প্রচ্ছদ সারাদেশ যাত্রী চলাচল বন্ধে কঠোর অবস্থানে মানিকগঞ্জ জেলা পুলিশ

যাত্রী চলাচল বন্ধে কঠোর অবস্থানে মানিকগঞ্জ জেলা পুলিশ

মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি :  

ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক এবং আরিচা ও পাটুরিয়া ঘাট হয়ে যাত্রী চলাচলে কঠোর অস্থানে রয়েছে মানিকগঞ্জ জেলা পুলিশ। মহাসড়কের একাধিক স্থানে রয়েছে পুলিশের চেক পোষ্ট। আরিচা এবং পাটুরিয়া ঘাটে শিবালয় সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের নের্তৃত্তে পুলিশের কয়েকটি টিম কাজ করছে।

বুধবার সকাল থেকেই ঘাট এলাকায় চলছে সাড়াশি অভিযান। বিভিন্নভাবে ঘাটে আসা যাত্রীদেরকে ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছে। ফেরি ও ট্রলারসহ সকল প্রকার নৌযান চলাচল বন্ধ থাকায় ঘাটে এসে আটকে পড়ছে এসব যাত্রীরা। অবর্ণনীয় দুর্ভোগের মধ্যে পড়ছে এরা। এখান দিয়ে একটি যাত্রীও আর যাতায়াত করতে দেয়া হবে না এবং যাত্রীদেরকে ঘর থেকে বের না হওয়ার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ জানানো হয় পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে। ঘাটে নৌঙর করে থাক ফেরিতে গাদাগাদি করে যাত্রী ওঠলেও কর্তৃপক্ষ ফেরি ছাড়ছে না।

জানা গেছে, করোনা ভাইরাস সংক্রমণ রোধে সারাদেশে চলছে লক ডাউন। শুরু থেকেই গণপরিবহণ, স্পিডবোট এবং লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকলেও যাত্রীদের যাতায়াত থামছিল না। এরা মাইক্রোবাস, প্রাভেটকার, মটর সাইকেল, সিএনজি, অটোরিক্সা, টেম্পুসহ নানা ধরনের বিকল্প পরিবহণে এবং নৌ-পথে ইঞ্জিন চালিত স্যালো নৌকায় যাতায়াত করতে দেখা গেছে। এ পরিস্থিতিতে গত সোমবার থেকে জেলা প্রশাসন এবং পুলিশ প্রশাসন কঠোর অবস্থান অবলম্বন করছে। ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের একাধিক স্থানে রয়েছে পুলিশের চেক বসিয়ে গাড়িগুলোকে আটকিয়ে ঢাকার দিকে ফেরত পাঠানো হচ্ছে। এরপরও পুলিশের চোঁখকে ফাঁকি দিয়ে যে সব গাড়ি আরিচা ও পাটুরিয়া ঘাটে আসে সেগুলোকে জেলা প্রশাসনের নির্দেশে জরিমানা করেছে শিবালয় উপজেলা প্রশাসন। মঙ্গলবার ঘরমুখি যাত্রীরা ঢাকা থেকে আরিচা ও পাটুরিয়া ঘাটে আসলে পুলিশের তত্তবোধানে তাদেরকে আবার ঢাকার দিকে ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছে। পুলিশ বলছে আর একটি যাত্রীও এখান দিয়ে যাতায়াত করতে দেয়া হবে না।

বুধবার আরিচা ও পাটুরিয়া ঘাট সরজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, আরিচা-কাজিরহাট নৌ-রুটে ট্রলার চলাচল বন্ধে শিবালয় সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তানিয়া সুলতানার নের্তৃত্বে শিবালয় থানা পুলিশ সকাল থেকেই সাড়াশি অভিযান চালাচ্ছে। আরিচা ঘাটে পুলিশি তৎপরতায় সম্পূর্ণ রূপে বন্ধ হয়ে যায় ট্রলার চলাচল। এসময় যাত্রীরা নিহালপুর, সমেচঘর ও তেওতা বাজারের উত্তর পাশ থেকে বিকল্প পথে নদী পাড়ি দেয়ার চেষ্টা করে। এসব স্থানে স্থানীয় এলাকাবাসীর প্রতিরোধের মুখে যাত্রীরা ফিরে আসতে বাধ্য হয়। এসব যাত্রীদেরকে নদীর পার দিয়ে ঘুরাঘুরি করতে দেখা গেছে।

