প্রচ্ছদ সারাদেশ ভারতীয় নাগরিকের মারধরে বাংলাদেশি নিহত

ভারতীয় নাগরিকের মারধরে বাংলাদেশি নিহত

 

হবিগঞ্জ প্রতিনিধি :

ভারতীয় নাগরিকদের হাতে নির্মমভাবে খুন হয়েছেন বাংলাদেশি নাগরিক লোকমান হোসেন (৩২)। হত্যার ঘটনা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করছে ভারত। ফলে যাবতীয় প্রস্তুতি নেয়ার পরও মরদেহ দেশে আনা সম্ভব হচ্ছে না। এদিকে নিহতের স্বজনরা অপেক্ষার প্রহর গুনছেন কখন আসবে লোকমানের লাশ? গরুচোর অপবাদ দিয়ে  লোকমানকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। লোকমান হোসেন হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার মালঞ্চপুর গ্রামের মৃত আব্দুল হাসিমের ছেলে।

বিজিবি-৫৫ ব্যাটালিয়ান অধিনায়ক লে.কর্নেল সামিউননবী জানান, ২৪ মের পর থেকেই আমরা চেষ্টা করছে মরদেহ দেশে ফেরত আনার জন্য। আমরা ভারতীয় পক্ষকে মরদেহের সঙ্গে এফআইআর, পোস্টমর্টেম ও কোভিড-১৯ পরীক্ষার কপি দেয়ার জন্য জানাই।

বুধবার তারা পোস্টমর্টেম ছাড়া এবং এফআইআর এর আংশিক কপিসহ লাশ নিয়ে আসে। কিন্তু আমরা তা গ্রহণ না করে তিনটি কাগজ দেয়ার কথা জানাই। বৃহস্পতিবার দুপুরে পুনরায় মরদেহ ফেরতের সময় নির্ধারণ করা হলেও এবার তারা এফআইআর ছাড়াই লাশ দেয়ার চেষ্টা করে। ফলে আমরা তা গ্রহণ করিনি।

তিনি আরও জানান, আমাদের পুলিশ বিভাগের লোকজন ধারণা করছে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ এই খুনের ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করছে। তাই এফআইআর এর কপি দিচ্ছে না। একটি এফআইআর করতে আধা ঘণ্টার বেশি সময় লাগার কথা নয়। তবে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে লোকমানের কোভিড-১৯ পরীক্ষার ফলাফল নেগেটিভ এসেছে।

তিনি আশাবাদী লাশ যথাশীঘ্র দেশে নিয়ে আসা হবে।স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত ২৪ মে  অবৈধভাবে  সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের মোহনপুর  এলাকায় তার ফুফুর বাড়ি যাচ্ছিলেন লোকমান। ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের গোপালনগর পৌঁছাতেই এক দল ভারতীয় নাগরিক লোকমান হোসেনকে  পথরোধ করে  গরুচোর সন্দেহে এলোপাতাড়ি পিটাতে থাকে।

এসময় সে চোর না; বেড়াতে এসেছে এমন আকুতি  বার বার জানালেও পাষণ্ডদের মন গলেনি। এলোপাথাড়ি পিটুনিতে তার মৃত্যু হয়। ভারতীয় কয়েকটি  গণমাধ্যমে লোকমানের আকুতির  ভিডিও প্রচার  হয়েছে।  

তবে গরুচোর সন্দেহ  গণপিটুনিতে তার মৃত্যুর  খবর ত্রিপুরার    গণমাধ্যম সম্প্রচার করে। মৃত ভেবে ভারতীয়রা  লোকমানকে  বাংলাদেশ সীমান্তের অদূরে একটি জঙ্গলে ফেলে রাখে।খবর পেয়ে  পশ্চিম ত্রিপুরা রাজ্যের  সিধাই থানা পুলিশ  মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করে  একটি হাসপাতালে  নিয়ে গেলে সেখানে লোকমানের মৃত্যু হয়। বুধবার   বিকেলে বিজিবি-বিএসএফ এর পতাকা  বৈঠক হয় ১৯৯৪/৪ এস পিলারে কাছে বাংলাদেশের মোহনপুর নামক স্থানে।

ভারতের পক্ষে বিএসএফ এর ১২০  ব্যাটালিয়নের  মোহনপুর ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার ইন্সপেক্টর শশি কান্ত  ও বাংলাদেশের পক্ষে নেত্বত্ব দেন ৫৫ বিজিবির ধর্মঘর ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার সুবেদার দেলোয়ার হোসেন।

বৈঠকে জানানো হয়, বুধবারই ভারতের পশ্চিম  ত্রিপুরা রাজ্যের  মোহনপুর  সীমান্ত দিয়ে মরদেহ হস্তান্তর করার কথা ছিল। কিন্তু ভারতীয় পুলিশ ময়নাতদন্ত, সুরতহাল রিপোর্ট আনুসাঙ্গিক কাগজপত্র ছাড়া মরদেহ হস্তান্তর করতে চাইলে বাংলাদেশের বিজিবি -পুলিশের প্রতিনিধিরা অস্বীকৃতি জানায়।

বৃহস্পতিবার বিজিবির ধর্মঘর ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার সুবেদার দেলোয়ার হোসেন জানান, বৃহস্পতিবার দুপুর আড়াইটায় লোকমানের মরদেহ ভারত আমাদের কাছে হস্তান্তর করবে। কিন্তু এফআইআর এর কপি না থাকায় আমরা মরদেহ গ্রহণ করতে পারছি না। তবে আমরা অপেক্ষায় রয়েছি সন্ধ্যা নাগাদ ভারতীয় পক্ষ আমাদের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করবে।

নিহতের পরিবার সূত্র জানায়, লোকমান মিয়া  বাড়ির পাশ দিয়ে অবৈধ পথে সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতের  মোহনপুরে তার ফুফুর  বাড়ি যাচ্ছিলেন। পতিমধ্যে ভারতীয় নাগরিকদের রোষানলে পরে নির্মমভাবে খুন হয় তিনি।

নিহতের ছোট ভাই  হুমায়ুন মিয়া বলেন, আমার ভাইকে হত্যা করা হয়েছে। ভারতীয় গণমাধ্যমে প্রচার  হয়েছে। অথচ তারা কাগজপত্র ছাড়া মরদেহ ফেরত দিতে চায়। এ ব্যাপারে হত্যাকারীদের যেন বিচার হয় তার দাবি করেন তিনি।

তিনি আরও জানান, আমরা লোকমানের মরদেহের জন্য প্রতিদিন অপেক্ষায় থাকি। কিন্তু মরদেহ আসছে না। বৃহস্পতিবার আমরা সারাদিন বৃষ্টির মাঝেও বসে বসে অপেক্ষা করছি কখন আসবে লাশ।