প্রচ্ছদ আর্ন্তজাতিক দুই রাষ্ট্র সমাধানের বিকল্প নেই: ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রদূত

দুই রাষ্ট্র সমাধানের বিকল্প নেই: ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রদূত

জাতিসংঘে নিযুক্ত ফিলিস্তিনের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত রিয়াদ মনসুর বলেছেন, মধ্যপ্রাচ্য শান্তিপ্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন—এই দুই রাষ্ট্র গঠনের কোনো বিকল্প নেই। জাতিসংঘসহ সব আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এই ‘দুই রাষ্ট্র সমাধানের’ পক্ষে স্পষ্ট রায় দিয়েছে।

গতকাল মঙ্গলবার রাষ্ট্রদূত মনসুর নিউইয়র্কে প্রথম আলোর প্রতিনিধিকে এই কথা বলেন।

১৯৪৭ সালে জাতিসংঘের পরিকল্পনায় ঐতিহাসিক ফিলিস্তিনকে বিভক্ত করে ইহুদি রাষ্ট্র ইসরায়েল ও আরব রাষ্ট্র ফিলিস্তিন গঠনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সম্প্রতি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের জামাতা জ্যারেড কুশনার বলেছেন ‘দুই রাষ্ট্র সমাধান’ নামে পরিচিত ফর্মুলা মৃত। এই ফর্মুলা অনুসরণ করে এ পর্যন্ত মধ্যপ্রাচ্য শান্তি প্রতিষ্ঠার যতগুলো উদ্যোগ গৃহীত হয়েছে, কুশনারে মতে তার সবই ব্যর্থ হয়েছে।

এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে রাষ্ট্রদূত মনসুর বলেন, ‘কুশনার ঠিক কী চায়, তা আমরা জানি না। হোয়াইট হাউস থেকে নানা সময় নানা কথা শোনা গেছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নিজে একবার দুই রাষ্ট্র সমাধানের পক্ষে মত দিয়েছেন। অন্য সময় বলেছেন, উভয় পক্ষ যে সমাধানে সম্মত হবে, তাতেই তিনি সম্মতি দেবেন। আমরা তাঁর কাছ থেকে এখনো স্পষ্ট কিছু শুনতে পাইনি।’

গত মাসে নিউইয়র্কে টাইম ম্যাগাজিন আয়োজিত এক ফোরামে কুশনার বলেন, তিনি যে শান্তি প্রস্তাব চূড়ান্ত করছেন, তা মূলত উন্নয়নমুখী। ফিলিস্তিনি জনগণকে উন্নততর জীবনের নিশ্চয়তা প্রদান তাঁর এই প্রস্তাবের মূল লক্ষ্য। একে একটি ‘বিজনেস প্ল্যান’ উল্লেখ করে কুশনার বলেন, তাঁর প্রস্তাব বাস্তবায়িত হলে উভয় দেশের জনগণের জীবনেরই গুণগত মান উন্নীত হবে। ফোরামে অংশগ্রহণকারী একজন সাংবাদিক একে ‘অর্থনৈতিক শান্তি পরিকল্পনা’ নামে অভিহিত করলে কুশনার তাতে সম্মতি দেন।

এই পরিকল্পনার বিষয়ে তাঁর প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে রাষ্ট্রদূত মনসুর বলেন, ‘ইসরায়েল ও আমেরিকার প্রতিটি পদক্ষেপ থেকে এ কথা মোটেই মনে হয় না যে তারা ফিলিস্তিনি জনগণের জীবনের মানোন্নয়নে উৎসাহী। বরং উল্টো, তারা একের পর এক এমন সব ব্যবস্থা নিয়েছে, যার লক্ষ্য ফিলিস্তিনি জনগণকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া। বস্তুত আমরা এখন ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে রয়েছি।’

সম্প্রতি ইসরায়েল ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষকে তাদের উপার্জিত কর হস্তান্তর করতে অস্বীকার করায় সেখানে অর্থনৈতিক সংকট চরমে পৌঁছেছে। এই অর্থের একটা অংশ ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ ইসরায়েলে অন্তরীণ ফিলিস্তিনি রাজনৈতিক বন্দীদের পরিবারের মধ্যে বণ্টন করে থাকে। ইসরায়েলের তাতে আপত্তি করেছে। তারা বন্দী ফিলিস্তিনিদের পরিচর্যায় ব্যয় করা অর্থ বাদ দিয়ে উপার্জিত করের অবশিষ্টাংশ ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষকে দিতে প্রস্তুত। কিন্তু প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস বলেছেন, তিনি এই প্রস্তাবে সম্মত নন। তাদের উপার্জিত করের পুরোটাই ফেরত দিতে হবে বলে তিনি দাবি করেছেন।

রিয়াদ মনসুর বলেন, যুক্তরাষ্ট্র যদি ফিলিস্তিনি জনগণের কল্যাণ চায়, তাহলে তাদের উচিত হবে এই অর্থের পুরোটা ফিরিয়ে দিতে ইসরায়েলের ওপর চাপ সৃষ্টি করা। তিনি মন্তব্য করেন, এ পর্যন্ত ট্রাম্প প্রশাসন যা করেছে, তার একটাই লক্ষ্য, আর তা হলো ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর সরকারকে সমর্থন করে যাওয়া।

রিয়াদ মনসুরের কথা, এই সরকারের জন্য উপহার হিসেবে ট্রাম্প প্রশাসন জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। তারা গোলান মালভূমির ওপর ইসরায়েলের সংযুক্তি মেনে নিয়েছে। নেতানিয়াহু বলেছেন, পশ্চিম তীরে ইহুদি বসতিসমূহ তিনি ইসরায়েলের মূল ভূখণ্ডের অন্তর্ভুক্ত করে নেবেন। সেটির স্বীকৃতি হবে ইসরায়েলের জন্য ট্রাম্প প্রশাসনের আরেক উপহার।

রাষ্ট্রদূত মনসুর জানান, জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে ট্রাম্প প্রশাসনের স্বীকৃতির পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তাদের সরাসরি কোনো অর্থপূর্ণ যোগাযোগ নেই। এই অচলাবস্থা এই মুহূর্তে পরিবর্তিত হবে না বলেই তিনি মনে করেন।

রিয়াদ মনসুর বলেন, ‘আমরা সবাই এখন ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে আছি।’