প্রচ্ছদ সারাদেশ বরিশাল বিভাগ ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’, বরিশালে নৌযান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি

ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’, বরিশালে নৌযান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি

সুপার সাইক্লোন ‘ফণী’র প্রভাবে জানমালের সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে উদ্বেগ-উৎকন্ঠা বিরাজ করছে উপকূলীয় এলাকা বরিশালে। এর আগে সিডর-আইলাসহ বিভিন্ন সময় দুর্যোগে জানমালের ব্যাপক ক্ষতি হওয়ায় ঘূর্ণিঝড়ের খবরেই আতকে ওঠে এ অঞ্চলের মানুষ। এখন করণীয় নিয়ে দুশ্চিন্তা তাদের।

এদিকে ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবের জানমালের ক্ষতির আশংকায় সকালে বরিশাল নদী বন্দর থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সকল ধরনের নৌযান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বরিশাল বিআইডব্লিউটিএ’র ট্রাফিক পরিদর্শক মো. কবির হোসেন।

আকস্মিক নৌযান চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চরম বেকায়দায় পড়েছেন বরিশালের নৌপথের যাত্রীরা। গন্তব্যে যেতে না পাড়ায় বরিশাল নদী বন্দরে আটকা পড়েছে কয়েকশ’ যাত্রী।

ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচী (সিপিপি) বরিশালের উপ-পরিচালক মো. আব্দুর রশিদ জানান ঘূর্ণিঝড় ‘ফনী’ আঘাত হানলে সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে এবং মানুষকে নিরাপদে আশ্রয় যেতে মাইকিং করছে বরিশাল ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচীর ২৫ হাজার ৫জন কর্মী। ইতিমধ্যে তারা উপকূলীয় এলাকায় পতাকা টাঙিয়ে জনগনকে সতর্ক করেছে। কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।

বরিশাল ফায়ার সার্ভিস সিভিল ডিফেন্সের সহকারী পরিচালক আব্দুল হামিদ জানান, ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাব মোকাবেলায় সার্বিক প্রস্তুতি গ্রহন করা হয়েছে। কনটিনজেন্ট পরিকল্পনা করে ফায়ার সার্ভিসের প্রতিটি ইউনিটের ছুটি বাতিলসহ সবাইকে স্ট্যান্ডবাই ডিউটি দেওয়া হয়েছে। যেসব জায়গায় ক্ষয়ক্ষতি বেশী হতে পারে সেসব সম্ভাব্যতা যাচাই করে তাদের কর্মীদের প্রস্তুত রাখার পাশাপাশি যাবতীয় উদ্ধার সরঞ্জাম প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

অপরদিকে ঘূর্ণিঝড় ‘ফনী’র প্রভাব মোকাবেলায় বৃহস্পতিবার সকালে জরুরী সভা করে বরিশাল জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থপনা কমিটি। জেলা প্রশাসনের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত সভায় উপজেলা এবং ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত সতর্ক বার্তা পৌঁছে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।

সভা শেষে জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমান জানান, আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত পাওয়ায় জনগননের নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য জেলার ২৩২টি সাইক্লোন শেল্টার প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এছাড়াও সকল স্কুল কলেজ মাদ্রাসা এবং ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ভবনেও বিপদগ্রস্থ জনগনকে আশ্রয় দিতে বলা হয়েছে। উদ্ধার তৎপরতার জন্য রেড ক্রিসেন্ট, ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ সহ সকল বিভাগকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ৮২টি ইউনিয়নে মেডিকেল টিম গঠন সহ ২৮১টি কমিউনিটি ক্লিনিক, ৯টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, বরিশাল জেনারেল হাসপাতাল এবং শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল প্রস্তুত রাখা হয়েছে। শুকনা খাবার, পানি বিশুদ্ধকরন ট্যাবলেট ও স্যালাইন প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সরকারের সকল সংস্থাকে সাথে নিয়ে ‘ফনী’র বিরূপ প্রভাব মোকাবেলায় জেলা প্রশাসন পুরোপুরি প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক।

বরিশাল আবহাওয়া অফিসের সিনিয়র অবজারভার প্রনব কুমার রায় জানান, নিরক্ষীয় ভারত মহাসাগরে সৃস্ট লঘুচাপ এখন অতিপ্রবাল ঘূর্ণিঝড়ে পরিনত হয়েচে।  সকাল ৯টায় ‘ফনী’ পায়রা সমূদ্র বন্দর থেকে ৯২৫ কিলোমিটার দক্ষিন-পশ্চিমে অবস্থান করছিলো। শুক্রবার সন্ধ্যা নাগাদ ‘ফনী’ ভারতের উড়িষ্যা, পশ্চিমবঙ্গ হয়ে বাংলাদেশের দক্ষিন-পশ্চিমাঞ্চলে আঘাত হানতে পারে। এরপর ভারী বৃস্টি এবং ঝড়ো হাওয়ার মাধ্যমে বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চলে যেতে যেতে ‘ফনী’ দুর্বল হয়ে যাবে বলে ধারনা করছে আবহাওয়া বিভাগ।

তিনি আরও জানান, ঘূর্ণিঝড় ‘ফনী’ ৭৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ১৬০ কিলোমিটার। যা দমকা ও ঝড়ো হাওয়া আকারে সর্বোচ্চ ১৮০ কিলোমিটার বেগে বয়ে যেতে পারে। ‘ফনী’র প্রভাবে পায়রা এবং মংলা সমূদ্র বন্দরে জারী করা হয়েছে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত। অভ্যন্তরীণ নদী বন্দরে ১ নম্বর সংকেত জারি করা হলেও সকল ধরনের নৌযান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।

এছাড়া ‘ফনী’র প্রভাবে দক্ষিন-পশ্চিমাঞ্চলের উপকূলীয় এলাকায় স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৪ থেকে ৫ ফুট উচু জলোচ্ছাস হতে পারে বলে ধারণা করছেন তারা।