প্রচ্ছদ খেলাধুলা আর্জেন্টিনায় রানার্সআপদের জায়গা নেই: মেসি

আর্জেন্টিনায় রানার্সআপদের জায়গা নেই: মেসি

আর্জেন্টিনা ৩২ বছর হলো বিশ্বকাপের স্বাদ পায়নি। ২০১৪ ব্রাজিল বিশ্বকাপে স্বপ্নের খুব কাছাকাছি গিয়েছিল মেসিরা। কিন্তু জার্মানির বিপক্ষে হেরে আশা ভঙ্গ হয়েছে তাদের। আর্জেন্টিনার হয়ে বিশ্বের অন্যতম সেরা ফুটবল তারকা রাশিয়া যাচ্ছেন আবারও বড় স্বপ্ন নিয়ে। আর্জেন্টিনার ৩২ বছরের জুজুটা তিনি দূর করতে চান। মেসির রাশিয়া বিশ্বকাপ নিয়ে প্রত্যাশা। দেশের প্রত্যাশা। ২০১৪ বিশ্বকাপের স্মৃতি নিয়ে একটি সাক্ষাৎকার প্রকাশ করেছে টাইমস অব ইন্ডিয়া। তার কিছু অংশ তুলে ধরা হলো:

প্রশ্ন: মারাকানায় পরাজয় এখনও কি পোড়ায়?

মেসি: ওটা একটা দগদগে ঘা এবং ওই ঘা থেকেই যাবে। আমরা স্বপ্নের খুব কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিলাম। কিন্তু এটাই ফুটবল। সেরা দল সবসময় শিরোপা জিতবে না। আমরা সেটা মেনে নিয়েছি এবং সামনে তাকিয়েছি। সেদিন আমরা কেঁদেছিলাম। আমি কেঁদেছিলাম। আর দশজন আর্জেন্টাইনের মতো যারা আমাদের বিশ্বসেরা দেখতে চেয়েছিল। ওই ব্যাথাটা এখনো আছে।

প্রশ্ন: সামনে আবার একটা বিশ্বকাপ। অনেক প্রত্যাশা আবার ঘিরে ধরেছে আপনাদের। কি মনে হচ্ছে এবার?

মেসি: প্রত্যাশায় কোন ভুলও নেই, দোষও নেই। আমরা সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। কিন্তু আর্জেন্টিনার হয়ে কিছু জিততে পারিনি (১৯৮৬ এর পর)। আর্জেন্টিনার মানুষের মতো বিশ্বকাপ জিততে পারলে আমারও খুব আনন্দ হবে। ২০১৪ সালে দলের সকলে তাদের সেরাটা দিয়ে খেলেছিল।

প্রশ্ন: ২০১৮ তে আর্জেন্টিনা কি পারবে সেটা করতে?

মেসি: আমার স্বপ্ন সেটাই। আবার ফাইনালে ওঠা এবং শিরোপা জেতা। তবে ওটা অনেক পথ এবং পাড়ি দিয়ে ফাইনালে ওঠা খুব কঠিন। আমরা ২০১৪ সালে তা ভালোই টের পেয়েছি। আমরা এবারো ফাইনালে উঠতে চাই এবং ফাইনালের ফলটা বদলাতে চাই। হয়তো এটাই আমাদের প্রজন্মের আর্জেন্টাইনদের জন্য শেষ সুযোগ।

প্রশ্ন: দেশের মানুষের প্রত্যাশার যে চাপ সেটা কি খুব ভারী মনে হয়?

মেসি :না, সত্যি না। আপনি যদি আর্জেন্টাইন হন। ফুটবল পছন্দ করেন তাহলে চাইবেন আপনার দেশ ফুটবলের সবচেয়ে বড় পুরষ্কারটা জিতুক। এটা কোন ভুল চাওয়া হতে পারে না। আসলে আমিও ওইভাবে ভাবি। আর্জেন্টিনার এটা জেতা দরকার। আমরা জানি বিশ্বকাপ জেতা কত কঠিন। তবে আমরা ওই চ্যালেঞ্জটা নিতে চাই।

প্রশ্ন: আপনার প্রজন্মের ফুটবলাররা বিশেষ করে আপনি যখনই বড় কোন আসরে হেরেছেন সংবাদ মাধ্যমের সমালোচনায় পড়েছেন। এটা কতটা কষ্ট দেয়?

