প্রচ্ছদ আর্ন্তজাতিক সৌদি না ইরান, কার পক্ষে ইমরান

সৌদি না ইরান, কার পক্ষে ইমরান

২২ বছর আগেই ২২ গজের মাঠ ছেড়ে যোগ দেন রাজনীতিতে। যাত্রা শুরুর ২২ বছর পর সফলতা পেয়েছেন তিনি। কিন্তু ২২ সংখ্যাটি তার পিছু ছাড়নি। হয়েছে দেশের ২২তম প্রধানমন্ত্রী। তিনি পাকিস্তানের নতুন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান।

মাঠ ছেড়ে রাজনীতি সফলতা পেলেও তার জন্য অপেক্ষা করছে কঠিন পরীক্ষা। পরস্পরের সঙ্গে দ্বন্দ্বে লিপ্ত দুই মুসলিম দেশ সৌদি আরব ও ইরান- এর মধ্যে কাকে বেছে নেবেন তিনি? নবনির্বাচিত প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে পাকিস্তানিরা বেশ আনন্দিত। ইমরান খান যেমনি বিখ্যাত ক্রিকেটার ছিলেন তেমনি দেখতেও সুদর্শন। কিন্তু খেলার মাঠের কৌশল আর রাজনীতির কৌশলে অনেক পার্থক্য রয়েছে।

বিশেষ করে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে পাকা খোলোয়াড় ছাড়া সুফল পাওয়া বেশ কঠিন। এ খেলায় জিততে হলে ইমরান খানকে খেলার মাঠের মতোই রাজনীতির মাঠেও কৌশলী হতে হবে।

নির্বাচনের আগে ইমরান খান পশ্চিমা বিশ্ব ও তাদের মডেলের সমালোচনা করেছেন। কিন্তু তার দুই ছেলে সাবেক স্ত্রী ব্রিটিশ ইহুদি জেমিমা খানের সন্তাদের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে আসতে নিষেধ করেছিলেন ইমরান খান।

ইমরান খান আসলে পশ্চিমা মডেলকে ত্যাগ করতে পারবেন কিনা তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। কারণ তিনি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা করেছেন এবং ইংল্যান্ড দলের হয়ে ক্রিকেট খেলেছেন। তার ক্যারিয়ার শুরু হয়েছে পশ্চিমা সংস্কৃতিতে। পশ্চিমা সংস্কৃতির সঙ্গে তার সম্পর্ক দীর্ঘদিনের।

বর্তমান সময়ে বিশ্বরাজনীতিতে পাকিস্তান গুরুত্বপূর্ণ একটি দেশ। ইন্দোনেশিয়ার পর বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম দেশ এটি। দেশটির হাতে রয়েছে পারমাণবিক অস্ত্র। সামরিক সক্ষমতায় পাকিস্তান রয়েছে বিশ্বের সেরা শক্তিধর তালিকায়।

বিশ্বরাজনীতির পাশাপাশি পাকিস্তানের ভূমিকা দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এ অঞ্চলে সৌদি আরব ও ইরান দীর্ঘদিন ধরে পরস্পরের বিরুদ্ধে জয়ী হতে প্রতিযোগিতায় ব্যস্ত। দুই দেশে এখন সাপে-নেউলে।

ইমরান খান ইতিমধ্যেই ইরানের সঙ্গে কয়েক দফা কথা বলেছেন। দেশটির সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ঘোষণা দিয়েছেন। ইমরান খান ইরান ছাড়াও সম্প্রতি তুরস্কের সঙ্গে সম্পর্কের ঘোষণা দিয়েছেন। তুর্কিদের তিনি ভাই হিসেবে অভিহিত করেছেন।

প্রকৃতপক্ষে পাকিস্তানে শাসক যিনিই হোন না কেন সৌদি আরব ও উপসাগরীয় দেশগুলোর সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্ক বরাবরই অত্যন্ত গভীর ও দৃঢ়। বিশেষ করে সৌদি আরবে পাকিস্তানের সবচেয়ে বেশি প্রবাসী রয়েছে। দেশটির সঙ্গে পাকিস্তানের বাণিজ্য যোগাযোগও অনেক বড়। পাকিস্তানের বৈদেশিক মুদ্রার বেশির ভাগ আসে সৌদি আরব থেকে।

অন্যদিকে ইমরান খান পশ্চিমাদের থেকে মুখে মুখে দূরত্বের কথা বললেও পাকিস্তানের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাপক প্রভাব রয়েছে। সৌদি আরবও যুক্তরাষ্ট্রর মিত্র দেশ। অপর দিকে ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রর মধ্যে সংঘাত চলছে। সৌদি আরবের সঙ্গেও ইরানের সম্পর্ক উদ্বেগের পর্যায়ে।

পাকিস্তানের নেতৃত্বের দ্বন্দ্ব দেশটির নেতাদের হয় কারাগারে, না হয় মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছে। অভ্যন্তরীণ সংঘাত পাকিস্তানকে ইমেজ নষ্ট করেছে, অস্থিরতা বাড়িয়েছে এবং অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল করেছে।

তবে ইমরান খান সাবেক প্রধানমন্ত্রীর তুলনায় ভিন্ন সংস্কৃতি থেকে এসেছেন। উপসাগরীয় দেশগুলোর সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক, পারস্পরিক অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সমঝোতায় তার উপকৃত হওয়ার সুযোগ রয়েছে।

কিন্তু সৌদি আরব ও ইরানের সংঘাতের কারণে পাকিস্তান উভয় সংকটে রয়েছে। ইরানের সঙ্গে তিনি সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটালে সৌদি আরব তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে পারে। সেক্ষেত্রে দেশটির বিশাল সংখ্যার প্রবাসীদের নিয়ে সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। সৌদি আরবের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক হারাবে।