প্রচ্ছদ খেলাধুলা বিশ্বকাপের আগে বাংলাদেশের যেসব উন্নতি

বিশ্বকাপের আগে বাংলাদেশের যেসব উন্নতি

‘এটা কেবলই শুরু।’

ত্রিদেশীয় সিরিজের শিরোপা হাতে কথাটা বলেছিলেন মাশরাফি বিন মুর্তজা। ওয়ানডে মর্যাদা পাওয়ার ২২ বছর পর কোনো টুর্নামেন্টের প্রথম শিরোপা—একটু দেরি করেই শুরু হলো বৈকি। আন্তর্জাতিক ময়দান তো আর ফুলশয্যা নয়, বিশেষ করে বাংলাদেশের মতো দলের জন্য তো নয়-ই; হোঁচট খেতে খেতে কোমর শক্ত করতে শেখার পরই চূড়ান্ত লড়াইয়ে প্রতিপক্ষকে নকআউট করেছে বাংলাদেশ। গত কয়েক বছর ধরে ওয়ানডেতে বেশ ধারাবাহিক মাশরাফি বিন মুর্তজার দল। এবার বিশ্বকাপে তো অনেকেই বাংলাদেশকে আগেভাগেই তুলে রেখেছেন সেমিফাইনালে! কিন্তু যদি প্রশ্ন করা হয় বিশ্বকাপে লক্ষ্যপূরণে কতটা প্রস্তুতি বাংলাদেশ? কোন কোন জায়গায় আলাদা করে উন্নতি চোখে পড়ছে! উত্তর পেতে এ বিশ্লেষণে একটু চোখ বুলিয়ে নিন…

ভয়ডরহীন হুক-পুল:

ত্রিদেশীয় সিরিজে দৃশ্যটা আলাদা করে চোখে পড়েছে। হুক ও পুলে অভাবনীয় উন্নতি করেছেন ব্যাটসম্যানরা, যা এক সময়ে বেশ কঠিনই ছিল বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানদের জন্য। কিন্তু ত্রিদেশীয় সিরিজে দেখা গেল অন্য দৃশ্য। কেমার রোচ, শ্যানন গ্যাব্রিয়েল, শেলডন কটরেলদের গতি ১৪০ কিলোমিটারের আশপাশে। তাঁদের বাউন্সার খুব কমই ‘ডাক’ করেছেন ব্যাটসম্যানেরা। বিশেষ করে সৌম্য সরকার, তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিম, এমনকি মিঠুন-মোসাদ্দেকরাও পুল করে ফাইন লেগ কিংবা মিডউইকেট দিয়ে বল সীমানা ছাড়া করেছেন। বিশ্বকাপে ইংলিশ কন্ডিশনে এ কৌশল রানের গতি বাড়াতে কাজে লাগবে। পেস বোলিংয়ের উইকেটে পেসারদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুল-হুক কিন্তু মোক্ষম দাওয়াই।

তরুণদের দায়িত্ব নেওয়া
বাংলাদেশ ‘পাঁচ তারকা’ নির্ভর দল— কথাটা প্রায়ই শোনা যায়। এটি অবশ্য অযৌক্তিক কিছু নয়। ওয়ানডেতে বাংলাদেশের উত্থানে তামিম-মাশরাফি-সাকিব-মুশফিক-মাহমুদউল্লাহর অবদান অনস্বীকার্য। প্রায় প্রতিটি ম্যাচেই এঁরা ব্যাটে অথবা বলে অবদান রাখেন। পাঁচজন সেরা তারকার বন্দনার পাশাপাশি একটা শঙ্কাও কিন্তু ভালোভাবে পেয়ে বসেছিল সবাইকে। যেদিন এই পাঁচজনের কেউই পারফরম করতে পারবেন না, সেদিন কারা দায়িত্ব নেবে! আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজে এই ভয়টা আপাতত কেটেছে। এ টুর্নামেন্টে তরুণেরা দায়িত্ব নিয়ে খেলেছেন।এত দিন পর প্রশ্নটির জবাব মিলতে শুরু করেছে। ত্রিদেশীয় সিরিজে বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ রান সৌম্য সরকারের। তিন ফিফটির মধ্যে ফাইনালে তাঁর ৬৬ রানের ইনিংসটি ছিল মহাগুরুত্বপূর্ণ। কিংবা মোসাদ্দেক হোসেনের কথাই ধরুন। ‘ফিনিশার’ হিসেবে খ্যাতি কুড়োনো এ তরুণ এত দিন পর ফাইনালে এসে দেখালেন তাঁর সামর্থ্য। পাঁচ ছক্কায় ২৭ বলে তাঁর ৫২ রানের ইনিংসটি মহামূল্যবান বললেও কম বলা হয়।

