প্রচ্ছদ আর্ন্তজাতিক মার্কিন সেনাবাহিনীর হামলায় ৭০ জনের অধিক তালেবান যোদ্ধা নিহত

মার্কিন সেনাবাহিনীর হামলায় ৭০ জনের অধিক তালেবান যোদ্ধা নিহত

মার্কিন সেনাবাহিনী দাবি করেছ, গত ১০ দিনে তাদের হামলায় ৭০ জনেরও বেশি তালেবান যোদ্ধা নিহত হয়েছে। গত এক বছরে তালেবানরা যতগুলো ঘটনায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে সেগুলোর মধ্যে ওই মার্কিন অভিযান একটি। ১৭ মে থেকে ২৬ মে পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুগুলোকে আঘাত হানা হয়। এর মধ্যে গত ২৪ মে হানা হয় সবচেয়ে বড় আঘাত। ওই দিন মুসা কালা নামক স্থানে তালেবান নেতাদের ওপর হামলা চালানো হয়। এতে নেতৃস্থানীয় তালেবান যোদ্ধারা নিহত হয়। আফগানিস্তানে নিয়োজিত মার্কিন সেনাবাহিনীর তরফ থেকে প্রকাশিত বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, হামলার সময়ে মুসা কালার ওই স্থানে তালেবান নেতাদের উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছিল।

২৪ তারিখের প্রথম হামলায় নিহত প্রায় ৫০ জনের মধ্যে রয়েছে তালেবান সংগঠনের পক্ষে নিযুক্ত হেলমান্দ প্রদেশের গভর্নর, একাধিক জেলার গভর্নর, শীর্ষস্থানীয় গোয়েন্দা কর্মকর্তা এবং কান্দাহার, কুন্দুজ, গেরাত, ফারাহ, উরুজগাম এবং হেলমান্দ প্রদেশের নেতৃস্থানীয় তালেবান কর্মকর্তারা। একই দিনে যুক্তরাষ্ট্রের বিমানবাহিনীর এ-১০ বোমারু বিমান তালেবান যোদ্ধাদের ‘রেড ইউনিটের’ একজন কমান্ডার ও তার সহযোগীর ওপর হামলা চালায়। তারা সানজিন প্রদেশের দিকে যাচ্ছিল বলে জানানো হয়েছে।

আফগানিস্তানের মতায়েনকৃত মার্কিন বাহিনীর কর্মকর্তা জেনারেল জন নিকোলসন বলেছেন, ‘গত এক বছরের মধ্যে ওই অভিযান তালেবান যোদ্ধাদের সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঘটনাগুলির মধ্যে একটি। দীর্ঘদিন ধরে এর সামষ্টিক প্রভাব পুরো দেশ জুড়ে দেখতে পাওয়া যাবে।’ বিমান বাহিনীর বোমারু বিমান ২৫ মে নাহর–ই-সিরাজ নামক স্থানে অবস্থিত তালেবানদের একটি জেলার কেন্দ্রও ধ্বংস করে দিয়েছে।

অন্যদিকে ২৬ মে চালকবিহীন বিমানের হামলায় তালেবান যোদ্ধাদের বোমা হামলা তত্ত্বাবধানকারী একজন বিশেষজ্ঞ নিহত হয়েছে। বিবৃতিতে দাবি করা হয়েছে, ওই ব্যক্তি আফগানিস্তান সেনাবাহিনী, আন্তর্জাতিক বাহিনী এবং আফগানিস্তানের জনগণের বিরুদ্ধে ১৩ বছর ধরে বোমা হামলার ঘটনা তত্ত্বাবধান করে আসছিল। এসব ছাড়াও মার্কিন সেনাবাহিনীর ১০ দিন ধরে চালানো অভিযানে ভিন্ন ভিন্ন স্থানে আরও ১৫ জন তালেবান সদস্য নিহত হয়েছে।

নিকোলসন জানিয়েছেন, ‘জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নেতৃবৃন্দ এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন যে রাজনৈতিক সমঝোতা প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়েই আফগানিস্তানে বিজয় নিশ্চিত হবে। হামলা ও আলোচনা চলতে থাকবে। আমরা তালেবান যোদ্ধাদের চাপে রাখব যেন তারা শান্তি আলোচনায় রাজি হয়।’ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত আগস্ট মাসে তার আফগানিস্তান পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করেছিলেন। তার মূল লক্ষ্য ছিল ১৭ বছর ধরে চলা আফগানিস্তান যুদ্ধে যে অচলবস্থা বিরাজ করেছে তার অবসান ঘটানো।

অভিযান চালানোর ক্ষেত্রে মার্কিন সেনাবাহিনীর ওপর এখন বিধিনিষেধ অনেকটাই কম এবং মার্কিন সেনাবাহিনী আবার চিহ্নিত করা মাত্রই তালেবান যোদ্ধাদের ওপর হামলা চালানো শুরু করেছে। প্রেসিডেন্ট ওবামার আমলে মার্কিন বাহিনীকে মূলত প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ প্রদানের কাজে রাখা হয়েছিল যারা শুধুমাত্র সহযোগী দেশের সেনাবাহিনী হামলার মুখে পড়লে বা হামলার হুমকিতে থাকলে তালেবান যোদ্ধাদের ওপর হামলা চালাত।

সম্প্রতি প্রকাশিত খবর থেকে জানা গেছে, বিমানের মাধ্যমে তালেবান যোদ্ধাদের আর্থিক উৎসগুলোর ওপরও হামলা চালানো হচ্ছে। এখন পর্যন্ত আফিম ও যাতায়াত পথে আরোপ করা শুল্ক থেকে অর্থ আয় বন্ধ করতে মার্কিন বাহিনী ১০০টিরও বেশি লক্ষবস্তুতে হামলা চালিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে সেনাবাহিনী এই মতে উপনীত হয়েছে, আফগানিস্তানে সামরিক শক্তি প্রয়োগ করে কোনও সমাধান আসবে না বরং শান্তি আলোচনায় রাজি হওয়ার জন্য তালেবান যোদ্ধাদের চাপের মধ্যে রাখতে হবে। হামলাগুলো সেই চাপে রাখার কৌশলেরই অংশ।