ভারতে গরু জবাই থেকে শুরু করে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে যখন অসহিষ্ণুতা চলছে, তখন ইসলামের নবী হজরত মুহাম্মদ সা:-এর প্রশস্তি গেয়ে চলেছেন এক হিন্দু পণ্ডিত। মুম্বাইয়ে তার কবিতায় উঠে এসেছে মহানবীর প্রশস্তি। সেই পণ্ডিত রামসাগর পৃথ্বিপাল ত্রিপাঠীর পরিবার আবার রামলীলা বিন্যাসের পৃষ্ঠপোষক, যারা অযোধ্যার রাম মন্দিরের ট্রাস্টি।
ইসলাম ধর্মের নবী হিসেবে নয়, মুহাম্মদ সা:কে সাগর ত্রিপাঠী দেখেন মানবতার প্রতীক হিসেবে, সাম্প্রদায়িকতার সম্প্রীতির প্রচারক হিসেবে।
মুম্বাইয়ে যে ফ্ল্যাটে সাগর ত্রিপাঠী থাকেন, সেখানে তার অর্জিত বিভিন্ন পুরস্কারের সঙ্গে রয়েছে মুসলিমদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কুরআন, মুহাম্মদ সা:-এর জীবনী। সেই সঙ্গে আছে হিন্দুদের পবিত্র গ্রন্থ গীতা ও রামায়ণ। তার বসার ঘরে বিশাল সোফার পেছনে রয়েছে কিছু জায়নামাজ, যাতে তার মুসলিম ভক্তরা এলে নামাজ পড়তে পারেন।
অযোধ্যার পণ্ডিত পরিবারের একজন হয়ে বাবরি মসজিদের স্থানে রাম মন্দির নির্মাণের বিষয়টিকে কিভাবে দেখেনÑ এই প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এটি এখন আদালতে বিচারাধীন বিষয়, আমি বেশি কিছু বলতে চাই না। তবে এটুকু বলতে পারি, যদি মানুষ তাদের অহমবোধ ছাড়ে, আর রাজনীতিকেরা দূরে থাকে, তবে এই সমস্যার সমাধান সহজেই সম্ভব।’
উত্তর প্রদেশের সুলনতাপুর জেলায় জন্ম নেয়া সাগর ত্রিপাঠীর কবি হয়ে ওঠা সহজ ছিল না। এলাহাবাদ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেয়ার পর পরিবার চাইছিল, তাদের ছেলে হবে সরকারি কর্মকর্তা। কিন্তু উর্দু কবি রঘুপতি সাহাই ফিরাকের প্রভাবে কবিজীবনই বেছে নেন সাগর ত্রিপাঠী। হাসতে হাসতে সাগর ত্রিপাঠী বলেন, ‘আমার মনে হয়েছিল, আমি বরং তার জন্য চা-পানি আনা নেয়া করব, আর তার কবিতা শুনব’।
তরুণ বয়সে মুম্বাইয়ে পাড়ি জমানোর পর অর্থ রোজগার ভালোই করেছিলেন তিনি। তিনি বলেন, ‘কিন্তু তার মধ্যেও আমি মনের মাঝে একধরনের শূন্যতা অনুভব করতাম, মনে হতো কী যেন নেই, আমার সেই শূন্যতা ভরিয়ে দিয়েছে কবিতা।’ সাগর ত্রিপাঠীর প্রশংসা করে খ্যাতিমান উর্দু কবি আবদুল আহাদ সাজ বলেন, ‘সমকালীন উর্দু মুশায়রা (কবিতার আড্ডা) জগতে সাগর সাহেব একটি গুরুত্বপূর্ণ নাম, তার কাজ সত্যিই প্রশংসনীয়।’