প্রচ্ছদ আজকের সেরা সংবাদ উদ্বিগ্ন দেশে আটকে পড়া বিদেশী বৃত্তিধারী শিক্ষার্থীরা

উদ্বিগ্ন দেশে আটকে পড়া বিদেশী বৃত্তিধারী শিক্ষার্থীরা

বিডি রিপোর্ট টোয়েন্টিফোর ডটকম :

মহামারী করোনাভাইরাস মানবজীবনের সবকিছুই ওলট-পালট করে দিয়েছে। দৈনন্দিন জীবনের কিছু কিছু কার্যক্রম পরিচালনা করা গেলেও শিক্ষাব্যবস্থার ওপর মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়া আর উচ্চশিক্ষা গ্রহণের লক্ষ্যে বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা গবেষণা প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত বাংলাদেশী শিক্ষার্থীরা করোনার কারণে শিক্ষাজীবন নিয়ে উদ্বিগ্ন। চলতি বছরের শুরুতে করোনার কারণে বিশ্বের বহু দেশ জরুরি অবস্থা জারি ও লকডাউন ঘোষণা করে। বন্ধ হয়ে যায় বিমানযোগাযোগ।

অনেক দেশের সীমান্ত সিল করা হয়। ফলে মানুষের সাধারণ জীবনযাপন এবং অবাধ যাতায়াতে বিঘ্ন ঘটে। কিন্তু কোভিড-১৯কে মহামারী ঘোষণার আগে এবং পরপরই যেসব শিক্ষার্থী একান্ত প্রয়োজনে দেশে ফিরেছেন তারা আর বৃত্তিপ্রাপ্ত সংশ্লিষ্ট দেশে ফিরে যেতে পারছেন না। ইতোমধ্যে বেশ কিছু দেশ লকডাউন নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়ে সীমিত পরিসরে স্বাভাবিক কার্যক্রমে ফিরলেও বিমানযোগাযোগ না থাকায় সেসব দেশে বাংলাদেশে আটকে পড়া শিক্ষার্থীরা সহসাই ফিরতে পারছেন না। এ অবস্থায় বাংলাদেশ সরকারকে কূটনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে তাদের শিক্ষাজীবন নিশ্চিত করার অনুরোধ জানান বিদেশী বৃত্তিধারী শিক্ষার্থীরা।

চীনের হুবেই প্রদেশের রাজধানী উহানে গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর করোনা নামক ভাইরাস প্রথম শনাক্ত হয়। পরবর্তীতে ১১ মার্চ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) বৈশ্বিক মহামারী হিসেবে ঘোষণা করে। এরপরই সংক্রমণ প্রতিরোধে লকডাউন এবং জরুরি অবস্থা জারি করে বহু দেশ।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছরই জাপান, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, ভারত, তুরস্ক এবং ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বহু শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষা গ্রহণ ও সুন্দর ভবিষ্যতের আশায় পাড়ি জমান। তারা বিভিন্ন দেশের নামকরা বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা গবেষণা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হন। অনেকেই শিক্ষাজীবন শেষ করে দেশে ফিরে আসেন। কেউ কেউ উন্নত জীবনযাপনের লক্ষ্যে বিদেশে থেকে যান। তবে করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে ডিগ্রি গ্রহণ বা গবেষণা শেষে অনেকে যেমন বিদেশে বাধ্য হয়ে আটকা পড়েছেন তেমনি নিজেদের একান্ত জরুরি প্রয়োজনে দেশে আসা বিদেশী বৃত্তিধারী শিক্ষার্থীরাও আটকা পড়েছেন। বর্তমানে বাংলাদেশে আটকা পড়া শিক্ষার্থীরা তাদের উচ্চশিক্ষা নিয়ে উদ্বিগ্ন।

জাপান সরকারের স্কলারশিপ নিয়ে টোকিও মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির (টিএমইউ) ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড কম্পিউটার সায়েন্স (ইইসিএস) বিভাগে মাস্টার্সে অধ্যয়নরত বাংলাদেশের তৌহিদা তাবাসসুম। এই প্রতিবেদককে তিনি জানান, পারিবারিক ও ব্যক্তিগত কাজে দেশে আসেন গত ২ মার্চ। কাজ শেষে প্রথমে ১৭ মার্চ এয়ারএশিয়া বিমান সংস্থার টিকিট কাটা ছিল জাপানে ফেরার জন্য। কিন্তু অনিবার্য কারণে এয়ারএশিয়া তাদের যাত্রা বাতিল করে। পরে ২৮ মার্চ শ্রীলঙ্কান এয়ারলাইন্সে করে জাপানে ফেরার কথা ছিল। সেই যাত্রাও বাতিল হয়েছে। এরই মধ্যে বিশ্বে করোনার সংক্রমণ ব্যাপক আকারে বিস্তার লাভ করে। বিমানসহ প্রায় সবধরনের যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।

কেবল চালু রয়েছে ভার্চুয়াল জগৎ তথা ইন্টারনেট প্রযুক্তির সংযোগ। তৌহিদা তাবাসসুম জানান, করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট লকডাউনে দীর্ঘ প্রায় চার মাস দেশে আটকা পড়েছি। জাপানে অধ্যয়নরত আরো কয়েকজন শিক্ষার্থীও আটকা পড়েছেন। ইতোমধ্যে শিক্ষাকার্যক্রম অনলাইনের মাধ্যমে চালু হলেও সরাসরি ক্লাসে উপস্থিত না থাকায় মনোযোগী হতে পারছি না। ল্যাবরেটরি সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। সময়মতো অ্যাসাইনমেন্টের কাজ শেষ করতে পারি না। তা ছাড়া বাংলাদেশে ইন্টারনেটের স্বল্পতা, ধীরগতি ও উচ্চমূল্য এবং লোডশেডিংয়ের কারণে স্বাভাবিকভাবেই অনলাইনে শিক্ষাকার্যক্রম পরিচালনা করা দুঃসাধ্য ব্যাপার।

এ ছাড়া জাপানের সাথে বাংলাদেশের সময়ের ব্যবধান তিন ঘণ্টা। যা মেনে চলা আরো কষ্টকর। আমার মতো আরো অনেকে জাপান সরকারের বৃত্তি নিয়ে জাপানে পড়ালেখা করছেন। কিছু নানা কারণে কয়েকজন বাংলাদেশে আসার পর ফ্লাইট চলাচল বন্ধ থাকায় তারাও যেতে পারছেন না। এমতাবস্থায় তারা শিক্ষাজীবন নিয়ে শঙ্কিত। এ জন্য বাংলাদেশ সরকার কূটনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমে অতি দ্রুত ফ্লাইট চালু করে আটকে পড়া শিক্ষার্থীদের জাপানসহ অন্যান্য দেশে পৌঁছানোর উদ্যোগ গ্রহণ করুক এমন আহ্বান জানান তৌহিদা। একই ধরনের দাবি জানান জাপানে অধ্যয়নরত (বর্তমানে দেশে আটকে পড়া) মেহেরুন অন্তরা, আফসানা পারভীনসহ ইউরোপের বৃত্তিধারী কয়েকজন।