পারভেজ বাবুল :
বিশ্বে বর্তমান এবং পরবর্তীতে রাজনীতি, চক্রান্ত, ষড়যন্ত্রের মূল ইস্যু হবে করোনাভাইরাস। মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে আমেরিকা আর চীনের মধ্যে। চীনের পক্ষে থাকবে রাশিয়া। আর আমেরিকার পক্ষে থাকবে ইজরাইল।
যাহোক, করোনাইরাসে আগামীতে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা কমবে। কারণ মানুষ এখন আগের চেয়ে সচেতন। আর করোনার ভ্যাকসিনও চলে আসবে খুব শীগগীর। তাই ভয় বা অাতঙ্কের কোনো কারণ নেই। যারা বলে করোনাভাইরাস অনেকদিন থাকবে তাদের সঙ্গে একমত হওয়ার প্রয়োজন নেই, যুক্তি নেই। বরং তাদের মতামত এড়িয়ে চলুন। নিজেরা সতর্ক থাকুন।
বাংলাদেশে যে মানুষ আক্রান্ত হয়েছে, মৃত্যুবরণ করেছে– তার চেয়ে অনেক অনেক বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছে, মূত্যুবরণ করেছে উন্নত দেশগুলোতে। তাই বাংলাদেশের চেয়ে উন্নতদেশগুলোর ক্ষয় ক্ষতি হয়েছে অনেক বেশি। তবে বাংলাদেশের চেয়ে উন্নত দেশের ক্ষয়ক্ষতি পূরণ ও ঘুরে দাঁড়ানোর সক্ষমতাও অনেক বেশি। বাংলাদেশের মতো গরীব দেশের ক্ষয় ক্ষতি পূরণ ও ঘুরে দাঁড়ানোর সক্ষমতা অনেক কম, সীমিত, কারণ আমাদের সীমাবদ্ধতা অনেক।
ফলে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে ভ্যাকসিন আবিস্কারে উন্নত দেশগুলো বলা যায় তীব্র প্রতিযোগিতায় লিপ্ত। কার আগে কে ভ্যাকসিন আবিষ্কার করবে সেই লক্ষ্যে পৃথিবীতে একশোটির বেশি দেশ একশোটির বেশি ভ্যাকসিন সামনে নিয়ে কাজ করছে। বড় বড় দাতা সংস্থা বড় বড় ডলারের/ টাকার বস্তা নিয়ে বসে আছে ভ্যাকসিন গবেষণায় অর্থের জোগান দিতে। দিচ্ছেও। জনাব বিল গেটস দিচ্ছেন প্রচুর টাকা। আমেরিকায় তাঁর দাতব্য প্রতিষ্ঠান এর নাম: Bill and Melinda gates Foundation.
তবে আমরা চাইলেই, ইচ্ছে করলেই করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুহার কমাতে পারি। যেমন, মানুষ ঘরে বাইরে কাজ কর্মের পাশাপাশি শুধু যদি স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলতো তাহলেই আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা অনেক কম হতো। তদুপরি, কেউ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলেও ঘরেই আইসলেশনে থেকে চিকিৎসা নিলে, স্বাস্থ্যবিধি নিয়মনীতি মানলে সুস্থ হয়ে যেতো। আমাদের সব কিছুতেই অবহেলা। তাই অনেক সময় আমরা নিজেদের দোষেও রোগে আক্রান্ত হই, নিজেদের দোষেও মরি!
যাহোক এবার দেখি প্রথম বিশ্ব যুদ্ধে কতো লোক নিহত হয়েছে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে নিহত হয়েছে বিশ মিলিয়ন/দুই কোটি মানুষ! ১৯১৩ সালে বিশ্ব যুদ্ধ শুরুর আগে আগে পৃথিবীর লোক সংখ্যা ছিলো ১.৭৯১ বিলিয়ন/ প্রায় দুই বিলিয়ন/ দুইশো কোটি। যুদ্ধে নিহত হয়েছিলো মোট জনসংখ্যার ০.৮৪ / 0.84 শতাংশ।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিহত হয়েছিলো ৮৫ মিলিয়ন/ সাড়ে আট কোটি মানুষ। তখন ১৯৪০ সালে পৃথিবীর লোক সংখ্যা ছিলো ২.৩ / 2.3 বিলিয়ন / দুইশো তিরিশ কোটি। মোট জনসংখ্যার অনুপাতে যুদ্ধে নিহত হয়েছিলো তিন শতাংশ মানুষ!
বর্তমানে পৃথিবীর লোক সংখ্যা সাতশো কোটির বেশি। করোনায় মৃত্যু — দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মৃত্যুর চেয়ে এখনো অনেক কম। তাই করোনাভাইরাসের চেয়ে যুদ্ধের ক্ষয়ক্ষতি ও ভয়াবহতা বেশি। করোনা হলে সেরে যায়, যুদ্ধের ক্ষত সারে না। আমেরিকার হাইড্রোজেন বোমায় ক্ষতিগ্রস্ত জাপানের হিরোসিমা নাগাসাকির কথা মনে আছে? সেখানে এতো বছর পরেও এখনো মানুষের জীবন স্বাভাবিক হয়নি!
তাই আজ হোক কাল হোক ভ্যাকসিনের দাপটে করোনাভাইরাস চলে যাবে / পালিয়ে যাবে। তবে তারপর শুরু হবে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা! চারিদিকে যুদ্ধ!
অতএব, করোনাকালের পরে আমাদের প্রধান কাজ হবে যুদ্ধের বিরুদ্ধে সংগ্রাম আন্দোলন। যুদ্ধের বিরুদ্ধে যুদ্ধ। কারণ আমরা যুদ্ধ চাইনা, শান্তি চাই। বাঁচার মতো বাঁচতে চাই। তবে শুধু আমরাই বেঁচে থাকলে চলবে না। আমাদের আগামী, পরবর্তী প্রজন্মের জন্য সুন্দর শান্তির একটি পৃথিবী অবশ্যই রেখে যেতে হবে।
লেখক : সাংবাদিক, কবি ও কলামিষ্ট