প্রচ্ছদ অর্থনীতি ‘পাটশিল্পে লোকসানে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে পাটকল বন্ধের সিদ্ধান্ত’

‘পাটশিল্পে লোকসানে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে পাটকল বন্ধের সিদ্ধান্ত’

বিডি রিপোর্ট টোয়েন্টিফোর ডটকম :

পাটশিল্প থেকে এক সময় সবচেয়ে বেশি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন হতো। পাট কে বলা হতো সোনালী আঁশ। সুসময় বিদায় নিলেও এখনো প্রায় ৫০ লাখ কৃষক পাট চাষে জড়িত।  

দেশে ১৫৭টি পাটকলের মধ্যে সরকারি ২৫টি আর বেসরকারি মালিকানাধীন ১২৭টি। বেসরকারি পাটকলে লোকসানের নজির না থাকলেও ক্রমাগত ক্ষতির মুখে সরকারি পাটকলের প্রায় ২৫ হাজার শ্রমিককে স্বেচ্ছা অবসরে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয় বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়।  করোনাভাইরাসের এই সংকটময় মুহূর্তে পাটকল বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

তবে যাদের কারণে ঐতিহ্যবাহী পাটশিল্প লোকসানি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হলো, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে পাটকল বন্ধের সিদ্ধান্তকে দুঃখজনক বলছেন বিশেষজ্ঞরা। সরকারের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছে পাট শ্রমিকদের সংগঠনগুলো। বিজিএমসির চেয়ারম্যান এর দাবী লোকশানের বোঝা আর না বাড়াতে এই সিদ্ধান্তের বিকল্প ছিল না।

বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গাজী গোলাম দস্তগীর বলেন, আমাদের সরকার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। শ্রমিকদের বিষয়টি মাথায় আছে।  
  
সরকারি পাটকলের ক্ষতির জন্য ব্যবস্থাপনার ত্রুটিকে দায়ী করেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেন অসময়ে বেশী দামে পাট কিনে লোকসানের বোঝা বাড়ানো হয়েছে। 
বাংলাদেশ জুট অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক চেয়ারম্যান রেজাউল করিম বলেন, ব্যবস্থাপনার মধ্যে দুর্নীতি তো থাকেই। আমাদের মধ্যে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী আছি, যারা সুযোগ নিয়ে থাকি।

যারা বেসরকারি জুট মিল ১০০ লেবার দিয়ে চালাই, সরকারি জুট মিলে দেখা যায় তিন শত লেবার নিয়োগ দেয়া আছে। ওখানে তখন খরচ বেড়ে যায়।

বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, বিজেএমসির মাথাভারী প্রশাসন, আর দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের কারণে পাটশিল্প লোকসানি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। এই যে বলা হচ্ছে, তাদের এক কালীন ১২ লাখ টাকা দেয়া হবে। এটা আদৌ দেয়া হবে কিনা, তারা পাবে কিনা সন্দেহ।

অতীত অভিজ্ঞতা বলছে, আগে যখন জুট মিল বন্ধ হয়েছিল কেউ টাকা পায়নি।সিবিএ নন সিবিএ সংগ্রাম পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক মুরাদ হোসেন বলেন, শ্রমিকদের এক বিন্দু রক্ত থাকতে আমরা পাটকল বন্ধ করতে দেবো না। সরকারের এই আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত বন্ধ না হলে আমরা আমরণ অনশনে বসবো। বকেয়া পরিশোধ না করে, করোনার এই দুর্যোগে মিল বন্ধের সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ শ্রমিকরা।  নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিজেএমসি বলছে স্বাধীনতার পর থেকে ক্রমাগত লোকশানের মুখ রয়েছে এই শিল্প।  
বিজেএমসির চেয়ারম্যান অবদুর রউফ বলেন, ৫০ বছরের ৪০ বছরেই লোকশান হয়েছে। ৪ বছরে সামান্য লাভ হয়েছে। শ্রমিক ও ম্যানেজমেন্টদের দোষারোপ করে লাভ নাই। কারণ মেশিনের ক্ষমতা ৫০ শতাংশ কমে গেছে। সমস্যার শেষ নাই, রিমডেলিং ছাড়া এই অবস্থা রেখে বের হবার আর পথ নাই। দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের ছাঁটাই আর অনিয়ম দূর করতে পারলে সম্ভাবনাময় এই শিল্পটিকে বাঁচানো সম্ভব বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।