প্রচ্ছদ সারাদেশ খুলনা বিভাগ গ্রীষ্মের রোজায় চৌগাছায় কদর বেড়েছে আখের রসের

গ্রীষ্মের রোজায় চৌগাছায় কদর বেড়েছে আখের রসের

হাসান মাহমুদ, চৌগাছা থেকে: এমনিতেই গ্রীষ্ম কাল। তারউপর মাথার উপরে প্রখোর রোদ। আবার এর মধ্যে শুরু হয়েছে সিয়াম সাধনার মাস রমজান। এই রজমানে সারা দিন রোজা রেখে রোজাদারদের তৃষ্ণায় হিমশিম খেতে হচ্ছে। তাই এই গরমের রমজানে পানির চাহিদা ও সরবতের স্বাদ দুটোই একসাথে পাওয়ার জন্য রেজাদাররা বেছে নিচ্ছেন আখের রস।

বাংলাদেশে গরমের দিনে, রোজা, ইফতার, বা ক্লান্তি মেটাতে আখের রসের বিপুল জনপ্রিয়তা লক্ষ্য করা যায়। প্রথমে আখের গায়ের ময়লা বা ছাল পরিষ্কার করে পানিতে ধুয়ে নিতে হয়। তারপর আখ মাড়াইকরণ যন্ত্র চালু করে আখ যন্ত্রের মাঝে দিতে হয় । এতে যন্ত্রের ৩টি রোলারের চাপে আখ পিষ্ট হয় এবং রস আলাদা হয়ে যায়, তখন এ রস সংগ্রহ করা হয় । গ্লাসে রস ছেঁকে বরফসহ অথবা শুধু রস পরিবেশিত হয় ।

যশোরের চৌগাছা উপজেলার এই ছোট্ট শহরে অবশ্য রোজা শুরু হবার পর থেকেই বিশেষ করে বিকেল হলে আখ মাড়ানো মেশিনের সামনে ক্রেতাদের ভিড় দেখা যায়। বিশেষ করে এই গ্রীষ্মের রোজায় আখের রসের কদর বেড়েছে। ক্রেতারা অনেকে জানিয়েছেন, ইফতারির সময় পানি, সরবতের চাহিদা মেটাতে এবং শরীলের ক্লান্তি দুর করতে তাদের প্রথম পছন্দ এই আখের রস।

রাজাদারের তৃষ্ণা নিবারণে আখের রসের কোন বিকল্প নাই। এই রমজান মাসে বাজারের প্রতিটি মোড়ে মোড়ে চালু হয়েছে আখের রস মাড়ানো মেশিন। প্রতিদিন দুপুরের পর থেকে শুরু হয় আখের রস মাড়ানো। বিকেল হবার সাথে সাথে শুরু হয় আখের রস বিক্রি। ইফতারির পূর্ব মুহূর্তে বিক্রি বেড়ে যায় বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা।

মাঝ বাজারে সর্ণপট্টির মোড়ে মুক্তার হোসেন নামের এক বিক্রেতা আখের রস বিক্রি করেন। জানতে চাইলে তিনি বলেন, রোজা বাদে অন্য মাসগুলোতে তিনি সকাল থেকে রাত পর্যন্ত আখের রস বিক্রি করেন। তবে রোজার মাসে দুপুরের পর থেকে বিক্রি শুরু হয়। এবং আসরের পর থেকে মাগরিবের আগে পর্যন্ত বেশি বিক্রি হয়। এছাড়া মাগরিবের পর (ইফতারির পর) আমার কাছ থেকে নিয়মিত রস খেয়ে থাকেন।

রমজান মাসে বিক্রি কেমন জানতে চাইলে তিনি বলেন, অন্যান্য মাসের তুলনায় রোজার মাসে বেচা-বিক্রি ভালো হচ্ছে। যেদিন রোদ ও গরমের ভাগ বেশি থাকে সেদিন বিক্রি একটু বেশি হয়। যারা বাজারে ইফতার করেন তারা দুই থেকে পাঁচ গ্লাস রস নেন। আর যারা বাসায় ইফতার করেন তারা বেশি করে নিয়ে যান। আবার অনেকে সরবত না বানিয়ে আমার কাছ থেকে আখের রস নিয়ে যান বলে জানান তিনি। এ সময় একটা কাচেঁর গ্লাস দেখিয়ে তিনি বলেন,‘ এই গ্লাসের এক গ্লাস রস আমরা ১০ টাকা করে বেচি।

আখের রস বিক্রেতা মুক্তার হোসেনের সাথে কথা বলতে বলতে শফিকজ্জামান নামের এক ক্রেতা রস কিনতে এসেছিলেন। তিনি বলেন, এমনিতেই গরমের দিন আবার রমজান মাস। তাই ইফতারিতে শরবত না পান করে আখের রস নিচ্ছি। কারণ এটা শরীলের ক্লান্তি দুর করার সাথে সাথে শরীলের জন্য বেশ উপকারী। কত গ্লাস রস নিচ্ছেন? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ছয় গ্লাস। কারণ আমার পরিবারে ছয়জন লোক তাই প্রত্যেকের জন্য এক গ্লাস করে নিচ্ছি।

মেডিকেল সায়েন্স বলছে, এক গ্লাস আখের রস পান করার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের শরীরে ঢোকে কার্বোহাইড্রেটস, প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, আয়রন, পটাসিয়াম, সোডিয়াম। এছাড়াও আখের রস শরীরের একাধিক সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে।

আখের রস পানে বেশকিছু উপকারিতা আছে । যেমন- মূত্রনালীতে ইনফেকশন হলে তা কমাতে সাহায্য করে। কিডনিতে স্টোন (পাথর) হওয়ার সম্ভাবনাও কমে যায়। কিডনি সুস্থ থাকে। লিভারের কার্যক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। জন্ডিস হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই কমে যায়। ভালো এনার্জি ড্রিঙ্ক হিসেবেও কাজ করে। কারণ এর মধ্যে থাকে কারুহাইড্রেটস, প্রোটিন, আয়রন, পটাসিয়াম। শুষ্ক আবহাওয়া থেকে বাঁচতে ও ক্লান্তি দূর করতে সাহায্য করে। আখের রস পান করলে কোষ্ঠকাঠিন্যর সমস্যা থেকে অনেকটাই মুক্তি পাওয়া যায়।

এছাড়া আখের রসে গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম থাকে। ফলে ডায়াবেটিস রোগীদের পক্ষে এটি খুবই উপকারী। মিনারেলের পরিমাণ বেশি থাকায় দাঁতের ক্ষয় রুখতে সাহায্য করে। মুখে দুর্গন্ধও কম হয়।