প্রচ্ছদ আজকের সেরা সংবাদ ‘গণতান্ত্রিকভাবে সংসদ গঠনের লক্ষ্যে জনগণকে ঝুঁকি নিতে হবে’

‘গণতান্ত্রিকভাবে সংসদ গঠনের লক্ষ্যে জনগণকে ঝুঁকি নিতে হবে’

প্রবীণ রাজনীতিবিদ ও গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন প্রকৃত গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত একটি সংসদ গঠনের লক্ষ্যে জনগণকে ঝুঁকি নেওয়ার আহবান জানিয়েছে। রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের আবদুস সালাম মিলনায়তনে রবিবার গণফোরাম আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই আবহান জানান।

এসময় তিনি বলেন, মহাসংক‌টের মধ্য দি‌য়ে জাতি‌কে এগি‌য়ে যে‌তে হ‌চ্ছে। স্বাধীনতার ৫০ বছর পূ‌র্তি হ‌তে চ‌লে‌ছে। কিন্তু দেশে আকা‌ঙ্খিত গণতন্ত্র নেই। এজন্য আমা‌দের আন্দোলন কর‌তে হ‌বে। এ দে‌শের জনগ‌ণের আন্দোল‌নের ইতিহাস আ‌ছে। নিজেদের মালিকানা প্রতিষ্ঠায় তা‌দের এ‌গি‌য়ে আস‌তে হ‌বে, ঝুঁ‌কি নি‌তে হ‌বে। ৩০ ডিসেম্বরের মতো নির্বাচন নয়, এদেশের জনগণের ভোটে গণতা‌ন্ত্রিকভা‌বে নির্বা‌চিত সংসদ সদস্য‌দের নি‌য়ে সংসদ গ‌ঠিত হ‌তে হ‌বে। সেই গণতন্ত্র প্র‌তিষ্ঠার লড়াই‌য়ে জনগণ‌কে স‌ঙ্গে পে‌লে আমরা ঝুঁ‌কি নেব। তাহলে এই আন্দোলনও সফল হ‌বে।

এর আগে গণফোরামের পুর্ণগঠিত ১১১ সদস্য বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়। কমিটিতে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে গণফোরামে যোগ দেওয়া  আওয়ামী লীগের সাবেক অর্থমন্ত্রী এ এস এম কিবরিয়ার ছেলে ড. রেজা কিবরিয়াকে দলের সাধারণ সম্পাদক ও আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক তথ্যপ্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক ড. আবু সাইয়িদকে দলের নির্বাহী সভাপতি ঘোষণা করা হয়।

সংসদে যোগ দেওয়া গণফোরামের এমপি মোকাব্বির খানকে দলের প্রেসিডিয়ামের সদস্য পদে বহাল রাখা হয়। ২০০৯ সাল থেকে দায়িত্ব পালন করে আসা দলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক  মোস্তফা মহসীন মন্টুকে দলের নির্বাহী কমিটির এক নম্বর সদস্য রাখা হয়। তবে সংবাদ সম্মেলনে তিনি অনুপস্থিত ছিলেন। সাংবাদিকদের মধ্যে বিতরণকৃত কমিটির তালিকায় কোষাধ্যক্ষ, প্রচার, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদকসহ একাধিক পদাধিকারীর নাম খালি ছিল।

সংবাদ সম্মেলনে গণফোরাম এবং জাতীয় ঐক্য ফ্রন্টের এম‌পি‌দের সংস‌দে যোগ ‌দেওয়া প্রস‌ঙ্গে সাংবাদিকরা বারবার জান‌তে চাই‌লে এ বিষ‌য়ে ড. কামাল প‌রে বল‌বেন ব‌লে এ‌ড়ি‌য়ে যান। এসময় দ‌লের দুই নির্বাহী সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পরামর্শ  করে ড. রেজা কিব‌রিয়াকে জবাব দেওয়ার জন্য মাইক দেন। তিনি ব‌লেন, দে‌শের বড় সমস্যা গণতন্ত্রহীনতা। আপনারা ‌সেখান থে‌কে স‌রে যে‌তে চাইছেন। ৫ জন সংস‌দে যোগ দেওয়াকে ফোকাস করতে চাইছেন। এটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। ৫ জন সংস‌দে যোগ দেওয়া সংসদ বৈধ হ‌য়ে যা‌বে না।

এসময় মুকা‌ব্বির খান প্রস‌ঙ্গে বাংলা‌দেশ প্র‌তি‌দি‌নের প্র‌শ্নের জবা‌বে ড. রেজা কিবরিয়া ব‌লেন, তিনি কারণ দর্শা‌নোর নো‌টি‌শের জবাব দিয়েছেন, তার জবা‌বে আমরা সন্তুষ্ট। এজন্য তি‌নি ক‌মি‌টি‌তে র‌য়ে‌ছেন। এসময় তিনি আরও বলেন, সুলতান মুহাম্মদ মনসুর আহ‌মেদ‌কে আগের ক‌মি‌টি ব‌হিস্কার ক‌রে‌ছে। এখন তি‌নি দ‌লে ফির‌তে চাইলে আবেদন কর‌তে হবে। বিষয়টি দল বি‌বেচনা করে দেখ‌বে।

এর আগে দল সাধারণ সম্পাদক রেজা কিবরিয়া সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন। সেখানে তিনি দলের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে যেন দল ও দেশের মানুষের আশা পূরণ করতে পারেন, সেজন্য সবার দেয়া চান। তিনি বলেন, আমার পিতা শহীদ এ এস এম কিবরিয়া বলেছিলেন, ‘সবচেয়ে গরিব দেশে সবচেয়ে গরীব মানুষের স্বার্থ রক্ষা করা খুব কঠিন কাজ। এ সময় তিনি দেশে দিন দিন অর্থনৈতিক বৈষম্য বেড়ে যাচ্ছে বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, এদেশে দারিদ্রতা যেন একটা অপরাধ, যার জন্য নির্দোষকে শাস্তি দেওয়া হয়। যারা তাদের বাচ্চাকে দুই বেলা খাবার দিতে পারে না, তাদের কাছে উন্নয়নের জোয়ার ও প্রবৃদ্ধি হার বাড়ানোর কথা রূপকথার মতো লাগে। এসময় তিনি স্বাধীনতা, ন্যায় বিচার এবং সকলের জন্য সমান সুযোগকে দলের নীতি হিসেবে তুলে ধরেন।

ড. রেজা কিবরিয়া বলেন, জনগণকে এই দেশের মালিকানা ফেরত নিতে হবে। এই মুহূর্তে দেশের সাধারণ মানুষ সরকারকে ভয় পায়। দেশে গণতান্ত্রিক অধিকার বিলুপ্ত প্রায়। ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে ভোটের প্রশ্নে সারা পৃথিবীরে সামনে প্রমাণিত হয়ে প্রকৃত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা আমাদের দেশে নেই। ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনতে হবে। মত প্রকাশের স্বাধীনতা জনগণকে দিতে হবে।  এসব উদ্দেশ্যে ও গণতন্ত্র পুণরুদ্ধারে গণফোরাম নেমেছে। এটা সবার লড়াই। এই লড়াইয়ে গণমাধ্যমের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।

সংবাদ সম্মেলনে দলের অপর নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকে সুব্রত চৌধুরী, প্রেসিডিয়াম সদস্য মেজর জেনারেল (অব:) আমসা আমিন, অ্যাড. জগলুল হায়দার আফ্রিক, আওম শফিকুল্লাহ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মুশতাক আহমদ প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন।