প্রচ্ছদ অর্থনীতি সাগরের ১২ নম্বর ব্লকে তেল-গ্যাস মজুদ থাকার নমুনা

সাগরের ১২ নম্বর ব্লকে তেল-গ্যাস মজুদ থাকার নমুনা

বাংলাদেশের সমুদ্রসীমাসাগরের ১২ নম্বর ব্লকে বিপুল পরিমাণ তেল-গ্যাস মজুদ থাকার নমুনা পাওয়া গেছে। এই ব্লকের তিন হাজার ৫৬০ লাইন কিলোমিটার দ্বিমাত্রিক জরিপ করে সম্ভাবনাময় পাঁচটি লিড বা প্রোসপেক্ট পাওয়া গেছে। এর মধ্যে তিনটিকে বেশ সম্ভাবনাময় হিসেবে দেখছে জ্বালানি বিভাগ।

গত বছরের ১৪ মার্চ পেসকো দাইয়ু করপোরেশন নামের দক্ষিণ কোরিয়ার একটি কোম্পানির সঙ্গে সাগরের ১২ নম্বর ব্লকে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য উৎপাদন বণ্টন চুক্তি (পিএসসি) সই করে পেট্রোবাংলা। সমুদ্র উপকূল থেকে ব্লকটির দূরত্ব ১৮০ কিলোমিটার, অর্থাৎ এটি বঙ্গোপসাগরের ১৮০ কিলোমিটার গভীরে। ব্লকটির ওপর পানির গভীরতা গড়ে একহাজার ৭০০ মিটার।

জ্বালানি বিভাগ সূত্র জানায়, তেল গ্যাসের অবস্থা আরও নিশ্চিত হতে আগামী নভেম্বর থেকে দুই হাজার লাইন কিলোমিটার তৃতীয় মাত্রার বা ত্রিমাত্রিক ভূকম্পন জরিপ করা হবে।

আগামীকাল বৃহস্পতিবার (৩০ আগস্ট) বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠক হওয়ার কথা। সম্ভাব্য এ বৈঠকে এই বিপুল পরিমাণ তেল-গ্যাস থাকার সম্ভাবনার কথা জানাতে একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছে জ্বালানি বিভাগ।

জানতে চাইলে পেট্রোবাংলার একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘দ্বিতীয় মাত্রার বা দ্বিমাত্রিক (টু-ডি) ভূকম্পন যে জরিপ করা হয়েছে তাতে দেখা যায়, বেশ কয়েকটি এলাকায় সম্ভাবনা রয়েছে। এর মধ্যে দুটি সম্ভাবনা থাকলেই তাকে বাণিজ্যিকভাবে লাভজনক বলে ধরা হয়। তবে এর চেয়ে ব্লক ১২-তে আরও বেশি সম্ভাবনা রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। দ্বিমাত্রিক জরিপের চেয়ে তৃতীয় মাত্রার বা ত্রিমাত্রিক জরিপ আরও শক্তিশালী। এতে তেল-গ্যাসের পরিমাণ সম্পর্কে আরও নিশ্চিত ধারণা পাওয়া যেতে পারে।’

এর আগে বাংলাদেশের সাগর থেকে শুধুমাত্র সাঙ্গু গ্যাসক্ষেত্র থেকে গ্যাস তোলা হয়েছে। এই গ্যাসক্ষেত্রটি ১৯৯৬ সালে আবিষ্কার করে ব্রিটিশ তেল-গ্যাস কোম্পানি কেয়ার্ন এনার্জি। ১৯৯৮ সালে সেখান থেকে গ্যাস উৎপাদন শুরু করে কোম্পানিটি। সাঙ্গু আনুষ্ঠানিকভাবে নিঃশেষ ও পরিত্যক্ত হয় ২০১৩ সালের ১ অক্টোবর। এরপর সাগরের আর কোনও ক্ষেত্রে তেল-গ্যাসের অনুসন্ধান করা হয়নি।

২০১২ সালের ১৪ মার্চ মিয়ানমারের কাছ থেকে বঙ্গোপসাগরের একলাখ ১১ হাজার ৬৩১ বর্গকিলোমিটার এবং ২০১৪ সালের ৮ জুলাই ভারতের কাছ থেকে ১৯ হাজার ৪৬৭ বর্গকিলোমিটার এলাকা পায় বাংলাদেশ। এরপর সব মিলেয়ে ব্লক পুনর্বিন্যাস করে ২৬টি ব্লকে ভাগ করা হয় গোটা সমুদ্রসীমাকে। কিন্তু এখন এর মধ্যে মাত্র তিনটি ব্লকে কার্যক্রম শুরু হয়েছে। বাকি ২৩ ব্লক অলস পড়ে আছে।

এ বিষয়ে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ শামসুল আলম বলেন, ‘দেশের সাগরে ২৬টি ব্লক রয়েছে। কিন্তু কাজ হচ্ছে মাত্র তিনটি ব্লকে। সরকার উদ্যোগী হলে সাগরে আরও বেশি পরিমাণ গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা আছে। মিয়ানমার তাদের সমুদ্রবক্ষে যেভাবে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান কার্যক্রম পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়ন করেছে এবং করে যাচ্ছে, সে তুলনায় বাংলাদেশ যথেষ্ট পেছনে পড়ে রয়েছে।’ বেশি দামের গ্যাস আমদানি না করে দেশের গ্যাস উত্তোলনে সরকারকে আরও মনোযোগী হওয়া দরকার বলে মত দেন তিনি।

প্রসঙ্গত, কোরীয় কোম্পানি দাইয়ু ছাড়া বর্তমানে ভারতীয় কোম্পানি অয়েল অ্যান্ড ন্যাচারাল গ্যাস করপোরেশন (ওএনজিসি) অগভীর সমুদ্রে ৪ ও ৯ নম্বর ব্লকে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের কাজ করছে।