প্রচ্ছদ হেড লাইন কোয়ারেন্টিন শর্ত না মানলে কারাদণ্ডের হুঁসিয়ারি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের

কোয়ারেন্টিন শর্ত না মানলে কারাদণ্ডের হুঁসিয়ারি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের

করোনাভাইরাসকে বিশ্বব্যাপী মহামারি ঘোষণা করার পর এই রোগটি মোকাবেলায় সংক্রামক রোগ সংশ্লিষ্ট একটি আইনের প্রয়োগের দিকে নজর দিয়েছে বাংলাদেশ। এই আইনের বিধান না মানলে তিন মাস পর্যন্ত কারাদণ্ড অথবা ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা কিংবা উভয় দণ্ড হতে পারে।

এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ‘সংক্রামক রোগ (প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল) আইন, ২০১৮’ প্রয়োগের ঘোষণা দিয়ে একটি গণবিজ্ঞপ্তিও জারি করেছে।ওই গণবিজ্ঞপ্তি জারির কারণ হিসেবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলেছে, বিদেশ থেকে আসা অনেক প্রবাসী এবং তাদের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিবর্গ কোয়ারেন্টিনের শর্ত ঠিকভাবে পালন করছেন না এবং তারা অনেকের সংস্পর্শেও যাচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এসব ক্ষেত্রে নিয়ম না মানলে এবং নির্দেশিত পন্থায় যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন না করলে এই আইনের আওতায় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে সতর্ক করে দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

এই আইনের অধীনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বসতবাড়ি, হাসপাতাল-ক্লিনিক বা অন্য যেকোন স্থানে কোন করোনা রোগী বা সংক্রামক রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির সন্ধান পেলে সেখানে পরিদর্শন করাসহ বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করতে পারে। এমনকি সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে কোন নির্দিষ্ট হাসপাতাল, অস্থায়ী হাসপাতাল, স্থাপনা বা বাড়িতেই কোয়ারেন্টিন কিংবা আইসোলেশনে রাখতে পারে।

তাছাড়া প্রয়োজনে দেশের ভেতরে বাস, ট্রেন, লঞ্চ, প্লেন ইত্যাদি যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ করতে পারে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। তাৎক্ষণিকভাবে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে এবং ওই স্থানে অন্য কোন ব্যক্তির প্রবেশ নিষিদ্ধ, সীমিত বা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। আর আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে যদি অন্য কোন ব্যক্তির সংক্রমণের আশঙ্কা থাকে, তাহলে তাকে সাময়িকভাবে অন্য যেকোন স্থানে স্থানান্তর বা জন বিচ্ছিন্নও করা হতে পারে।

‘সংক্রামক রোগ (প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল) আইন, ২০১৮’ এর আওতায় করোনাভাইরাসের ক্ষেত্রে কোন কোন বিষয় না মানলে একজন ব্যক্তি এই আইনের চোখে অপরাধী হতে পারেন – সেটিও ব্যাখ্যা করা হয়েছে ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

আইন অনুযায়ী, কোন অস্থায়ী বাসস্থানের বা আবাসিক হোটেল ও বোর্ডিং-এর মালিক যদি জানতে পারেন যে তার ওই স্থানে থাকা কেউ এই সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হয়েছেন, তবে অবশ্যই সিভিল সার্জন ও জেলা প্রশাসককে জানাতে হবে। ডাক্তারদের ক্ষেত্রে একই নিয়ম মানতে হবে। অর্থ্যাৎ তার অধীনে কোন সংক্রামক রোগী চিকিৎসা হলে, সিভিল সার্জনকে রোগী সর্ম্পকে সব ধরনের তথ্য দিতে হবে।

এদিকে কোন যানবাহনে সংক্রামক জীবাণুর উপস্থিতি রয়েছে বলে যদি কোন তথ্য থাকে, তাহলে সেটিকে ওই গাড়ীর মালিক বা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে সেটি জীবাণুমুক্ত করার নির্দেশ দিতে পারে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। তবে করোনাভাইরাস বা কোন সংক্রামক রোগে কেউ মারা গিয়েছে – এমন সন্দেহ হলে অবশ্যই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাথে যোগাযোগ করতে হবে। তার দাফন বা সৎকারের ক্ষেত্রেও ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মচারীর নির্দেশনা মানতে হবে।

আইনটিতে বলা হচ্ছে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের কোন কাজে যদি কেউ বাধা দেন বা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেন, অথবা কেউ যদি তাদের নির্দেশ না মানেন, তাহলে সেটি অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে। আর এই অপরাধের শাস্তি তিন মাসের জেল, বা অনুর্দ্ধ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা কিংবা উভয় দণ্ড হতে পারে।

অন্যদিকে সঠিক তথ্য থাকার পরেও যদি কেউ সেটি গোপন করেন বা ইচ্ছাকৃতভাবে মিথ্যা ও ভুল তথ্য দেন – সেটিও অপরাধের মধ্যে পড়বে। এক্ষেত্রে ওই ব্যক্তির দুই মাসের জেল, বা ২৫ হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ড হতে পারে। গণবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, এই আইনের অধীন সংঘটিত কোন অপরাধের অভিযোগ দায়ের, তদন্ত, বিচার ও আপীল নিস্পত্তির ক্ষেত্রে ফৌজদারী কার্যবিধির বিধানগুলো প্রযোজ্য হবে। সূত্র : বিবিসি