প্রচ্ছদ খেলাধুলা তাহলে কেইনের পায়েই সোনার জুতা?

তাহলে কেইনের পায়েই সোনার জুতা?

রাশিয়া বিশ্বকাপের ফেবারিটদের তালিকায় কখনোই ছিল না গ্যারেথ সাউথগেটের তরুণ ইংল্যান্ড দল। দেখতে দেখতে সেই দলটিই শেষ আটে উঠে এসেছে। কিন্তু এরপরও লুঝনিকি স্টেডিয়ামে ১৫ জুলাইয়ের মায়াবী রাতে ইংল্যান্ড অধিনায়ক হ্যারি কেইনের হাতে বিশ্বকাপ ট্রফি কল্পনা করাটা কিছুটা কঠিনই।

তবে একটা ছবি হয়তো এখনই অনেকের চোখে ভাসছে—প্রথম বিশ্বকাপ খেলতে এসেই সর্বোচ্চ গোলদাতার পুরস্কার ‘গোল্ডেন বুট’ নিয়ে যাচ্ছেন কেইন! ওই ছবিটা শুধুই কল্পনা হয়ে থাকবে না বলেই মনে হচ্ছে।

ইংল্যান্ডের খেলা চার ম্যাচের তিনটিতে মাঠে নেমেছেন টটেনহাম স্ট্রাইকার। এই তিন ম্যাচেই ৬ গোল! বিশ্বকাপে নিজের প্রথম ৩ ম্যাচেই ৬ গোল—কেইনের চেয়ে প্রথম তিন ম্যাচে বেশি গোল করেছেন শুধু তিনজন। হাঙ্গেরির সান্দোর ককসিস, জার্মানির জার্ড মুলার ও আর্জেন্টিনার গিয়ের্মো স্তাবিল। গ্যারি লিনেকারের পর বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গোলদাতাও কেইন। টানা ছয় ম্যাচে গোল করে কেইন ছুঁয়ে ফেলেছেন টমি লটনের ৭৯ বছরের পুরোনো এক কীর্তি। ইংল্যান্ডের হয়ে সর্বশেষ ১৯৩৯ সালে টানা ছয় ম্যাচে গোল করেন লটন।

এখন পর্যন্ত সোনার জুতা জয়ের লড়াইয়ে কেইন সবার ওপরে। ৪ গোল ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো ও রোমেলু লুকাকুর। পর্তুগাল অধিনায়ক লড়াই থেকে ছিটকে পড়েছেন তাঁর দল শেষ ষোলো থেকে বিদায় নেওয়ায়। ছিটকে পড়েছেন ৩টি করে গোল করা ইয়েরি মিনা ও দিয়েগো কস্তাও। টুর্নামেন্টে টিকে থাকা এডিনসন কাভানি, কিলিয়ান এমবাপ্পে, আরতিয়ম জিউবা ও দেনিস চেরিশেভেরও নামের পাশে ৩টি করে গোল।

পেছন থেকে উঠে এসে এঁদের কারও পক্ষে কেইনকে ছাড়িয়ে যাওয়া কতটা সম্ভব? বিশ্বকাপ মহাকাব্যে ‘সোনার জুতা’ অধ্যায়ে চোখ বুলিয়ে এলে বলতেই হয়—সে সম্ভাবনা খুব ক্ষীণ! বিশ্বকাপের ইতিহাসে এক আসরে সর্বোচ্চ গোল ১৩টি, ১৯৫৮ বিশ্বকাপে যে কীর্তি গড়েন ফ্রান্সের জাস্ট ফন্টেইন। ১৯৭৮ থেকে ১৯৯৮, টানা ছয় বিশ্বকাপেই ৬ গোল করে সর্বোচ্চ গোলদাতা। যে সংখ্যাটা এরই মধ্যে ছুঁয়ে ফেলেছেন কেইন। ছয়ের বৃত্ত ২০০২ বিশ্বকাপে ভাঙেন রোনালদো। পরের দুবার দুই জার্মান মিরোস্লাভ ক্লোসা ও টমাস মুলার সর্বোচ্চ সোনার জুতা জিতে নেন ৫টি করে গোল করেই। গত বিশ্বকাপে দৃশ্যপটে আসেন হামেস রদ্রিগেজ, ৬ গোল করে জেতেন সোনার জুতা।

এবার বিশ্বকাপে কেইনের অভিষেকই হয়েছে হ্যাটট্রিক করে। পানামার বিপক্ষে ওই ৩ গোলের পর দ্বিতীয় ম্যাচে তিউনিসিয়ার জালে ২টি। গ্রুপ পর্বে ইংল্যান্ডের শেষ ম্যাচে ছিলেন বিশ্রামে। ফিরেই শেষ ষোলোয় কলম্বিয়ার বিপক্ষে পেনাল্টিতে গোল। কে জানে, কয় গোলে গিয়ে থামেন ইংল্যান্ড স্ট্রাইকার।
কেইন মাঠে নামলেই তাঁর পায়ে এসে লুটাবে গোল—এটা যেন নিয়মই হয়ে গেছে। বাঁ পা, ডান পা, হেড, পেনাল্টি শট—গোল পাচ্ছেন সম্ভাব্য সব উপায়েই! কিন্তু এই বিশ্বকাপে মনে রাখার মতো গোল কি পেয়েছেন ইংল্যান্ডের স্ট্রাইকার? দর্শনীয় গোল বলতে যা বোঝায়, কেনের ৬টি গোলের একটিও তা নয়। কেইন নিজেও হয়তো এটা মেনে নেবেন।

৬টি গোলের চারটি করেছেন বাঁ পা, ডান পা, হেডে। কলম্বিয়ার বিপক্ষে পরশুর গোলটি পেনাল্টি কিকে। আরেকটি গোল যে কীভাবে করেছেন, তা হয়তো কেইন নিজেও জানেন না! পানামার বিপক্ষে হ্যাটট্রিক গোল ছিল সেটি। এক সতীর্থের নেওয়া শট পানামার জালে ঢুকেছিল অন্যদিকে তাকিয়ে থাকা কেইনের গায়ে লেগে!

অবশ্য ঠিক সময়ে ঠিক জায়গায় থাকাও তো একজন স্ট্রাইকারের বড় গুণ! সেই গুণটা কেইনের খুব ভালোই আছে বলতে হবে।