বোলিংয়ে রান আটকানোতেও তরুণেরা এগিয়ে। ত্রিদেশীয় সিরিজে বাংলাদেশের হয়ে সেরা ইকোনমি মোসাদ্দেক (২ ম্যাচে ১০ ওভারে ৪.১০) ও মিরাজের (৩ ম্যাচে ২৪ ওভারে ৪.২০)। গোটা টুর্নামেন্টে এক ইনিংসে সেরা বোলিংও আরেক তরুণ আবু জায়েদের (৫/৫৮)। এক ইনিংসে সেরা ইকোনমি রেটে (ওভারপ্রতি রান দেওয়ার হার) সাকিবের পরই আছেন মোসাদ্দেক ও মিরাজ। তরুণেরা এভাবে ঘুরে দাঁড়ানোয় বাংলাদেশ দল আর ‘পাঁচ তারকা’নির্ভর নয়—এমনটি মনে করছেন বিশ্লেষকেরাও।

রান তাড়া করে জয়ের অভ্যাস
চাপে ভেঙে পড়া বাংলাদেশের জন্য নতুন কিছু না। দ্রুত উইকেট পড়ে গেলে অনেক সময় দুই শ ছুঁইছুঁই লক্ষ্য তাড়া করাও অসম্ভব হয়ে পড়ে। সেটি ইনিংসের শুরুতে কিংবা মাঝে। কিন্তু এ বদঅভ্যাসটা ত্রিদেশীয় সিরিজে দেখা যায়নি। ফাইনালসহ চার ম্যাচেই রান তাড়া করে জিতেছে বাংলাদেশ। এবং তা কখনো আড়াই শ ছুঁইছুঁই কিংবা তিন শ ছুঁইছুঁই স্কোর। ফাইনালে তো লক্ষ্যটা আরও কঠিন ছিল— ২৪ ওভারে ২১০ রান। এ লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ১৪ থেকে ১৬ ওভারের মধ্যে ২ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়েছিল বাংলাদেশ। হাতে ৫ উইকেট রেখে দল তখন ৪৮ বলে ৬৫ রানের দূরত্বে। কঠিন হয়ে আসা ম্যাচটা এখান থেকে অবলীলায় জিতিয়েছেন ব্যাটসম্যানরা।

ওপেনিংয়ে ধারাবাহিক
বোলিং কিংবা ব্যাটিং—ক্রিকেটে ভালো শুরু সব সময়ই খুব গুরুত্বপূর্ণ। একবার ভেবে বলুন তো, ত্রিদেশীয় সিরিজে বাংলাদেশ চার ম্যাচেই রান তাড়া করে জিতেছে কীসের ওপর ভিত্তি করে? অবশ্যই ভালো শুরু। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে ১১৪ রানের জুটি গড়েছিলেন তামিম-সৌম্য। একই দলের বিপক্ষে পরের ম্যাচে ৫৪ রানের জুটি গড়েছেন দুজনে। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে তৃতীয় ম্যাচে ১১৭ রানের জুটি গড়েছেন তামিম-লিটন। আর ফাইনালে মাত্র ৫.৩ ওভারে ৫৯ রানের জুটি গড়ে দলকে উড়ন্ত সূচনা এনে দিয়েছিলেন তামিম-সৌম্য।