প্রচ্ছদ আজকের সেরা সংবাদ মানিকগঞ্জে জামায়াতের ঐতিহাসিক কর্মী সম্মেলন অনুষ্ঠিত

মানিকগঞ্জে জামায়াতের ঐতিহাসিক কর্মী সম্মেলন অনুষ্ঠিত

নিজস্ব প্রতিবেদক, মানিককগঞ্জ ঃ

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারী জেলারেল ও সাবেক এমপি মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন,দ্রুত সময়ের মধ্যেই প্রয়োজনীয় সংস্কার কাজ সম্পাদন করে জাতীয় ঐক্যের মধ্য দিয়েই বাংলাদেশে একটি সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন হবে।

আজ শনিবার সকাল ৯টায় মানিকগঞ্জ জেলা জামায়াতে ইসলামীর কর্তৃক আয়োজনে স্থানীয় সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে (বিজয় মেলা মাঠ) জেলা জামায়তের আমীর হাফেজ মাওলানা মোঃ কামরুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কর্মী সন্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মিয়া গোলাম পরওয়ার উপরোক্ত বক্তব্য রাখেন।অনুষ্ঠানটি দুপুর ১টা সময় শেস হয়।

জেলা জামায়াতের সেক্রেটারী মাওলানা মোঃ নূরুল ইসলামের সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা উত্তর অঞ্চল প্রধান অধ্যক্ষ মুহাম্মদ ইজ্জত উল্লাহ ও ঢাকা উত্তর অঞ্চল টিম সদস্য ও সাবেক মানিকগঞ্জ জেলা আমীর মাওলানা মুহাম্মদ দেলওয়ার হোসাইন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন,বিগত ১৭ বছরের চরম জুলুম-নির্যাতন,খুন-গুম,সন্ত্রাস-হত্যা,লুটপাট,গনতন্ত্র হত্যা করে অবৈধ ভাবে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চেয়েছে কিন্তু মহান আল্লাহ যা চেয়েছেন তাই হয়েছে।গত ২০১৪,২০১৮ ও ২০২৪ সালে বাংলাদেশের মানুষ ভোট দিতে পারে নাই।আওয়ামীলীগ.ছাত্রলীগ,পুলিশলীগ মিলে মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়েছে।ফ্যাসিবাদের মাস্টার মাইন্ড স্বৈরাচার শেখ হাসিনার নির্দেশে এদেশের ছাত্র-জনতাকে হত্যা করা হয়েছে।তার নির্দেশে হেলিকপ্টার থেকে গুলি করে নিরিহ শিশু-নারী সহ সাধারন মানুষকে হত্যা করা হয়েছে,যা পৃথিবীতে বিরল।নাৎসী বাহিনীও যা করেনি শেখ হাসিনা তাই করেছে।৫ই আগষ্টেও এই ফ্যাসিস্টের নির্দেশে নির্দয় ভাবে আশুলিয়া,সাভার এলাকায় বিপ্লবী ছাত্র-জনতাকে হত্যা করে লাশ পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে।

শেখ মুজিব যেমন মাত্র ৪টি পত্রিকা রেখে সকল গনমাধ্যম বন্ধ করে দিয়ে বাকশাল কায়েম করেছিল ,শেখ হাসিনাও দেশে সিন্ডিকেট করে গনতন্ত্র হত্যা করে পরিবারতন্ত্র ও স্বৈরাতন্ত্র চালু করেছিল।শেখ মুুজিব গনতন্ত্রে সিড়ি বেয়ে ক্ষমতায় গিয়ে সিড়ি ফেলে দিয়েছিলো।পরে কিন্তু আর সিড়ি না পেয়ে ধপাস করে পড়ে গিয়েছিলো।শেখ হাসিনা পালাবার মাত্র ৪দিন পূর্বে জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করে পরে নিজেই নিষিদ্ধ হয়েছেন।যে দলকে ফ্যাসিবাদের মাস্টার মাইন্ড হাসিনা নিষিদ্ধ করেছিলো সেই দলের আমীরকেই সম্মানের সাথে আমন্ত্রন জানালো দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীর প্রধান ও নোবেল জয়ী ড.মুহাম্মদ ইউনুস।

তিনি বলেন,স্বৈরাচারী হাসিনা পালিয়ে যেখানে যাবার কথা ঠিক সেখানেই গিয়েছে তবে তিনি থেমে নেই। একের পর এক যড়যন্ত্র করেই যাচ্ছে।জুডিশিয়াল ক্যু,আনসার কান্ড,গার্মেন্ট সেক্টরে অশান্তি,বিদ্যৃত সেক্টরে যড়যন্ত্র,পুলিশ-জনপ্রশাসন সহ সর্বত্র যড়ষন্ত্রে চেষ্ঠা করে যাচ্ছে।দেশ প্রেমিক ছাত্র-জনতা,সেনাবাহিনী কোন যড়ষন্ত্রকেই সফল হতে দেয়নি।আগাামীদেও দেশবাসী সজাগ আছে ,ইনশাল্লাহ্ কোন যড়ষন্ত্রই সফল হবে না।

