প্রচ্ছদ আজকের সেরা সংবাদ ভাঙন রোধে ১০৭৭ কোটি টাকার ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন

ভাঙন রোধে ১০৭৭ কোটি টাকার ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন

শরীয়তপুর জেলার জাজিরা ও নড়িয়া উপজেলায় পদ্মা নদীর ভাঙন ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। ভাঙনে শত শত ঘর-বাড়ি, ব্যবসা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং রাস্তাঘাট উন্মত্ত পদ্মার করাল গ্রাসে হারিয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় ভাঙন রোধে এক হাজার ৭৭ কোটি ৫৮ লাখ টাকার প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার।

বুধবার সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সভাপতিত্বে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে এ সংক্রান্ত একটি ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

বৈঠকে কমিটির সদস্য, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সিনিয়র সচিব, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিব ও উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক শেষে প্রকল্পের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব নাসিমা সুলতানা।

প্রকল্পটি জরুরি ভিত্তিতে সম্পন্ন করার জন্য বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে দািয়ত্ব দেওয়া হয়েছে বলে অতিরিক্ত সচিব জানান। তিনি বলেন, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন ‘শরীয়তপুর জেলার জাজিরা ও নড়িয়া উপজেলার পদ্মা নদীর ডান তীর রক্ষা’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ৮ দশমিক ৯০ কিলোমিটার নদীতীর সংরক্ষণ কাজ, ৯ দমমিক ৭৫০ কিলোমিটার ড্রেজিং, ০ দশমিক ০৮৯ কিলোমিটার অ্যান্ড টারমিনেশন এবং  আটটি আরসিসি পাকা ঘাট নির্মাণ কাজ সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে বাস্তবায়ন করা হবে।

কাজটি অত্যন্ত জরুরি বিধায় এটি সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে বাস্তবায়ন করা হবে বলে জানান তিনি। বাংলাদেশ নৌবাহিনী পরিচালিত খুলনা ডকইয়ার্ড প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। আর এ জন্য সরকারের ব্যয় হবে এক হাজার ৭৭ কোটি ৫৮ লাখ ৯ হাজার টাকা।

গত কয়েক দিনে অব্যাহত পদ্মার ভাঙ্গনে শরীয়তপুরের নড়িয়ায় দুইশ’ বছরের পুরনো মূলফৎগঞ্জ বাজারের কয়েক শ’ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙ্গন ঝুঁকিতে পড়েছে পুরনো এ বাজারের আরো বহু ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।

এ বছর বর্ষা মৌসুমের থেকে রাক্ষুসি পদ্মা ভাঙতে ভাঙতে দক্ষিণে পাঁচ কিলোমিটার চলে এসেছে। গত কয়েক দিনে ভাঙন শুরু হয়েছে তিনশ’ বছরের পুরনো ঐতিহ্যবাহী মূলফৎগঞ্জ বাজারের উত্তর পাশ। ইতোমধ্যে এই বাজারে অবস্থিত নুর হোসেন দেওয়ান ও ইমাম হোসেন দেওয়ানদের তিন তলা চারটি ভবনসহ তিন শতাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গিলে খেয়েছে পদ্মা। একেকটি ভবন ২০ থেকে ৩০ সেকেন্ডের মধ্যে দুমড়ে মুচড়ে নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।

এলাকাবাসীর দাবিতে পদ্মার দক্ষিণ তীরে নড়িয়া উপজেলা শহর এবং মূলফৎগঞ্জ বাজারটি রক্ষায় নদীর দক্ষিণ (ডান) তীর রক্ষা বাঁধ প্রকল্প গ্রহণল করে। গত ২ জানুয়ারী তীর রক্ষা বাঁধ নির্মাণের জন্য ১ হাজার ৭৭ কোটি টাকার একটি প্রস্তাব একনেকের বৈঠকে অনুমোদন দেওয়া হয়। বর্ষার আগে এ সব এলাকার হাজার হাজার মানুষ স্থায়ী বেরিবাঁধের দাবিতে সড়ক অবরোধ ও মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে দাবি জানিয়ে আসছিল।

কিন্তু আইনি জটিলতার কারণে বাঁধ নির্মাণ কাজ এখনো শুরু করা হয়নি। বর্ষার শুরু থেকে অব্যাহত ভাঙন শুরু হলে পাঁচ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়ে কিছু জিও ব্যাগ ফেলে নদীর গতি পরিবর্তনের চেষ্টা করে কর্তৃপক্ষ। কিন্ত তাতে তেমন ফল পাওয়া যায়নি।

পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সরকারি ক্রয় কমিটির বৈঠকে প্রকল্পটি অনুমোদন হওয়ার পর প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা দ্রুত কাজ শুরু করবে।