টি হলেই তাদের চেহারাটা হয় ফ্যাকাসে। মেঘলা আকাশ আর আকাশ ফাটার শব্দে তাদের শুরু হয় ছটফটানি ও দৌড়ঝাঁপ। পাহাড়ি ঢল তাদের মনে ভাবনা জাগায় বার-বার। চৈত্রের প্রচন্ড অভাবে দ্রব্য মূল্যের উর্ধ্বগতির কারনে চরম দুর্দিন কাটিয়েছেন কৃষকরা। কৃষকরা রাত পোহালে ধানী মাঠে গিয়ে সোনালী ধানের ঢেউয়ের দোলায় তাদের প্রাণ জুড়িয়ে ভুলে যান দুর্দিনের কথা। মনের অজান্তেই একটু হলেও মুচকি হাঁসি ফুটে উঠে তাদের মুখে। মনের গভীর থেকে মহান আল্লাহ নিকট প্রার্থনা করেন ফসল কাটার ক’টা দিনের জন্য।

সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদের নেতৃত্বে জেলা প্রশাসন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, পাউবোর সংশ্লিষ্টরা দেখার হাওরে কৃষকের ধানকাটার সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেছেন। তারা কৃষক ও শ্রমিককে হাওরে নেমে পাকা ধান কাটতে আহবান জানিয়ে ধান কাটায় নামলে শ্রমিকদের ত্রাণ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। জামালগঞ্জ, তাহিরপুর, ধর্মপাশা, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ, দিরাই-শাল্লা, জগন্নাথপুর সহ কয়েকটি উপজেলার হাওরে বিআর-২৮ ও দেশী জাতের আংশিক ধান কাটা শুরু হয়েছে। সুনামগঞ্জের হাওরের প্রত্যন্ত গ্রামে গ্রামে ১০-১৫ বছর পূর্বে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ভাগে ধান কাটার জন্য আসতো বিশাল শ্রমিক বাহিনী। তারা কৃষকের বাড়িতে এক মাস থেকে ধান কেটে মোটা অংকের পারিশ্রমিক নিয়ে বাড়ি ফিরতেন। যাওয়ার সময় তাদেরকে গরু-খাসী ও নতুন পোশাকসহ বিভিন্ন পণ্যসামগ্রী উপহার দেয়া হতো। এখন আর আগের মতো শ্রমিক না আসায় ধান কাটার জন্য শ্রমিক সংকটে পড়তে হয় কৃষকদের।

পাকনা হাওরের কৃষক রফিক মিয়া বলেন, এবার বহু কষ্ঠে দেনা করে ফসল করছি, আল্লার রহমতে ভালো ফলন হইছে ধান কাটা শুরু করছি। কৃষক তোফায়েল আলম চৌধুরী ছানা মিয়া বলেন, সারা বছর কষ্ট করে দেনা করে ফসল ফলাইছি। ফলনও ভালো হইছে কবে আগুল্লিয়ায় চিটাতে ক্ষতি হইছে। কয়েক দিনের মধ্যেই আমার ধান কাটা শুরু হইব, তবে করোনা সংক্রমণের ভয়ে ধান কাটার শ্রমিক পাচ্ছি না।

সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ বলেন, করোনাভাইরাস আমাদের স্বাভাবিক জীবন যাপনে ছন্দপতন ঘটিয়েছে। জীবন পরিচালনা আরো কঠিন হয়েছে। আমাদের খাদ্য উদ্ধৃত্ত জেলার হাওরে বোরোর বাম্পার ফলন হয়েছে। কিন্তু শ্রমিক সংকট কৃষকদের চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। এই অবস্থায় কৃষকদের সাহস ও শ্রমিকদের উৎসাহ দিতে হাওরে নেমে সংহতি প্রকাশ করেছি। হাওরের ধান তোলতে পারলে আমাদের কোন অভাব থাকবে না।