প্রচ্ছদ শিল্প সাহিত্য ফুলের প্রেমে বৈশাখ

ফুলের প্রেমে বৈশাখ

হাসান মাহমুদ: গ্রীষ্মের সেই বৈশাখ বা কালবৈশাখ আমরা যে নামেই ডাকি না কেন? তা কিন্তু আগেই বিদায় নিয়েছে। তবে প্রকৃতিতে কালবৈশাখী চলছেই। এখন যখন আকাশে কালো মেঘ দেখা যায়, তখন মাঝে মাঝে বৈশাখের তা-ব শহরের উপর বয়ে গেলেও ফুলগুলোকে যেন পরম যতেœ রেখে দিয়েছে গাছেই। হয়তো! বৈশাখও ফুলের সৌন্দর্যের প্রেমে পড়েছে। যার ফলে নগরীকে নৈসর্গিক সৌন্দর্যের অপরূপ সাজে রাঙিয়ে তুলেছে মনকাড়া বিভিন্ন রকমারী ফুলের সৌন্দর্য।

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অন্যতম প্রতীক ফুল। রাজশাহী নগরীতে ছয়টি ঋতুর অপূর্ব সমন্বয়ে ফুলের বৈচিত্রে যোগ করেছে এক অন্যরকম মাত্রা। নানা প্রজাতির ফুল নগরীর প্রাকৃতিক পরিবেশকে সর্বদা সজীব ও প্রাণবন্ত করে রাখছে তার রূপ ও সুবাসের মাধ্যমে। তবে বর্তমান সময়ে কৃষ্ণচূড়া, জারুল, কাঠ গোলাপ, বেলীফুল, যেন শহরকে আরো মায়াবি করে তুলছে।

কৃষ্ণচূড়া এখন ঝরে পড়ার সময় হলেও হয়ত কারো অপেক্ষায় এখনো ফুটে আছে গাছে। নচিকেতার সেই গান- ‘তুমি আসবে বলে আকাশ মেঘলা বৃষ্টি এখনো হয়নি, তুমি আসবে বলে কৃষ্ণচূড়া ফুলগুলো ঝরে যায়নি’ যেন প্রকৃতিতে এখন বেশিই দেখা যাচ্ছে। নগরীর বিভিন্ন গাছে ফুল আর বৈশাখও তার কালো মেঘ নিয়ে মাঝে মাঝে হাজির হলেও ঝড় হয়ে লন্ডভন্ড করছে না। হয়ত নচিকেতার সেই গানের মতোই মেঘ আর ফুল কারো অপেক্ষায় আছে।

নগরী ঘুরে দেখা যায়, নগরীর পদ্মার ধারের রাস্তার দুই পাশে, শিমলা পার্ক এলাকায় দেখা যাচ্ছে বড়-বড় কৃষ্ণচূড়া গাছে গাঢ় লাল-কমলা ফুলে পরিপূর্ণ। ফুলের জগতে কৃষ্ণচূড়ার মতো এমন উজ্জ্বল রঙের ফুল বেশ কমই দেখা যায়। বর্ষার শেষেও এই গাঢ় লাল-কমলা ফুলের জুড়ি যেন শেষ হয় না। শুধু পদ্মা পাড়ের রাস্তায় না, এমন দৃশ্য মুক্ত বায়ুর নগরীর বিভিন্ন রাস্তায় ধারে, মোড়েই মিলবে।

নগরীতে বৃষ্টির ফলে গাছের বাকল ও পাতার ধুলোমাখা বিবর্ণ রং হারিয়ে গেছে। নগরীর বিভিন্ন সড়ক গুলোতে জারুলগাছে বেগুন ফুল শোভা পাচ্ছে। জারুলের বেগুনি রংয়ের ফুল দেখে মনটা ভরে যাচ্ছে। কী অপূর্ব তার শোভা এবং আকর্ষণ। সবুজ পাতার মাঝে বেগুনি রংয়ের ফুলের রুপ নগর বাসীর মন মাতোয়ারা করে তুলেছে । বাতাস তখনই হয় সুরভি যখন তা বন্ধ হয় ফুলের বুকে।

কাঠ গোলাপ ফুলটি গোলাপের মতো নয়, আবার কাঠের সাথেও সে ধরনের কোনো সম্পর্ক নেই, তারপরও ফুলটির নাম ‘কাঠ গোলাপ’। চারপাশজুড়ে সুঘ্রাণ ছড়িয়ে নগরবাসীর মনে মাদকতা তৈরি করে রাখতে কাঠ গোলাপ ফুলের জুড়ি নেই। পাঁচ-পাপড়ির মাঝখান থেকে হলুদের একটু খানি আভা উঁকি-ঝুঁকি দেওয়ার কারণেই ফুলের রূপ যেন আরও বহুগুণ বেড়ে গেছে।

