আর এটা নিশ্চিত করতে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানের পক্ষে অস্ত্র ধরা রাজাকার, আলবদর, আলশামস বাহিনীর সদস্যদের তালিকা চান প্রধানমন্ত্রী।
নেতারা জানান, প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন তিনি কোটা সংস্কার করবেন। তবে উচ্চ আদালতের রায় থাকায় ও তার রাজনৈতিক দর্শনের কারণে মুক্তিযোদ্ধা কোটা রেখে বাকিগুলো সংস্কার করা হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের নেতৃত্বে কমিটি কাজ করছে। কমিটির রিপোর্ট পাওয়ার পর সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’
একাধিক নেতা জানান, কোটা সংস্কার আন্দোলনের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি মনে করেন এই আন্দোলন মুক্তিযোদ্ধা কোটার বিরুদ্ধে। আর এর পেছনে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি।
নেতাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী সভায় কোটা সংস্কার আন্দোলন সম্পর্কে আলোচনার সূত্রপাত করেন দলের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন। তিনি বলেন, ‘নেত্রী এই ইস্যুটির সমাধান হওয়া উচিত।’
সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের দাবিতে প্রথম আন্দোলন হয় ১৯৯০ দশকে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর এই কোটা থাকলেও তাতে চাকরি হতো না বলে অভিযোগ আছে। এর পাশাপাশি মুক্তিযোদ্ধাদের বয়স বেড়ে যাওয়ায় ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় ফিরে মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের এই কোটার আওতায় আনে সরকার।
আর এর প্রতিক্রিয়ায় মাঠে নামে প্রধানত স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াত শিবিরের অনুসারীরা। সে সময় গুরুত্ব না পেলেও পরে ২০০৯ সালে আবার আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর একই দাবিতে একাধিকবার আন্দোলন শুরু হয়। মাঝে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে আবার এই ইস্যুটি ছিল না। তখনও মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরিপ্রার্থীদের নানাভাবে হয়রানির অভিযোগ এসেছে গণমাধ্যমে।
সবশেষ গত ফেব্রুয়ারিতে যে আন্দোলন শুরু হয়, তাতে অবশ্য মুক্তিযোদ্ধা কোটার নাম উল্লেখ না করে কোটা সংস্কারের দাবি সামনে আনা হয়। আন্দোলনকারী সংগঠন বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের ব্যানারে এই আন্দোলনে সব মিলিয়ে কোটা ১০ শতাংশ করার দাবি তোলা হয়।
আর এপ্রিলের শুরুতে চরম বিশৃঙ্খলার মধ্যে প্রধানমন্ত্রী ১১ এপ্রিল সংসদে ঘোষণা দেন কোনো কোটা থাকবে না। কিন্তু গত ১১ জুলাই মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক জানান, মুক্তিযোদ্ধা কোটা বহাল রাখার বিষয়ে আদালতের নির্দেশনা আছে। পরদিন সংসদে প্রধানমন্ত্রীও বলেন, আপিল বিভাগের রায় থাকায় এই কোটা বাতিল করলে তিনি আদালত অবমাননায়ন পড়বেন।
আওয়ামী লীগের বৈঠকে কোটা আন্দোলন নিয়ে আলোচনায় অংশ নেন দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক এ কে এম এনামুল হক শামীম, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন।
এ সময় শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি তো মুক্তিযোদ্ধা কোটা রাখার পক্ষে। ২০০১ সালে আমাকে বিশ্বব্যাংক যে প্রস্তাব দিয়েছিল, তা মানলে আমি ক্ষমতায় আসতে পারতাম। মুক্তিযুদ্ধের প্রশ্নে আপস করলে আমার রাজনীতি করার দরকার কি?’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের জন্য স্বাধীনতা বিরোধীরা পরিকল্পিতভাবে এ আন্দোলন করাচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধের প্রশ্নে একচুলও ছাড় দেওয়া হবে না।’
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের দুর্বলতা আছে। আমরাও এ আন্দোলনের শুরু দিকে আন্দোলনকারীদের সুরে কথা বলেছি। শুরু থেকেই স্বাধীনতার পক্ষের বুদ্ধিজীবী, নারী, মুক্তিযোদ্ধা ও বিভিন্ন অনগ্রসর অংশের মানুষেরা সক্রিয় হলে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো না। আমাদের এ দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে তারা আজকে মাঠ দখল করে আছে।’
কোটা সংস্কার আন্দোলনে ছাত্রলীগেরও ভূমিকা ছিল বলে অভিযোগ করেন দলের নির্বাহী কমিটির সদস্য আনোয়ার হোসেন। বলেন, ‘ছাত্রলীগের সম্মেলন ঠেকানোর জন্য সংগঠনের একটি অংশ এ আন্দোলনে ইন্ধন দিয়েছিল।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধা কোটা থাকবেই। মুক্তিযোদ্ধারা আগে পশ্চাদপদ ছিল, তাদের পরিবারকে সামনে আনা হয়েছে। তাই এ কোটা থাকবেই।’
‘বরং রাজাকার, আল বদর, আল-শামসদের তালিকা করে তাদের পরিবারের কেউ যেন সুযোগ-সুবিধা না পায় সেটার দিকে নজর দেয়া হবে।’
জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন প্রসঙ্গ
আলোচনায় একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নের বিষয়েও আলোচনা হয়। শেখ হাসিনা বলেন, তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মতামত নিয়েই প্রার্থী বাছাই করা হবে।
তফসিলের আগেই প্রার্থীদের সংকেত দিয়ে দেয়া হবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সেপ্টেম্বরের শুরুতেই আমি বিভাগীয় পর্যায়ের নেতাদের নিয়ে বৈঠকে বসব। সেখানে মনোনয়নের বিষয়টি চূড়ান্ত করা হবে।’
বৈঠকে কয়েকটি জেলার দ্বন্দ্ব কোন্দলের বিষয়টি বৈঠকে উঠে আসে। এ সময় বিভেদ মিটিয়ে ফেলে নির্বাচনের আগে দলকে ঐক্যবদ্ধ ও শক্তিশালী করার নির্দেশ দেন শেখ হাসিনা।
চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের খালি পদ পূরণে দলের সাংগঠনিক সম্পাদক মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলকে নির্দেশনাও দেন আওয়ামী লীগ প্রধান।