প্রচ্ছদ রাজনীতি এই ছেলে তোমাকে জেলের ভাত খাওয়াবে!

এই ছেলে তোমাকে জেলের ভাত খাওয়াবে!

গল্পটা প্রথম বলেছিলেন প্রয়াত জেনারেল (অব.) মীর শওকত আলী। নানা ভাবে কাঁটছাঁট করে এই গল্পটা এখনো বিএনপির নেতা বুদ্ধিজীবীরা বলেন। ঘটনাটি ১৯৮০ সালের। জিয়া তখন সামরিক একনায়ক। রাষ্ট্রের দণ্ডমুণ্ডের কর্তা। তার বড় ছেলে তারেক রহমান ৭ম শ্রেণী থেকে ৮ম শ্রেণীতে উঠতে এক বিষয়ে ফেল করেছে। প্রোগ্রেস রিপোর্টে বিশেষ বিবেচনায় তাঁকে উত্তীর্ণ করা হয়েছে। ফলাফল পত্র দেখলেন সামরিক একনায়ক। তারপর নিজেই গেলেন স্কুলে, সঙ্গে স্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। ঐ স্কুলের প্রধান শিক্ষককে জিজ্ঞেস করলেন, অন্য শিক্ষার্থীর ক্ষেত্রে কি করতেন? প্রধান শিক্ষক উত্তর দিলেন সে ফেল করতো এবং তাঁকে আমরা স্কুলে রাখতাম না। জিয়া তখন বললেন, অন্যদের ক্ষেত্রেও যা করেন, আমার ছেলের ক্ষেত্রেও তাই করবেন।

গল্পের এটুকু সবাই জানে। কিন্তু বিএনপির রাজনীতি যেমন সত্যকে বিকৃত করা বা অর্ধসত্য বলা, তেমনি এই গল্পটিকেও বিকৃত করা হয়েছে। যে গল্পটি জেনারেল মীর শওকত আলী লিখেছিলেন ৮০’র দশকে আনোয়ার শাহাদাত সম্পাদিত ‘আসে দিন যায়’ শিরোনামে একটি সাপ্তাহিক পত্রিকায়।

জিয়ার ঘনিষ্ঠ বন্ধু এবং পরবর্তীতে বিএনপি নেতা মীর শওকত আলীর ভাষ্য অনুযায়ী ঘটনা এরকম, ‘ছেলের ফেলের খবর শোনার পর ক্ষুব্ধ জিয়া বলেছিলেন, আপনারা কি পড়ান যে ছেলে ফেল করে?’ জবাবে প্রধান শিক্ষক তারেক রহমানের ফাইল বের করে জিয়াকে দেখান। এর আগে ত্রৈমাসিক পরীক্ষাতেও সে ফেল করেছে। ক্লাস টেস্টেও ফেল করেছে। প্রধান শিক্ষক বললেন, আমরা গার্জিয়ানকে চিঠিও লিখেছি। আপনি সেটা দেখে স্বাক্ষরও করেছেন। আমরা আর কি করবো? প্রধান শিক্ষকের কথা শুনে জিয়া আরও রেগে গেলেন। আপনারা চিঠি দিয়েছেন আর আমি দেখে স্বাক্ষর করেছি। কোথায় দেখান? প্রধান শিক্ষক নাছোড়বান্দা, ফাইল থেকে চিঠি বের করে দেখালেন। জিয়াউর রহমান দুই অক্ষরে স্বাক্ষর করতেন। তিনি দেখলেন, চিঠিতে সিন লেখা এবং অবিকল তাঁরই স্বাক্ষর। জিয়া তাঁর স্ত্রীর দিকে তাকালেন, ম্যাডামের মাথা নিচু হলো। স্কুল থেকে বেরিয়ে তিনি বাসায় গেলেন। তারেককে ডাকলেন। ঘটনাচক্রে সেদিন আমি একটা জরুরি ফাইল নিয়ে তাঁর বাসায় যাই। জিয়া আমাকেও বসতে বললেন। ম্যাডাম এবং তারেক দাঁড়িয়ে। জিয়াউর রহমান সাহেব উত্তেজিত। আমাকে দেখে ম্যাডাম যেন সাহস পেলেন। বললেন, ‘বাচ্চা মানুষ ভুল করেছে। মাফ করে দাও, আর করবে না।’ এবার জিয়া গর্জে উঠলেন, বললেন, ‘সাট আপ। চোরের মায়ের বড় গলা।’ এরপর বিচার চলল। তারেক স্বীকার করলো যে, বাবার ভয়ে সে নিজেই জিয়ার স্বাক্ষর জাল করে স্কুলে জমা দিয়েছে। জিয়া ম্যাডামকে বললেন, ‘ছেলেকে সামলাও, ঠিক করো। না হলে এই ছেলে তোমাকে জেলের ভাত খাওয়াবে।’

কাল জিয়ার মৃত্যুবার্ষিকী। জিয়ার মৃত্যুবার্ষিকীর আগের দিন এই লেখায় জিয়ার ভবিষ্যতবাণী মিলে যাওয়া দেখেই লেখার অবতারণা। জেলে থাকায় স্বামীর কবরে যেতে পারছেন না বেগম জিয়া। সপ্তম শ্রেণীতে জালিয়াতি করে পিতার হাতে ধরা পড়া তারেক এখন দুর্নীতির বরপুত্র। দুটি মামলায় ১৭ বছরের জেল হয়েছে। লন্ডনে পালিয়ে আছেন। তাঁর মা জেল খাটছেন পুত্রের অপকর্মেই। নিজের ছেলে সম্পর্কে জিয়া ১৯৮০ সালেই ভবিষ্যতবাণী করেছিলেন, ৩৮ বছর পর তা কি অদ্ভুতভাবে মিলে গেছে।