মেসি: অবশ্যই এটা কষ্ট দেয়। তবে বুঝতে হবে, আর্জেন্টিনার সংবাদ মাধ্যমও একই রকম কষ্ট থেকে কাজটা করেছে। আর্জেন্টিনা ফুটবল পাগল দেশ। তারা যেভাবে আমাদের সমালোচনা করে ভাবলে দেখা যাবে সেটা খুব স্বাভাবিক। আর্জেন্টিনার কাছে তিন তিনটি ফাইনালে উঠেও শিরোপা না পাওয়া মূল্যহীন। এটাই আর্জেন্টিনা। এখানে রানার্সআপদের কোন জায়গা নেই।

প্রশ্ন: এবার আর্জেন্টিনা গ্রুপ পর্বে আইসল্যান্ড, নাইজেরিয়া এবং ক্রোয়েশিয়ার মতো শক্ত দল পেয়েছে। কী ভাবছেন?

মেসি: বিশ্বের সেরা টুর্নামেন্টে সেরা দলের বিপক্ষে খেলতে হবে। প্রত্যেক দল অস্বস্তিকর প্রশ্ন নিয়ে বসে আছে। সব কিছুর জন্য আপনাকে তৈরি থাকতে হবে। এটাই বিশ্বকাপ। কেউ আগে থেকে কিছুই মেনে নেবে না। কেবল মাত্র সেরারা দেশের হয়ে বিশ্বকাপে প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ পায়। সব ম্যাচই এখানে কঠিন। তবে আমরা পারফর্ম করতে প্রস্তুত।

প্রশ্ন: এবারের বিশ্বকাপে ফেভারিট দলের নামগুলো যদি বলতেন?

মেসি: ফুটবলের বড় বড় দেশগুলোর প্রত্যেকেই ফেভারিট। বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন জার্মানি ট্রফি ধরে রাখতে সব চেষ্টাই করবে। ফাইনারে যেতে দারুণ দল আছে স্পেনের। ব্রাজিল এবং পর্তুগাল বাছাইপর্বে দারুণ করেছে। ফ্রান্সও তাই।

প্রশ্ন: রাশিয়া বিশ্বকাপে ইতালি, নেদারল্যান্ডসকে না দেখে আপনি কি অবাক হয়ছেন?

মেসি: তাদের না থাকাই প্রমাণ করে বিশ্বকাপ ঠিক কতটা কঠিন। ইতালিকে ছাড়া বিশ্বকাপ ভাবা যায় না। আর ব্রাজিলে তো নেদারল্যান্ডস সেমিফাইনালে খেলেছিল। তাদেরকে পেনাল্টিতে হারিয়েই আমরা ফাইনালে উঠেছিলাম। রাশিয়া আজ্জুরি এবং অরেঞ্জ দলটাকে মিস করবে। যারা বিশ্বকাপের আসরকে সব সময় রঙিন করে তোলে।

প্রশ্ন: রাশিয়া বিশ্বকাপে যাওয়া আর্জেন্টিনার জন্য সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। ইকুয়েডরের বিপক্ষে হ্যাটট্রিক করে না জেতালে পথটা পরিস্কার হতো না।

মেসি: বাছাইপর্বের শেষ ম্যাচটা আমাদের জিততেই হতো। ওই ম্যাচের শুরুতেও আমরা পিছিয়ে পড়েছিলাম। তবে পরে সব পরিকল্পনা মতোই এগিয়েছিল। আমিও গোলগুলো করতে পেরেছিলাম। লক্ষ্য ছুঁতে অসুবিধা হয়নি। সেদিন বিশ্বকাপের টিকিট জোগাড় করার পর খুব আনন্দ পেয়েছিলাম। প্লে অফের টেনশনে পড়তে হয়নি।

প্রশ্ন: ক্রোয়েশিয়া গ্রুপে পড়ার পর ইভান রাকিটিচ (বার্সা সতীর্থ) কি আপনাকে কিছু বলেছেন?

মেসি: না, তেমন কিছু বলেনি। ইভান খুব ভালো খেলোয়াড় এবং নিঃস্বার্থ সতীর্থ। প্রচণ্ড লড়াকু সে আমি জানি যেভাবে আমি খেলতে ভালোবাসি, ইভান কিছুতেই সেভাবে আমাকে ওই ম্যাচে খেলতে দেবে না। সে লুকা মডরিচের মতো যোগ্য এক সঙ্গী পেয়েছে। আমাদের পক্ষ থেকেও ওদের জন্য একই রকম বাধা অপেক্ষা করছে। আর হ্যাঁ, বার্সায় আমাদের মুখোমুখি খেলা নিয়ে সামান্য কিছু রসিকতা হয়েছে। এর চেয়ে বেশি কিছু না।