প্রচ্ছদ আজকের সেরা সংবাদ লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড কথাটি তামাদি করেছেন সিইসি: রিজভী

লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড কথাটি তামাদি করেছেন সিইসি: রিজভী

বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ কথাটি তামাদি করে ফেলেছেন আওয়ামী সরকারের মদদপুষ্ট নুরুল হুদা কমিশন। কর্মকর্তাদের নির্বাচন কমিশনে দফায় দফায় ডেকে এনে সেমিনার, প্রশিক্ষণ, কর্মশালা ও সংলাপের নামে বিএনপি প্রার্থীদের হয়রানি করার নির্দেশ দেয়া হচ্ছে।

অধিকাংশ রিটার্নিং অফিসার আওয়ামী অনুমোদিত মনোবৃত্তির দ্বারা প্রণোদিত বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর নয়াপল্টনের বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে রিজভী এসব কথা বলেন।

বিএনপির এ মুখপাত্র বলেন, নির্বাচনকে প্রহসনে পরিণত করে ফের ক্ষমতায় থাকতে নানা কলাকৌশল ও নীলনকশা করছে সরকার। আর এই প্রহসনের অংশ হিসেবেই খালেদা জিয়াকে নির্বাচন থেকে সরকার গায়ের জোরে দূরে রাখার চেষ্টা চালাচ্ছে।

তিনি বলেন, খালেদা জিয়া ও জনগণকেই শেখ হাসিনা সবচেয়ে বড় ভয় পান। তাই আইন ও ন্যায়বিচারের তোয়াক্কা না করে তাকে বন্দি করে রেখেছেন।

রিজভী বলেন, অন্যায় পথে নির্বাচন অনুষ্ঠান ছাড়া জনসমর্থনশূন্য আওয়ামী লীগের একাদশ সংসদ নির্বাচনে বিজয়ের অন্য কোনো উপায় নেই। তাই নির্বাচনী ব্যবস্থা এবং আজ্ঞাবাহী নির্বাচন কমিশনকে নিয়ন্ত্রণে রেখে আবার ক্ষমতায় যেতে চান।

তার মতে, ক্ষমতা ধরে রাখতে বিরোধী দলের ওপর অত্যাচার, নির্যাতন-নিপীড়ন এবং যত রকম কৌশল আছে সরকার প্রয়োগ করছে।

তিনি বলেন, সরকারের পক্ষে ইসির নজিরবিহীন পক্ষপাতিত্ব ভোটারদের হতাশ ও ক্ষিপ্ত করে তুলছে। নির্বাচন সামনে রেখে দেশব্যাপী গ্রেফতারের মহোৎসব চলছে। মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার পর থেকে গ্রেফতারের পরিমাণ বেড়ে গেছে।

‌‘গতকাল পর্যন্ত দুই হাজার নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হয়েছে। উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে চাপিয়ে দেয়া শত শত মামলার বোঝায় নির্বাচনের মাঠ দূরে থাক, ঘরে পর্যন্ত থাকতে পারছে না ধানের শীষের প্রার্থীর নেতা-সমর্থকরা। ধানের শীষে মনোনয়নপ্রত্যাশী ২৭ নেতা মিথ্যা মামলায় এখন কারাগারে আটক আছেন।’

রিজভীর ভাষ্য, নির্বাচনের মাঠে বিএনপিকে ঘায়েল করার ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে নামে-বেনামে, গায়েবি মামলায় বিএনপির নেতাকর্মীদের বন্দিত্বের লাল দেয়ালের ভেতরে ঘিরে রাখা হয়েছে।

বিএনপির এ নেতা বলেন, মামলা আর পুলিশি হয়রানির কারণে নেতাকর্মীরা ঘর ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। এর পরও ক্ষান্ত হচ্ছে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, পরিবারের অন্য সদস্যদের হয়রানি করা হচ্ছে।

পুলিশি হেনস্তার ভয়ে বিএনপির মনোনীত প্রার্থীরা আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্ভয়ে প্রচারণা চালাতে পারবেন কিনা তা নিয়ে আশঙ্কা রয়েছে বলে জানান রিজভী।

নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে তার অভিযোগ, সারা দেশে যারা ভোটগ্রহণ করবেন, সেই ডিসি, এসপি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড গঠনের নির্দেশনা নির্বাচন কমিশন তো দেনইনি; উল্টো তাদের পক্ষপাতিত্বের দিকেই উসকে দেয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, আমরা খবর পেয়েছি-আইন মন্ত্রণালয়ে জেলা দায়রা জজদের নিয়ে একটি সভা হয়েছে। সেখানে আইন সচিব নির্দেশ দিয়েছেন যে, নির্বাচনের পূর্বে তারা যেন বিএনপির কাউকে জামিন না দেন।

‘স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে গ্রেফতার বাড়াতে মনিটরিং সেলও খোলা হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে স্বচ্ছ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের বদলে আসন্ন নির্বাচন আবর্জনাময় হয়ে উঠতে পারে,’ অভিযোগ রিজভীর।

তিনি বলেন, ঢাকার হাইকোর্ট অঙ্গন থেকে শুরু করে পুরান ঢাকার জজকোর্ট, মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টসহ সারা দেশের জেলা পর্যায়ের আদালতগুলোর আঙিনায় ‘ঠাঁই নাই ঠাঁই নাই’ অবস্থা।

‘কোথাও ধানের শীষের প্রার্থীরা জামিনের আবেদন নিয়ে হাজির হচ্ছেন, কোথাও কর্মীরা জামিন চেয়ে আবেদন করছেন, কোথাও গ্রেফতার ঠেকাতে আগাম জামিনের আবেদন; আবার কোথাও স্বামী-স্ত্রী-পুত্র-কন্যাদের পুলিশি গ্রেফতার ঠেকাতে আদালতের শরণাপন্ন হতে হচ্ছে।’

তিনি বলেন, কোর্ট-কাছারিগুলোয় হাজার হাজার বিএনপি নেতাকর্মীর বিচারপ্রার্থীর উপস্থিতি নজিরবিহীন এমন দৃশ্য অতীতে কোনো ভোটের সময় দেখা যায়নি।

‘হুমকি-ধমকি ও ভয়ভীতি দেখিয়ে এবার আর লাভ হবে না। যখন জনগণ ভোটের মাঠে নেমে আসবেন, তখন কোনো ফন্দি কাজে দেবে না। কাচের মতো সব কিছু চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যাবে। সরকারের অবরোধের কৌশলে জনগণ আত্মসমর্পণ করবে না।’

সিইসিকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, জনগণের ভোটের অধিকার হরণ করে কাজী রকিব যে পথে হেঁটেছেন, বর্তমান সিইসি কেএম নুরুল হুদাও যেন সে পথেই চলতে শুরু করেছেন। শুধু তাই নয়, সেটিকে এক ডিগ্রি বাড়িয়ে নিজের ভাগিনাকে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী করেছেন। তার সঙ্গে আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে বসে বৈঠকও করছেন।

রিজভীর অভিযোগ, নারায়ণগঞ্জের এসপিকে বদলি করে সেখানে আরও কট্টর আওয়ামীপন্থী ও বিতর্কিত এসপি হারুনকে পদায়ন করা হয়েছে।