বিগত জালেম সরকার জামায়াত-শিবির,বিএনপি সহ বিরোধী নেতা-কর্মীদের উপর অমানুষিক জুুলুম নির্যাতন করেছে,হত্যা-গুম করেছে।এ সময় ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনে যারা আন্দোলন করেছে তাদের এক সাথে থাকতে হবে।ঐক্যবদ্ধ ভাবে নির্বাচন করলে আওয়ামীলীগের কবর রচনা হবে।

আমাদের অনেক সাংবাদিক ভাই সহ অনেকেই প্রশ্ন করেন,আওয়ামীলীগকে কি নিষিদ্ধ করা দরকার ? আমি বলি,এটা এ দেশের জনগনের ব্যাপার।যারা দেশের মানুষকে অন্যায় ভাবে হত্যা করেছে,লাশ পুড়িয়েছে,দেশের ১৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার লুটকরে পাচার করেছে,দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে যারা হেফাজত করতে পারেনি,যারা ২০০৬ সালের ২৮শে অক্টোরব লাশের উপর নৃত্য করেছে,যারা বিডিআর হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে,যারা ২০২৪শে আগষ্ট বিপ্লবের সময় ২০০০ ছাত্র-জনতাকে হত্যা করেছে ,যারা গনতন্ত্রের কথা বলে ফ্যাসিবাদ কায়েম করেছে তাদের কি জনগন চায় ? তারা কি এ দেশে রাজনীতি করার যোগ্যতা রাখে ? জনগন এই হত্যাকারীদের বিচার চায়। এ বাংলাদেশের মাটিতেই তাদের বিচার হতে হবে।ওনারা কি আবার নির্বাচনে আসবেন।আরে এরা তো বাতিল মাল।এদের আশা আর পূরন হবে না।

তিনি আরো বলেন, বিগত ১৫ বছরে বিসিএস সহ সকল ক্ষেত্রে দূর্নীতি করে আওয়ামীলীগের ক্যাডারদের বিভিন্ন সেক্টরে চাকুরি দেয়া হয়েছে।আমরা সচিবালয়ে গেলে আওয়ামী দূর্গন্ধ পাই।দেশের প্রায় সকল গুরুত্বপূর্ন স্থানেই ফ্যাসিবাদের দোসররা বসে আছে।এদের রেখে যদি কোন নির্বাচন দেয়া হয় তা তো আগের মতই কারচুপির নির্বাচন হবে এবং মনে রাখতে হবে আবার ফ্যাসিবাদ ও তাদের মাস্টার মাইন্ড ফিরে আসার সুযোগ পাবে।তাই সকল ক্ষেত্রেই সংস্কার করে যত দ্রুত সম্ভব একটি সুষ্টু নির্বাচন দিতে হবে।সংস্কার না করেও যেমন নির্বাচন দেয়া যাবে না আবার খুব বেশি দেরিও করা যাবে না।কারন দেরি করলে ফ্যাসিস্ট ফিরে আসার পায়তারা করবে।সম্ভব হলে আগামী ডিসেম্বরের পরেই নির্বাচনের একটি রোডম্যাপ যোষনা করুন। তবে বেশি তাড়াহুড়ো করে কোন মতে একটি নির্বাচন দিলে দেশের সকল অর্জন নষ্ট হয়ে যাবে।অবশ্যই সংস্কার করে যথা সম্ভব দ্রুত সময়ের মধ্যেই নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে।বিশে^র সম্মানিত ব্যাক্তি নোবেল বিজয়ী ড.মুহাম্মদ ইউনুস সাহেব ও জানের দেশ বাসী কি চায়।আমরা সবাই বর্তমান অর্ন্তবর্তিকালিন সরকারকে সার্বিক সহযোগীতা করে যাবো।যাতে তারা সকল খাদে সংস্কার করে দ্রুত নির্বাচন দিতে পারেন।

মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন,মানুষ বলে ৫ই আাগষ্টের পর হতে কেন জোয়ারের পানির মত মানুষ জামায়াতের সাথে যোগ দিচ্ছে।দেখুন আমরা বিগত প্রায় দেড় যুগে কথা বলতে পারি নাই।আমরা ইসলামের সুমহান আর্দশকে মানুষের মাঝে তুলে ধরতে পারি নাই।এখন মানুষ ইসলামের সৌন্দর্য দেখে ইসলামী আন্দোলনের ছায়াতলে আসছে।এটা জামায়াতে ইসলামীর কোন কৃতিত্ব নয় বরং এটা মহান আল্লাহর রহমত।এটা ইসলামের কৃতিত্ব। শহীদ মীর কাসেম আলী,শহীদ রফিক,শহীদ সাদের রক্তের এই মানিকগঞ্জেও ইসলামের বিজয় হবে ইনশাল্লাহ।

তিনি বলেন,আপনাদের বিশুদ্ধ নিয়ত নিয়ে,জ্ঞান অর্জন করে রাসুল (সাঃ) সুমহান আর্দশকে অনুসরণ করে চরিত্র গঠন করে কথা কাজে মিল রেখে মানুষের মাঝে ইসলামের দাওয়াতী কাজ করতে হবে।তাহলেই শহীদরে রক্তস্নাত এই বাংলাদেশে একটি আর্দশ ইসলামী কল্যান রাষ্ট্র কায়েম হবে।

যে ছাত্র জনতা মা-বাবাকে,স্ত্রী-সন্তানকে,আপন জনকে কাদিয়ে অকাতরে দেশের জন্যে জীবন দিয়েছেন তাদের রক্তের হৃণ আমাদের শোধ করতে হবে।একটি বৈষম্যহীন আদর্শ রাষ্ট্র কাুেয়ম করেই তাদের সম্মান দিতে হবে।আসুন আমরা একটি তাকওয়া ভিত্তিক আর্দশ রাষ্ট্র কায়েমের জন্যে এক সাথে কাজ করি।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে অধ্যক্ষ মুহাম্মদ ইজ্জত উল্লাহ বলেন,ইসলামী রাষ্ট্র কায়েমের জন্যে আমাদের নিরন্তর চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।আমরা সবাইকে নিয়েই সুন্দর একটি বাাংলাদেশ গড়বো।

মাওলানা দেলোয়ার হোসাইন বলেল,মহান আল্লাহ আমাদের শহীদদের বিনিময়ে একটি সুযোগ দিয়েছেন , একটি সুন্দর ও আদর্শ দেশ গড়ার ।আমরা তা কাজে লাগাতে না পারলে শহীদদের নিকট কোন জবাব দিতে পারবো না।এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে আমাদের শহীদদের হক ও আল্লাহর নির্দেশ প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

হাফেজ কামরুল ইসলাম বলেন,যে কোন ত্যাগের বিনিময়ে আমরা আল্লাহর জমিনে আল্লাহুর দ্বীন কামের করবো।আর কোন ফ্যাসিস্ট যেন আমাদের মাথায় চেপে না বসে।

কর্মী সন্মেলনে আরো বক্তব্য রাখেন,মানিকগঞ্জ জেলা ওলামা বিভাগের সভাপতি মাওলানা জাকিরুল ইসলাম খান,জেলা আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাড,আনোয়ার হোসাইন,তরবিয়ত সেক্রেটারী মাওলানার ওমর ফারুক,গাজীপুর জেলা ওলামা বিভাগের সেক্রেটারী হাফেজ আবুল কালাম আজাদ,এনপিএফ এর সভাপতি ডাঃ মুহাম¥দ মোসলেম উদ্দিন,শ্রমিক কল্যান ফেডারেশনের সভাপতি আবু তাহের,জেলা শিবিরের সভাপতি মোঃ বাবুল হোসেন,সিংগাইর উপজেলা আমীর আঃ মান্নান,শিবালয় উপজেলা আমীর হাফেজ হাতেম আলী,সাটুরিয়া উপজেলা আমীর আবু সাঈদ বিএসসি,সদর উপজেলা আমীর মোঃ ফজলুল হক,ঘিওর উপজেলা আমীর মোঃ জহিরন উদ্দিন,আইবিএফ এর সহ-সভাপতি নূর মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর,অ্যাড,কাজী সালাউদ্দিন আইয়ুবী প্রমুখ।

সন্মেলনে জেলার হাজার হাজার নেতা-কর্মী সহ সাধারন মানুষ অংশ গ্রহন করেন । মানিকগঞ্জের ইতিহাস জামায়াতে ইসলামীর এতো বড় কোন সমাবেশ কখনও অনুষ্ঠিত হয় নাই।

সন্মেলনে দলীয় ও ইসলামী সংগীত পরিবেশ করেন,অ্যাড.এসএম ফেরদৌস ও আব্দুল মোমিন সালেহীর নেতৃত্বে মানিকগঞ্জ সাংস্কৃতিক সংসদ।