এদিকে পাটুরিয়া ঘাটে গিয়ে দেখা গেছে, সকাল থেকেই ফেরি চলাচল বন্ধ রয়েছে। তিনটি ফেরি মাঝ নদীতে নৌঙর করে রয়েছে। পাটুরিয়া ৪নং ঘাটে নৌঙর করে থাকা ঢাকা নামের একটি ফেরিতে যাত্রীরা সকাল ৯টায় ওঠে গাদাগাদি করে বসে ও দাড়িয়ে থাকে। কর্তৃপক্ষের নির্দেশ না পাওয়া পর্যন্ত ফেরিটি বেলা ২টা পর্যন্ত ঘাটেই আবস্থান করে। এরপর উক্ত ফেরিতে কয়েকটি এ্যাম্বুল্যান্স উঠার পর দৌলতদিয়ার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। ফেরিটি পোনে ৩টায় দৌলতদিয়া পৌঁছালে পুলিশ ফেরিটিকে ঘাটে ভীরতে না দিলে যাত্রীসহ ফেরিটি পুনঃরায় পাটুরিয়া ঘাটে ফিরে আসে। এসময় ওই ফেরির যাত্রীদেরকে নামিয়ে তিনটি বাসে করে সামজিক দুরুত্ব বজায় রেখে আবার ঢাকার দিকে ফেরত পাঠিয়েছে পুলিশ। পাটুরিয়া ঘাটে মাইক্রোবাস, প্রাইভেটকার সিএনজি দেখা না গেলেও মটর সাইকেল দেখা গেছে। আজকে (বুধবার) সারাদিনে জরুরী ত্রাণ এবং রোগীবাহী এ্যাম্বুল্যান্স নিয়ে মাত্র দুটি ফেরি পাটুরিয়া থেকে ছেড়ে গেছে। ওপার থেকে কোন ফেরি আসেনি।

বিআইডব্লিউটিসি’র ডিজিএম জিল্লুর রহমান বলেন, ঘুর্ণিঝর আম্ফানের কারনে বুধবার সকাল ৮টা থেকে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে ফেরি চলচল বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে জরুরী ত্রাণ এবং রুগীবাহী এ্যাম্বুল্যান্স পারাপারের জন্য আজ সারা দিনে দু’টি ফেরি পাটুরিয়া থেকে ছেড়ে দৌলতদিয়া ঘাটে যায়। শুধু যাত্রীবাহী কোন ফেরি ছাড়া হয়নি বলে তিনি জানান। ঢাকা নাামের একটি ফেরিতে এ্যাম্বুল্যান্সের সাথে কিছু যাত্রী থাকায় পুলিশ ওই ফেরিটিকে দৌলতদিয়া ঘাটে ভিরতে না দিয়ে ফেরত পাঠিয়ে দেয়।

শিবালয় সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তানিয়া সুলতানা বলেন, ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক এবং আরিচা এবং পাটুরিয়া ঘাট হয়ে আর একটি যাত্রীকেও যাতায়াত করতে দেয়া হবে না। যে যেখান থেকে আসবে তাকে আবার সেখানেই ফিরে যেতে হবে। আজকে আরিচা ট্রলার ঘাটে ভোর বেলা থেকেই পুলিশের সারাশি অভিযান চলছে। এখান থেকে কোন ট্রলার ছাড়তে এবং ভীরতে দেওয়া হয়নি। ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে পুলিশের চেক পোস্ট বসানোর পরও কিছু যাত্রীরা পায়ে হেটে বাইপাস রোড দিয়ে মটরসাইকেল, অটো রিক্সায় আরিচা ও পাটুরিয়া ঘাটে আসছে।

এসব যাত্রীদেরকে পুলিশের ব্যবস্থাপনায় নিরাপদ দুরুত্ব বজায় রেখে পুণঃরায় ঢাকার দিকে ফেরত পাঠানো হচ্ছে। আজকেও তিনটি বাসে করে কিছু যাত্রী ঢাকায় ফেরত পাঠানো হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার প্রায় ৩শ’ যাত্রী ঢাকার দিকে ফেরত পাঠানো হয়েছে। পুলিশের এ অভিযান অব্যহত থাকবে বলে তিনি জানিয়েছেন।