নানা কারণে আলোচিত ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উপকমিশনার হারুন অর রশিদকে নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার (এসপি) হিসেবে বদলির অনুমতি দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
২ ডিসেম্বর, রবিবার বিকেলে এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে ইসি এই অনুমতি দেয়।
এর আগে পুলিশ সদর দফতর থেকে নারায়ণগঞ্জের এসপি হিসেবে তাকে নিয়োগের জন্য আবেদন জানানো হয়। সেই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ইসি এই সিদ্ধান্ত নেয়।
এই মধ্যে ইসির অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ শহিদুর রহমান স্বাক্ষরিত চিঠি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
এসপি হারুন অর রশীদ ২০১৪ সালের ২৪ আগস্ট গাজীপুর জেলার এসপি হিসেবে যোগ দেন। তার গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জে।
ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনের তৃতীয় দফায় ২০১৬ সালের ২১ এপ্রিল ইসির নির্দেশনা অনুযায়ী এসপি হারুনকে গাজীপুর থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছিল।
নির্বাচন সম্পন্ন হওয়ার পর প্রত্যাহারের আদেশ তুলে নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাকে ওই বছরের ৩ মে গাজীপুরের পুলিশ সুপার পদে পুনর্বহাল করে।
হারুন আগে ঢাকা মহানগর পুলিশে ছিলেন। তখন বিএনপি নেতা জয়নুল আবদীন ফারুকের ওপর হামলার ঘটনায় আলোচিত হয়েছিলেন তিনি।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আগে হারুনকে গাজীপুর থেকে সরানোর দাবি তুলেছিল বিএনপি। যদিও তাতে দায়িত্ব থেকে সরানো হয়নি।
এর আগে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আগে সেখানে কর্মরত এসপি হারুণকে প্রত্যাহারের দাবি জানায় বিএনপি। গত ১৭ এপ্রিল খন্দকার মোশাররফ হোসেনের নেতৃত্বে বিএনপির সাত সদস্যের এক প্রতিনিধিদল নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সঙ্গে দেখা করে এই প্রত্যাহার দাবি করে। ওই সময় তারা একটি প্রস্তাবনাও তুলে ধরেছিল ইসির কাছে।
ওই প্রস্তাবনায় বলা হয়েছিল, গাজীপুর জেলার বর্তমান পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদকে অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে। ইতোপূর্বে ২০১৬ সালে গাজীপুরের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের সময় একটি বিশেষ দলের পক্ষে প্রকাশ্য অবস্থান গ্রহণের কারণে তাকে প্রত্যাহার করেছিল নির্বাচন কমিশন।
তা ছাড়া গাজীপুর ও খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনী এলাকায় কর্মরত হারুন অর রশিদের মতো সিভিল প্রশাসন ও পুলিশের চিহ্নিত দলবাজ ও বিতর্কিত কর্মকর্তাদের বদলি করতে হবে। তাদের পরিবর্তে নিরপেক্ষ পেশাদার কর্মকর্তাদের পদায়ন নিশ্চিত করতে হবে।
গত ২২ নভেম্বর, বৃহস্পতিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) একটি বিশেষ সভায় গাজীপুর সিটি নির্বাচন বিষয়ে কথা বলেন কমিশনার মাহবুব তালুকদার।
ওই সভায় তিনি পুলিশের বিরুদ্ধে বিরোধী দলের অভিযোগ উত্থাপনের বিষয় উল্লেখ বলেন, ‘রিটার্নিং অফিসার মৌখিকভাবে বলেছেন বিরোধী দলের মেয়রপ্রার্থীর কোনো অভিযোপত্র প্রেরণ করা হলে পুলিশ অফিস থেকে তা গ্রহণের স্বীকৃতিপত্র দেওয়া হতো না। অনেক অনুরোধের পর চিঠি গ্রহণ করা হতো। বিরোধী দলের মেয়র প্রার্থীর পুলিশি হয়রানি, গণগ্রেফতার, ভীতি প্রদর্শন, কেন্দ্র দখল সংক্রান্ত অভিযোগের বিষয়ে পুলিশ নীরব ভূমিকা পালন করেছে। এসব অভিযোগ সংবলিত পত্রের কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি। রিটার্নিং অফিসার প্রেরিত ১১টি অভিযোগপত্রের মধ্যে মাত্র চারটির উত্তর পাওয়া গেছে, অনেকটা দায়সারা গোছের। পুলিশ বাকি ৭টি অভিযোগের কোনো উত্তর প্রদান প্রয়োজন মনে করেনি।
‘গাজীপুরে নির্বাচনের সময় ইউনিফরমধারী (পোশাকধারী) পুলিশ ও সাদা পোশাকের পুলিশ অনেক ব্যক্তিকে বাসা থেকে কিংবা রাস্তা থেকে তুলিয়ে নিয়ে যায় বলে অভিযোগ আছে। অনেককে অন্য জেলায় নিয়ে যাওয়া হয়। তাদের একজন ছাড়া পুলিশ অন্যদের গ্রেফতারের বিষয়ে কোনো স্বীকারোক্তি করেনি। নির্বাচনের পরে দেখা যায়, তাদের অনেকে কেরানীগঞ্জে কেন্দ্রীয় কারাগারে আছে। গ্রেফতার না করলে তারা কারাগারে গেলেন কীভাবে? এ প্রশ্নের কোনো জবাব পাওয়া যায়নি।’
প্রসঙ্গত, বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের করা অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৭ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার (এসপি) আনিসুর রহমানকে প্রত্যাহারের নির্দেশ দেয় নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
ওই সময় ২০ দলীয় জোট পক্ষ থেকে ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপির) চেয়ারম্যান কর্নেল (অব.) অলি আহমদ অভিযোগ তুলেছিলেন। অভিযোগে বলা হয়েছিল, ‘নারায়ণগঞ্জ জেলার এসপির স্ত্রী বেগম ফাতেমা তুজ্জহুরা আওয়ামী লীগের বর্তমান এমপি। সম্প্রতি সন্তানসহ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তিনি ছবি তুলেছেন তারা। এমন অবস্থায় ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও তার পক্ষে নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করা সম্ভব নয়।’
২০ দলীয় জোটের এমন অভিযোগে পরিপ্রেক্ষিতে এসপি আনিসুর রহমানকে প্রত্যাহার করা হয়েছিল।