প্রচ্ছদ জাতীয় মহাবিপর্যয় থেকে রক্ষা পেল হালদা নদী

মহাবিপর্যয় থেকে রক্ষা পেল হালদা নদী

প্রাকৃতিক হালদা নদী থেকেই ওয়াসা সিংহ ভাগ পানি সংগ্রহ করে নগরে সরবরাহ করে। পক্ষান্তরে এখন চলছে হালদায় ডিম ছাড়ার মৌসুম।  উপমাহদেশের অন্যতম প্রাকৃতিক মৎস্যপ্রজনন ক্ষেত্র এই হালদা নদী। এমন অতিগুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক একটি নদীর অনতিদূরে হাটহাজারীর মরা ছড়ার খালেই পড়ল রেলওয়ের ফার্নেস অয়েলবাহী তিনটি ওয়াগন। প্রতিটি ওয়াগনে ছিল ২৫ হাজার লিটার তেল।

মরা ছড়ার খাল হয়ে তেলগুলো যেতো প্রাকৃতিক মৎস্যপ্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদীতে। তবে হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) প্রাণান্তকর চেষ্টায় হালদা নদী পর্যন্ত গড়াতে পারেনি তেল। নদীতে তেল পড়া ঠেকাতে দেওয়া হয়েছে ১২টি বাঁধ, প্রতিদিন দিনরাত শ্রমিকদের মাধ্যমে উত্তোলন করা হয়েছে ১৬ হাজার লিটার তেল।

যমুনা অয়েল কোম্পানির কাছে বিক্রয় করা হয়েছে ১৫ হাজার ৫২১.০৪ লিটার তেল। যমুনা প্রতি লিটার ক্রয় করেছে ২০ টাকা করে। এখন চলছে হালকা-পাতলা লেয়ার তেল উত্তোলন। ফলে হালদা নদীতে পোনা ছাড়ার এ মৌসুমে প্রাকৃতিক এ নদীটি মহাবিপর্যয় থেকে রক্ষা পেয়েছে বলে জানা যায়।

গত সোমবার বিকালে চট্টগ্রামের সিজিপিওয়াই ইয়াড থেকে হাটহাজারীর একশ’  মেগাওয়াট পিকিং প্ল্যান্টের জন্য ফার্নেস অয়েল নেওয়ার পথে হাটহাজারী উপজেলার পূর্ব মধ্যম দেওয়ান নগর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ রুহুল আমীন বলেন, ‘হালদা নদীতে তেল যাওয়ার সুযোগ দেয়া হয়নি। খাল থেকে ১৬ হাজার লিটার তেল উত্তোলন করা হয়েছে, দেওয়া হয়েছে ১২টি বাঁধ। কাজ করেছেন ৫০ জন শ্রমিক। রাতে কাজের জন্য ব্যবস্থা করা হয়েছে আলোর। তেল তুলতে দেওয়া হয়েছে প্রয়োজনীয় ফোম, বালতি ও ড্রাম। উত্তোলন করা তেল ক্রয় করেছে যমুনা। ৯৫ শতাংশ ভারী তেল উত্তোলন করা হয়েছে। বলা যায়, হালদা নদী এখন শঙ্কা মুক্ত।’

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় হালদা রিচার্স ল্যাবরেটরির সমন্বয়ক অধ্যাপক ড. মনজুরুল কিবরিয়া বলেন, ‘সবগুলো তেল থেকে যদি অর্ধেকও হালদা নদীতে গিয়ে পড়ত, তাহলে এ বছর চলমান ডিম ছাড়ার মৌসুমে হালদা নদীতে এক মহাবিপর্যয় দেখা দিত। তবে ইউএনও’র অক্লান্ত পরিশ্রম ও দ্রুত উদ্যোগে তেল পড়া ঠেকানো গেল। ফলে হালদা নদী এক মহাবিপর্যয় থেকে রক্ষা পেল।’

জানা যায়, স্থানীয়দের তেল তুলতে আগ্রহ করতে তেল উত্তলনকারীর কাছ থেকে প্রতিকেজি ২০ টাকা করে বিক্রি করতে পারবে। উপজেলা প্রশাসনের এমন ঘোষণায় উৎসুক অনেকেই তেল সংগ্রহে নেমে পড়েন। তাদের কাছ থেকেই মূলত যমুনা অয়েল কোম্পানি তেলগুলো ক্রয় করে।

পক্ষান্তরে, তেল ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে খালের পানি থেকে তেল অপসারণের  কাজ করছে চট্টগ্রাম বন্দর ও পরিবেশ অধিদফতর। তেল ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে হালদা নদীতে বন্দরের দুটি বে-ক্লিনার মোতায়েন করা হয়। তাছাড়া সনাতন পদ্ধতিতে তেল অপসারণে ছয়টি সাম্পানে করে আলাদা টিমও বে-ক্লিনারের সঙ্গে কাজ করছে। অয়েল রিকভারি বুম এবং টাগবোট কান্ডারি-১০ কর্ণফুলী নদীর শাহ আমানত সেতু এলাকায় রাখা হয়েছে। অন্যদিকে, পরিবেশ অধিদফতর মেকানিক্যালি এবং ম্যানুয়ালি পদ্ধতিতেই তেল অপসারণ করছে। পানি থেকে তেল অপসারণ করতে শিপইয়ার্ড থেকে ‘সাকার মেশিন’ কেনার কথা। এছাড়া তেল অপসারণে রেলের দুইটি রিলিফ ট্রেন নেওয়া হয়েছে।