প্রচ্ছদ সারাদেশ আশুলিয়ায় অবৈধ গ্যাস সংযোগে প্রাণ গেল পরিবারের সবার

আশুলিয়ায় অবৈধ গ্যাস সংযোগে প্রাণ গেল পরিবারের সবার

 

বিডি রিপোর্ট টোয়েন্টিফোর ডটকম :

ছোট্ট একটি পরিবার নিয়ে আশুলিয়ার দূর্গাপুর এলাকায় স্ত্রী ফাতেমা (২৬) ও সন্তান আলামীন (১০) কে নিয়ে বসবাস ছিলো আবুল কাশেমের (৩০)। দীর্ঘ ১০ বছর আগে জীবিকার সন্ধানে ময়মনসিংহের নান্দাইল থেকে এসেছিলেন এই অঞ্চলে, মাথায় ছিল ঋণের বোঝা। স্বামী-স্ত্রী দুজনেই চাকরি করতেন আলাদা আলাদা পোশাক কারখানায়।

সন্তান আলামীনকে নিয়ে এ দম্পতির সংসার চলছিলো ভালোই। আগের সেই ঋণ, অভাব কোনোটাই ছিল না। স্বপ্ন ছিলো ছেলেকে পড়াশোনা করিয়ে মানুষের মত মানুষ করবেন তারা।

কিন্তু গত রোববার (৫ জুলাই) হঠাৎই ঘটে যায় দুর্ঘটনা। ভোররাতে বাড়িতে অবৈধ গ্যাস সংযোগ লিকেজ হয়ে ঘটে বিস্ফোরণ। স্বপ্ন দেখা এই তিনজন মানুষ পুড়ে ঢলে পড়ে মৃত্যুর কোলে।

আজ বুধবার (৮ জুলাই) সকালে সরেজমিনে আশুলিয়ার দূর্গাপুরে পূর্ব চালা এলাকার শহীদ হাজির মালিকানাধীন বাড়িতে গিয়ে জানা গেলো এসব তথ্য। 

জানা গেছে, গত রোববার ভোর রাতে ঘরে অবৈধ গ্যাস সংযোগ লিকেজ হয়ে বিস্ফোরণ ঘটে। এ সময় ঘটনাস্থলেই শিশু আলামীন মারা যায়। বিকট শব্দ পেয়ে স্থানীয়রা এসে অগ্নিদগ্ধ আবুল কাশেম ও ফাতেমাকে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে কাশেমের মৃত্যু হয়। ঘটনার দুইদিন পর গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে ময়মনসিহের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় ফাতেমার। 

নিহত কাশেমের মামা আব্দুল আজীজ জানান, ১০ বছর আগে ঢাকায় এসেছেন তারা। এর মধ্যে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ভাড়াবাড়িতে বসবাস করতেন। পোশাক কারখানায় কাজ করেছেন দুজনেই। সবশেষ দুই মাস আগে আশুলিয়ার দুর্গাপুর চালা গ্রামের শহীদ হাজী বাড়িতে থেকে কাশেম স্থানীয় একটি পোশাক কারখানায় কাজ করতেন, ফাতেমা কাজ করতেন সাউদান গার্মেন্টস কারখানায়। 

তিনি গত সোমবার ভোরে তিনি ঘটনাস্থলে এসে তাদের হাসপাতালে ভর্তি করে। সেদিনই সকালের দিকে কাশেম ও ছেলে আলামীন মারা যায়। পরে গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে ফাতেমা ময়মনসিংহের স্থানীয় হাসপাতালে মারা যান।

তিনি কান্নাজড়িত কন্ঠে আরও বলেন, কি থেকে কি হলো কিছুই বুঝতে পারছি না। সব শেষ হয়ে গেছে, কেউ বাঁচতে পারেনি। ফাতেমা যে পোশাক কারখানায় কাজ করেন সেখান থেকে ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা নিহতের পরিবারকে দেওয়া হয়েছে। তাদের সবার লাশ দাফন করা হয়েছে। আমি আজ ঘরের সব আসবাবপত্র নিতে এসেছি। 

বাড়ির ভাড়াটিয়া শহিদুর বলেন, আমরা আগে গ্যাস সিলিন্ডার দিয়ে রান্না করতাম। ঘটনার দুইদিন আগে গ্যাস সংযোগ দেওয়া হয়। ঘটনা ঘটার পর থেকে আবার গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহার করছি। বাড়িটির মালিক শহীদ হাজী ও ম্যানেজার জাহিদের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তাদের পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে সাভার তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপক (বিক্রয়) প্রকৌশলী আবু সাদাৎ মোহাম্মদ সায়েম বলেন, আমরা ঘটনাটির কথা জানিনা। আপনার কাছেই জানলাম। যেহেতু সেই বাড়িটির গ্যাস অবৈধ। সেহেতু আমাদের এখানে করার কিছু থাকবে না। 

তবে যখন আমরা অবৈধ গ্যাস সংযোগ উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করবো তখন আমরা সেই বাড়িটির সংযোগও বিচ্ছিন্ন করবো। 

আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রিজাউল হক বলেন, এ বিষয়ে আমাদের এখনো কেউ কিছু জানায়নি। বিষয়টি নিয়ে সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে। সেই সঙ্গে তদন্ত করে দ্রুতই ব্যবস্থা নেয়া হবে।