প্রচ্ছদ আজকের সেরা সংবাদ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী: ‘দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে হয়নি’

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী: ‘দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে হয়নি’

‘দুর্নীতি দমন কমিশনের দায়িত্ব নিয়েছি আড়াই বছর। এ সময়ে দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ কিছুটা হয়েছে। তবে সার্বিকভাবে কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হয়নি। সেখানে আমাদের সংস্থার ব্যর্থতা রয়েছে।’

বুধবার দুদকের ১৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে সংস্থাটির সাফল্য-ব্যর্থতা নিয়ে মূল্যায়ন করতে গিয়ে দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ রাইজিংবিডিকে এ কথা বলেন।

২০০৪ সালের ২১ নভেম্বর দুর্নীতি দমন ব্যুরো থেকে এ কমিশনের যাত্রা শুরু হয়। দুদকের এ যাত্রায় এরই মধ্যে কমিশন গঠন ও পুনর্গঠিত হয়েছে পাঁচবার।

বিচারপতি সুলতান হোসেন খানের সমন্বয়ে গঠিত প্রথম কমিশনের যাত্রা। এরপর যথাক্রমে প্রাক্তন সেনাপ্রধান হাসান মশহুদ চৌধুরী, গোলাম রহমান ও মো. বদিউজ্জামানের পরে ২০১৬ সালের ১০ মার্চ দায়িত্ব নেন বর্তমান দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ।

ইকবাল মাহমুদের দায়িত্ব নেওয়ার পর পেরিয়ে গেছে আড়াই বছর। আজ ১৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী হলেও পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী হওয়ার কারণে আজ উদযাপন না করে আগামীকাল ২২ নভেম্বর দিনটি উদযাপন করবে দুদক। তবে গতানুগতিক অনুষ্ঠানের বাইরে নিজেদের আত্মসমালোচনামূলক একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির প্রধান।

রাইজিংবিডিকে দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেন, ‘আমরা আয়োজন করিনি, কারণ গত দুই বছর দেখলাম দুদকের আয়োজন পোশাকি একটি বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এজন্য গতানুগতিক আয়োজনের বাইরে নিজেদের মধ্যে আত্মসমালোচনামূলক একটি অনুষ্ঠান করবো আগামীকাল। আজ পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী। এ কারণে আজ আয়োজন করিনি।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি প্রতি বছর একই রকমের আয়োজন থাকবে না। এ বছর আমাদের কর্মকর্তা-কর্মচারী নিজেরা বসে আত্মসমালোচনা-আলোচনা করে নিজেদের মূল্যায়ন করবো।’

১৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে দুদকের কর্মকাণ্ড কিভাবে মূল্যায়ন করবেন- এ প্রশ্নের জাবাবে ইকবাল মাহমুদ বলেন, ‘আমি এই প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব নিয়েছি আড়াই বছর। এ সময়ে আমার বক্তব্য হচ্ছে, দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। আমাদের একার পক্ষে এ কাজ করা সম্ভব নয়। সকলের সহযোগিতা লাগবে। আমার মূল্যায়ন হচ্ছে দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ কিছুটা হয়েছে তবে সার্বিকভাবে কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হয়নি। সেখানে আমাদের সংস্থার ব্যর্থতা রয়েছে। আমাদের কর্মকর্তাদের ব্যর্থতা রয়েছে।’

নিজেদের মধ্যে গলদ রয়েছে- এমন মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করবো গলদ কিভাবে উতরানো যায়। সেজন্য আপনারা দেখেছেন আমাদের ব্যর্থতা স্বীকার করতে কখনো পিছপা হইনি। আমরা চেষ্টা করেছি। দুর্নীতি ও দায়িত্ব অবহেলার কারণে কখনো দুদকের কর্মকর্তা-কর্মচারীকে চাকরি হতে বরখাস্ত কিংবা বিভাগীয় শাস্তির মুখোমুখি হতে হয়েছে। আমরা এটা করেছি এজন্য যেন অন্যরা আমাদের মতো অন্যায়ের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেন। তাহলে কাজের গতি বাড়বে। মানুষ সরকারি যে সকল সেবা রয়েছে তা পাবে। তবে কেউ যদি আমাদের প্রতিপক্ষ ভাবে সেখানে আমাদের করণীয় কিছু নেই।’

রাষ্ট্রপতিকে দেওয়া ২০১৭ সালের বার্ষিক প্রতিবেদন অনুসারে দেখা যায়, এ সময়ে দুদকের অনুসন্ধান ও মামলার সংখ্যা কমেছে। তবে মামলায় সাজার হার বেড়েছে। ২০১৭ সালে কমিশন ১৭ হাজার ৯৫৩টি অভিযোগ গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে অনুসন্ধান শেষ করা সম্ভব হয়েছে ১ হাজার ৪৪৫টি অভিযোগের। মামলা দায়ের হয়েছে ২৭৩টি এবং চার্জশিট হয়েছে ৩৮২টি মামলায়। এ সময়ের মধ্যে ফাঁদ মামলা হয়েছে ২৪টি। গ্রেপ্তার হয়েছে ১৮২ জন। রায় হয়েছে ২৩৭টি মামলার। এ বছর দুদকের মামলার সাজার হার ৬৮ শতাংশ।