বেলী ফুলের গন্ধ নগর বাসী আকৃষ্ট না হয়ে থাকতে পারেনা। তাইতো কবি যতীন্দ্রমোহন বাগচীর লিখেছেন- ‘ফুলের গন্ধে ঘুম আসে না একলা জেগে রই’ শব্দগুলোই যেন এই নগরীর বেলী ফুলগুলোর প্রতীক।

গ্রীষ্মের প্রচন্ড তাপে মানুষের অস্থিরতা ও অস্বস্থি যখন চরম পর্যায়ে তখন রকমারী ফুলের সমাহার দেখে মনে শান্তির বাতাস বয়ে যায় নগরী বাসির মনে। বিভিন্ন রাস্তার পাশেই রয়েছে এই রকম নগরীর নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। পদ্মার কোল ঘেষে পিচঢালা রাস্তার দুই ধারে বিভিন্ন গাছে ফুলে আচ্ছাদিত হয়ে আছে। গ্রীষ্মকালীন বিভিন্ন রকম ফুলের অপূর্ব সমারোহে ভরে উঠেছে।

কৃষ্ণচূড়া, জারুল, বেলী, কাঠ গোলাপ ছাড়াও নগরীকে বিভিন্ন রকমারি ফুল রাঙিয়ে তুলেছে। এর মধ্যে রয়েছে চাঁপা, কাঁঠালচাঁপা, নয়নতারা, নাগেশ্বর, মনচূড়া, দোলনচাঁপা, সোনালু ইত্যাদি। চাঁপা ও কাঠালচাঁপা ফুলের মনোমুগ্ধকর গন্ধে এক নিমেশেই মন মাতোয়ারা হয়ে যায়। চাঁপা ফুল শীতকাল ছাড়া প্রায় সব সময়েই নগরীতে ফুটতে দেখা যায়। গাছের ডালের মাথায় থোকায় থোকায় সাদা রঙের বড় বড় দোলনচাঁপা ফুলের দেখা মিলছে নগরীর বিভিন্ন স্থানে। নয়নতারা ফুলগুলো দেখতে বেশ অদ্ভূত। পয়সার মতো গোলাকার। নাগেশ্বর বা নাগকেশর ফুল যে শুধু দেখতেই সুন্দর, এমন নয়। বরং বেশ সুগন্ধিও রয়েছে। এছাড়াও নগরীতে সবচেয়ে বেশি দেখা যাচ্ছে সোনালু ফুল। গ্রীষ্মের ঝাড়বাতির মতো নগরীর বিভিন্ন স্থানে ঝুলে থাকা হলুদ সোনালী রঙের ফুলগুলো চারপাশ আলোকিত করে রেখেছে। নগরীর অনেক স্থানে পাশাপাশি দুই-তিনটা গাছে সোনালু ফুল দেখে নগর বাসীর মন মনোমুগদ্ধ করে তুলছে। স্বর্ণালী রঙের সৌন্দর্য-শোভায় প্রকৃতিকে আরো নয়নাভিরাম রূপে সাজাতে বিন্দু মাত্র কার্পণ্য করেনি সোনালু ফুল।

নগরীতে ফুলের এ সৌন্দর্য অবলোকন করে ‘পুষ্প পুষ্প ভরা শাখী, কুঞ্জে কুঞ্জে গাহে পাখি, গুঞ্জরিয়া আসে অলি কুঞ্জে কুঞ্জে ধেয়ে তারা ফুলের ওপর ঘুমিয়ে পড়ে ফুলের মধু খেয়ে’ কবি দ্বিজেন্দ্র লাল রায়ের এ চরণ মনে পরে যায়।

মানুষ মাত্রই ফুলের সৌন্দর্যের পূজারী। আমাদের আবহাওয়া, জলবায়ু ও মাটি নানা প্রজাতির ফুলের জন্য বিশেষ উপযোগী। এ নগরীর মানুষের জীবনের সাথে মিশে আছে ফুলের সৌরভ। সারা বছরই নগরী বিভিন্ন ফুলে ফুলে সুশোভিত হয়। সুজলা-সুফলা, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে মুক্ত বায়ুর শহর হিসেবে পরিচিতি পেতে সবচেয়ে বড় অবদান রেখেছে এ নগরীর বিভিন্ন প্রকার ফুল ও ফুলের গাছ। এখন নগরীর ফুলগুলো পর্যটকদেরও আকর্ষিত করছে। হয়ত পর্যটক আর নগরীর মানুষকে মনোরম পরিবেশ আর চোখজুড়ানো দৃশ্যের ঝলক দেখাতেই ফুলগুলো এখনো ঝরে যায়নি।