প্রচ্ছদ শিক্ষাঙ্গন কেন্দ্রীয় কমিটিতে রাবি ছাত্রলীগের সাবেক দুই বিতর্কিত নেতা

কেন্দ্রীয় কমিটিতে রাবি ছাত্রলীগের সাবেক দুই বিতর্কিত নেতা

হাসান মাহমুদ, রাবি: গত সোমবার (১৩ মে) ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সংসদের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণাকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। এ কমিটিকে বিতর্কিত আখ্যা দিয়ে তা ভেঙে নতুন কমিটি দেওয়ার দাবি জানায় পদবঞ্চিতরা।

এদিকে কেন্দ্রীয় কমিটিতে পদ পাওয়া রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয়ের (রাবি) সাবেক দুই ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে কমিটিতে থাকা নিয়ে নানা ধরনের অভিযোগ উঠেছে। এই দুই সাবেক নেতা হলেন, সহ-সভাপতি পদে খালেদ হাসান নয়ন এবং সহ-সম্পাদক পদে শরিফুল ইসলাম সাদ্দাম।

গত বৃহস্পতিবার (১৬ মে) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে ৯৯ জনকে বিতর্কিত দাবি করে নাম প্রকাশ করেছে পদবঞ্চিতরা। এই ৯৯ জনের একজন রাবি শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি খালেদ হাসান নয়ন।

রাবির সাবেক এই ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে ২০১০ সালের ১৫ আগস্টে ছাদ থেকে ফেলে দিয়ে দলীয় কর্মী নাসরুল্লাহ নাসিমকে হত্যা সহ ৬টি মামলার আসামি বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এছাড়াও পদবঞ্চিতরা কমিটিতে থাকা নয়নের বিরুদ্ধে বয়স উত্তীর্ণ ও মেডিকেলের প্রশ্নফাঁসের সাথে জড়িত, ডাকাতি মামলার বর্তমান আসামি বলে তাকে অভিযুক্ত করেন।

অন্যদিকে শরিফুল ইসলাম সাদ্দাম পদবঞ্চিতদের দেওয়া বিতর্কিত কমিটির ৯৯জনের ভিতরে না থাকলেও কেন্দ্রীয় কমিটিতে থাকা নিয়ে নিজ দলের সাবেক বেশকিছু ছাত্রলীগ নেতা প্রশ্ন তুলছেন। তার বিরুদ্ধে ক্যাম্পাসে থাকাকালীন নিজ বিভাগে পরীক্ষা বন্ধ করে দেয়ার হুমকি, ক্যাম্পাসে চাঁদাবাজি, শিক্ষার্থীকে মারধর, হলে সিট বাণিজ্যসহ বিভন্ন অভিযোগ করছেন তারা।

হত্যা মামলার আসামি, মাদক মামলার আসামি, ছিনতাইকারী, অছাত্র এবং বিভন্ন সময় সংগঠন থেকে বহিস্কৃত এবং কর্মজীবীদের নিয়ে বিতর্কিত কমিটিতে রাবি ছাত্রলীগ কর্মী থাকা নিয়ে অভিযোগ করেন ছাত্রলীগের একাধিক নেতাকর্মী।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের এক কর্মী বলেন, নবগঠিত কেন্দ্রীয় কমিটিতে বিগত সময়ে গুরুত্বপূর্ণ স্থানে থাকা অনেক নেতাই বঞ্চিত হয়েছেন। এই কমিটিতে স্থান পেয়েছেন হত্যা-চেষ্টা মামলার আসামি, মাদকসেবী, বিএনপি-জামায়াত ও রাজাকার পরিবারের সন্তান, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিস্কৃত, সন্ত্রাস-চাঁদাবাজিতে যুক্ত, বিবাহিত, সংগঠনে নিষ্ক্রিয় এবং অ-ছাত্ররাও।

এছাড়াও কেন্দ্রীয় কমিটিতে বিতর্কিত রাবি ছাত্রলীগের সাবেক দুই কর্মীর বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘রাবি থেকে এবার যেটা হয়েছে সেটা আসলে গ্রহনযোগ্য নয়। কারন অনেক ত্যাগি এবং অবিতর্কিত ছাত্রলীগ কর্মী ছিল কিন্তু তাদের কোন পদ দেওয়া হয়নি। দেওয়া হয়েছে বিতর্কিত দুইজন কে এটা খুবই হতাশাজনক।’

ছাত্রলীগ সূত্রে জানা যায়, খালেদ হাসান নয়ন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি এবং শরিফুল ইসলাম সাদ্দাম সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। নয়ন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগের ২০০৬-০৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী এবং সাদ্দাম ২০১০-১১ সেশনে ইনফরমেশন সায়েন্স অ্যান্ড লাইব্রেরি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর ব্যক্তিগত মোবাইলে কয়েকবার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

প্রসঙ্গত, গত ১৩ মে ঘোষিত ছাত্রলীগের ৩০১ সদস্য বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে অনেক বিতর্কিতদের স্থান দেওয়ার অভিযোগ ওঠেছে। এর মধ্যে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে গনভবনে সাক্ষাৎ করেছেন। এবং নেত্রীর নির্দেশ অনুযায়ী এক সপ্তাহের মধ্যে একটি তদন্ত কমিটি করে ‘বিতর্কিত’দের চিহ্নিত করে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।