প্রচ্ছদ সারাদেশ খুলনা বিভাগ নড়াইলে কমছে গমের আবাদ

নড়াইলে কমছে গমের আবাদ

উজ্জ্বল রায়, নড়াইল জেলা প্রতিনিধি : নড়াইল জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৫-১৬ মৌসুমে নড়াইলে গমের আবাদ হয়েছিল ৬ হাজার ৩০২ হেক্টর জমিতে। পরের বছরই তা কমে ৪ হাজার ১২৪ হেক্টরে নেমে যায়। ২০১৭-১৮ মৌসুমে জেলায় গম আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৪ হাজার ১২৪ হেক্টর। কিন্তু আবাদ হয় মাত্র ১ হাজার ৩৭০ হেক্টরে। চলতি মৌসুমেও নড়াইলে গম আবাদের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি। এ বছর নড়াইল জেলার তিনটি উপজেলা মিলিয়ে গম আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ৪ হাজার ১১৫ হেক্টর। সেখানে আবাদ হয়েছে মাত্র ১ হাজার ৩৩০ হেক্টর জমিতে। অর্থাৎ লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ৬৭ শতাংশ কম জমিতে গম চাষ করেছেন কৃষকরা। এ নিয়ে পরপর দুই বছর লক্ষ্যমাত্রার ধারে কাছেও যায়নি গমের আবাদ। নড়াইলে একসময় প্রচুর পরিমাণে গমের আবাদ হতো। কিন্তু নানা কারণে এ ফসলটি চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন কৃষকরা। ফলে আশঙ্কাজনক হারে কমছে আবাদ। কৃষি বিভাগের হিসাবেই সর্বশেষ চার বছরের মধ্যে নড়াইল জেলায় গমের আবাদ ৭৯ শতাংশ কমেছে! গমের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর ব্লাস্ট রোগ মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় সাতটি জেলায় গম চাষে কৃষকদের নিরুৎসাহিত করে আসছে কৃষি বিভাগ। এর মধ্যে নড়াইল জেলা পড়ে না। তারপরও কেন গম আবাদ ব্যাপকভাবে কমে যাচ্ছে, তার কারণ অনুসন্ধানে কৃষকদের সঙ্গে আলাপে জানা যায়, মূলত গমে ব্লাস্টসহ নানা রোগবালাই বেড়ে যাওয়া, সময় বেশি লাগা এবং দাম কমে যাওয়াই ফসলটি আবাদে কৃষকদের নিরুৎসাহিত হওয়ার প্রধান কারণ। নড়াইলের তালতলা এলাকার কৃষক রকিম শেখ জানান, এক মণ গম উৎপাদন করতে ৬০০-৭০০ টাকা খরচ হয়। আর ভরা মৌসুমে বাজারে বিক্রি হয় মাত্র ৬০০ থেকে সাড়ে ৬০০ টাকা। সরকারিভাবে যখন কেনা হয়, তখন কৃষকদের হাতে গম থাকে না। ফলে বারবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন কৃষকরা। নড়াইলের কৃষকরা আরো জানান, বাজারে গমের চেয়ে ধানের দাম বেশি। তাছাড়া গম চাষ করলে সে জমিতে বোরো চাষের সময় পেরিয়ে যায়। অথচ আগাম আলু বা সরিষা চাষ করলে ফসল সংগ্রহের পর সে জমিতে সময়মতোই বোরো চাষ করা যায়। অর্থাৎ গম চাষ করলে জমিতে ফসলের নিবিড়তা কমে। এ কারণে গমের স্থলে অন্যান্য ফসল আবাদে ঝুঁকছেন কৃষক। নড়াইলের কালিয়া উপজেলার বাবরা গ্রামের একাধিক কৃষক জানান, এলাকায় একসময় প্রত্যেক কৃষক গমের আবাদ করতেন। এখন আর তেমন হয় না। কারণ দিন দিন গমের ফলন কমে যাচ্ছে। রোগবালাই বেড়ে গেছে। এ ব্যাপারে নড়াইল জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক চিন্ময় রায় জানান, এ বছর নড়াইলে গম আবাদ কমে যাওয়ার কারণ অসময়ে বৃষ্টি। চলতি মৌসুমে নভেম্বরে প্রচুর বৃষ্টিপাত হওয়ায় জমিতে অতিরিক্ত রস থাকার কারণে কৃষক বীজ বুনতে পারেননি। এছাড়া ব্লাস্ট রোগের কারণেও গমের আবাদ কমছে। তবে কৃষি বিভাগ গম আবাদে কৃষকদের উৎসাহিত করতে নানা কর্মসূচি নিয়েছে বলে জানান এ কৃষি কর্মকর্তা।