প্রচ্ছদ খেলাধুলা ‘রুশ মেয়েরা সুন্দরী, তাই বহু পুরুষ তাদের সঙ্গে শুতে চায়।’

‘রুশ মেয়েরা সুন্দরী, তাই বহু পুরুষ তাদের সঙ্গে শুতে চায়।’

কিছুদিনের মধ্যেই শুরু হচ্ছে রাশিয়ায় বিশ্বকাপ। ‘গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’ শুরু হওয়ার আগে বিশ্বজুড়ে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে। চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছে ব্যাপক উন্মাদনা-উত্তেজনা। স্বাভাবিকভাবে জমজমাট এ খেলা দেখতে ইউরোপের দেশটিতে পাড়ি জমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন বিশ্বের নানা প্রান্তের ফুটবলপ্রেমীরা। এদিকে বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা থেকে যেসব সাংবাদিক দেশটিতে যাচ্ছেন, আর্জেন্টিনা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন তাদের হাতে একটি ম্যানুয়াল বই দিয়েছে। ওই বইয়ের একটি চ্যাপ্টারে লেখা আছে, ‘রুশ নারীদের কীভাবে পটাতে হবে’। এ লেখাটি নিয়ে চরম বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েছে দেশটির ফুলবল অ্যাসোসিয়েশন।

ওই বইয়ে সাংবাদিকদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে রুশ নারীদের মনোরঞ্জন করতে হলে ‘নিজেকে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখবেন, আপনার শরীর সুগন্ধী রাখবেন এবং ভালো জামাকাপড় পরবেন।’

এতে নারীদের সঙ্গে তাদের এমন আচরণ করতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, যাতে তারা মনে করেন ‘তাদেরও একটা দাম আছে’।

বইটির এই পরামর্শ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঝড় ওঠার পর আর্জেন্টিনা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন (এএফএ) এই পরিচ্ছেদটি সেখান থেকে সরিয়ে নিয়েছে।

আর্জেন্টিনার রাজধানী বুয়েনস আয়ার্সে কয়েক মাস আগেই বিশাল এক নারী সমাবেশ হয়েছিল যেটি ছিল লাটিন আমেরিকার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় নারী সমাবেশ এবং সেখানে নারীদের প্রতি চরম বৈষম্যের বিরুদ্ধে এবং নারীদের ওপর নির্যাতনের অবসান দাবি করে বিক্ষোভ হয়েছিল। তার কয়েক মাসের মধ্যেই রুশ নারীদের মনোরঞ্জনের পরামর্শ সম্বলিত এই নির্দেশিকা বের হল।

আর্জেন্টিনার সাংবাদিক নাচো কাতুল্লো বলেছেন, রাশিয়ায় বিশ্বকাপে যাচ্ছেন যারা তাদের রুশ ভাষা ও সংস্কৃতি সম্পর্কে জানার জন্য এএফএ বিনা খরচে যে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছিল। তাতে যারা যোগ দিয়েছিলেন তাদের মধ্যে তিনিও ছিলেন।

কাতুল্লো তার টুইটার অ্যাকাউন্টে স্প্যানিশ ভাষায় বর্ণনা করেছেন, তাদের হাতে কীভাবে ওই নির্দেশিকা দেওয়া হয় যেখানে একটা চ্যাপ্টারে বলা হয়েছে ‘রুশ মেয়েদের কীভাবে পটাতে হবে’। তিনি পুস্তিকার ওই চ্যাপ্টার টুইটারে পোস্ট করেন। যা লোকে শেয়ার করতে শুরু করে এবং প্রশিক্ষণ চলাকালীনই ইন্টারনেটে এ নিয়ে হাসাহাসি চলতে থাকে।

কাতুল্লো বলেন, ‘কর্মকর্তারা প্রশিক্ষণের মাঝখানে এসে নির্দেশিকা বইগুলো ফেরত নিয়ে নেন এবং ওই পাতাগুলো ছিঁড়ে নিয়ে সেগুলো আবার তাদের কাছে ফিরিয়ে দেন।’

বইটির এ চ্যাপ্টারেই রাশিয়ার মেয়েদের পটানোর কৌশল বর্ণনা করা হয়েছে। ছবি: বিবিসি

বইতে দেওয়া পরামর্শের চ্যাপ্টারটি আট ভাগে ভাগ করা ছিল এবং এতে সরাসরি কী করতে হবে তা বলা হয়েছিল।

নির্দেশিকার শুরুতেই বলা হয়েছিল, ‘রুশ মেয়েরা সুন্দরী, তাই বহু পুরুষ তাদের সঙ্গে শুতে চায়।’

‘হয়ত তারাও সেটা চায়, কিন্তু মনে রাখবেন ওরাও মানুষ, ওরাও গুরুত্ব চায়। তারা বিশেষ কেউ সেটা ভাবতে চায়। তাদের কাছে যৌনতা নিয়ে বোকার মতো প্রশ্ন করবেন না। যৌন সম্পর্ককে তারা একান্ত ব্যক্তিগত মনে করে এবং এটা নিয়ে সবার সামনে আলোচনা পছন্দ করে না।’

বইটিতে আর্জেন্টিনার পুরুষদের বলা হয়েছে, বিষয়টা শেষ মুহূর্তের জন্য ফেলে না রাখতে। বলা হয়, ‘রুশ মেয়েরা এমন পুরুষদের পছন্দ করে যারা নিজেরা প্রথম উদ্যোগ নেন। আপনার যদি আস্থার অভাব থাকে, তাহলে মেয়েদের সঙ্গে কীভাবে কথা বলতে হয় তা নিয়ে আগে থেকে তালিম দিতে থাকুন।’

যেসব আর্জেন্টাইন পুরুষ নিজেদের নিয়ে সন্দেহে ভোগেন তাদের উৎসাহও দেওয়া হয়েছে। এ ধরনের পুরুষদেরকে পরামর্শ দিয়ে বলা হয়, ‘মনে রাখবেন, বেশিরভাগ রুশ নারী আপনার দেশ সম্পর্কে বেশি কিছু জানবেন না, আপনি তার কাছে নতুন এবং আলাদা, রুশ পুরুষদের থেকে এখানে আপনি কিন্তু এগিয়ে।’

পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, ‘তেমন মেয়েকেই বেছে নেবেন যার আপনার দিকে ঝোঁকার একটা সুযোগ আছে।’

বলা হয়, ‘সাধারণত রুশ নারীরা একটু সিরিয়াস জিনিস পছন্দ করেন, কিন্তু অনেক মেয়েকেই পাবেন যারা অর্থ বা চটুল জিনিসও পছন্দ করেন, অনেকে আবার শুধু দেখে আপনি সুদর্শন কিনা। তবে চিন্তার কোনো কারণ নেই, রাশিয়ায় সুন্দরী মেয়ের সংখ্যা প্রচুর এবং সবাইয়ের যে আপনাকে পছন্দ হবে তা নয়। আপনি আপনার পছন্দে বেছে নিন!’

এএফএর সূত্র থেকে স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে বলা হয়েছে, বিতর্কিত চ্যাপ্টারটি ইন্টারনেটের ব্লগ থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

ম্যানুয়াল বা নির্দেশিকায় এই চ্যাপ্টারটি অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছিল কার সিদ্ধান্তে তা এখনও স্পষ্ট জানা যায় নি।