প্রচ্ছদ আজকের সেরা সংবাদ সব মানুষের স্রোত ট্রেন বাস লঞ্চে

সব মানুষের স্রোত ট্রেন বাস লঞ্চে

ট্রেন, লঞ্চ, বাস-বাহন যা-ই হোক, চিত্র একই। ঈদে ঘরে ফেরা মানুষের চাপে যেন তিল ধারণের ঠাঁই নেই। ঈদের আগে শেষ কর্মদিবস ছিল গতকাল বৃহস্পতিবার। সকাল থেকে রেলস্টেশন, লঞ্চ ও বাস টার্মিনালে ছিল মানুষের স্রোত।

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির হিসাব অনুযায়ী, এবারের ঈদে রেল, সড়ক ও নৌপথে ঢাকা ছাড়ছে প্রায় ১ কোটি ১৫ লাখ যাত্রী। অল্প সময়ে এই বিপুল পরিমাণ যাত্রী সামাল দেওয়ার মতো প্রয়োজনীয় গণপরিবহন না থাকা, পর্যাপ্ত প্রস্তুতির অভাবে এবারের ঈদযাত্রায়ও কোথাও কোথাও সঙ্গী হয়েছে ভোগান্তি, হয়রানি।

জোড়াতালির মহাসড়কে কোথাও কোথাও ভোগান্তি: ঈদের আগে তাড়াহুড়ো করে ভাঙাচোরা মহাসড়কের সংস্কারকাজ শেষ করা হয়। কিন্তু ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের যশোর থেকে অভয়নগর পর্যন্ত প্রায় ৩৮ কিলোমিটারের মেরামতকাজ বর্ষায় ধুয়ে গেছে। ঈদযাত্রা স্বাভাবিক রাখার জন্য সড়কের মাঝে ছোট-বড় গর্তে ইট ফেলে যানবহন চলাচল ঠিক রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু যানজটে ঈদযাদীদের ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।

এই মহাসড়কের বাসচালক পলাশ শেখ বলেন, রাস্তা খারাপের কারণে খুলনা থেকে যশোর পর্যন্ত যেতে এক ঘণ্টা বেশি সময় লাগছে।

ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের কালিয়াকৈরের চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকায় গতকাল দিনব্যাপী ছিল যানজট। যানবাহন চলেছ ধীরে। উত্তরবঙ্গগামী যাত্রীরা বেশি ভোগান্তিতে পড়ে বঙ্গবন্ধু সেতু পার হয়ে। ঢাকা-রংপুর মহাসড়কের বগুড়ার প্রথম বাইপাস সড়ক এলাকাতেও যানজট ছিল।

শ্যামলী পরিবহনের বাসযাত্রী শফিকুল ইসলাম বলেন, গত বুধবার রাতে ঢাকা থেকে রংপুরের উদ্দেশে রওনা দেন। ভোর ৫টায় বঙ্গবন্ধু সেতু পার হয়ে তীব্র যানজটে আটকা পড়েন। বঙ্গবন্ধু সেতু থেকে কড্ডার মোড় পৌঁছাতে সকাল ৮টা বেজে যায়। আধা ঘণ্টার পথ পাড়ি দিতে সময় লাগে সাড়ে তিন ঘণ্টা।

ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে সিলেট অংশে তিন কিলোমিটার সড়কে খানাখন্দের কারণে স্বাভাবিক গতিতে চলতে পারেনি যানবাহন। কিছু অংশে পিচ উঠে সড়ক কাদামাটির রাস্তায় পরিণত হয়েছে।

দেরিতে ট্রেন ছাড়ায় বিষাদ: ঈদযাত্রার পঞ্চম দিনে যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড় ছিল কমলাপুর রেলস্টেশনে। সকাল থেকে কমলাপুর ছেড়ে যাওয়া প্রতিটি ট্রেন যাত্রীতে ঠাসা ছিল। গতকাল পাঁচটি বিশেষ ট্রেনসহ মোট ৬৯টি ট্রেন ঢাকা ছেড়ে যায়। এর মধ্যে উত্তরবঙ্গগামী কয়েকটি ট্রেনের বিলম্ব আনন্দযাত্রায় বিষাদ ছড়িয়েছে।

রাজশাহীগামী সিল্কসিটি ট্রেন ছাড়ার নির্ধারিত সময় ছিল ২টা ৪০ মিনিটে। প্রায় তিন ঘণ্টা দেরিতে ট্রেনটি কমলাপুর পৌঁছায়। যাত্রী নিয়ে ট্রেনটি স্টেশন ছাড়ে সন্ধ্যা ছয়টায়।
চিলাহাটির নীলসাগর এক্সপ্রেসের যাত্রী বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা হামিদুর রহমান বলেন, ‘সড়কে দেরি হবে ভেবে ট্রেনের টিকিট কাটলাম। সেটিও তিন ঘণ্টা দেরি। সৈয়দপুর পৌঁছাতে রাত ৯টার মতো বেজে যাবে। রাতে যানবাহন পাওয়াটা কঠিন হয়ে পড়বে।’ ট্রেনটি ছাড়ার সময় ছিল সকাল ৮ টা, কিন্তু বেলা পৌনে ১১টায় ট্রেনটি কমলাপুর আসে।

খুলনাগামী সুন্দরবন এক্সপ্রেস সকাল ৬টা ২০ মিনিটে ছাড়ার কথা থাকলেও তা ছেড়ে গেছে ৭টা ২৫ মিনিটে। রাজশাহীগামী ধূমকেতু এক্সপ্রেস ৫৫ মিনিট দেরিতে ছেড়েছে। সকাল ৯টায় রংপুর এক্সপ্রেস ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও সকাল সাড়ে ১০টায় ছেড়ে যায়। দিনাজপুরগামী একতা এক্সপ্রেস আধা ঘণ্টা দেরি করেছে। সকাল সোয়া ৯টার লালমনিরহাট ঈদ স্পেশাল ট্রেনটি বেলা ১টায় ছাড়ে।

কমলাপুর রেলস্টেশনের ব্যবস্থাপক সিতাংশু চক্রবর্তী বলেন, সময়সূচি অনুযায়ী ট্রেনে উঠতে যে সময় লাগে, নামার সময় এর চেয়ে বেশি সময় লাগে। এখন সে সময়ে হচ্ছে না। যেখানে ২ মিনিট সময় দেওয়া আছে, সেখানে ১০ মিনিটও লেগে যায়, যার প্রভাবটা পড়ছে।

বাসে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়: গাবতলী ও মহাখালী বাস টার্মিনালে দালালদের দৌরাত্ম্য, বাড়তি ভাড়া আদায় ও বাসের সংকট নিয়ে অভিযোগ করে কয়েকজন যাত্রী। তবে ভোগান্তিতে পড়লেও অভিযোগ কেন্দ্রে যাওয়ার আগ্রহ নেই ঘরমুখী যাত্রীদের।

গতকাল সকালে গাবতলী বাস টার্মিনালে কথা হয় আবদুস সালামের সঙ্গে। রংপুর যাওয়ার বাস খুঁজছেন। এক দালাল তাঁকে বিশেষ বাসে যাওয়ার প্রস্তাব দেয়। ৬০০ টাকা ভাড়া হলেও ১১০০ টাকা দাবি করে দালাল।

গাবতলীতে বিআরটিএ পর্যবেক্ষক দলের সদস্যসচিব মো. কামরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ‘১১ জুন থেকে আমরা এখানে কাজ করছি। এখন পর্যন্ত কোনো যাত্রী আমাদের কাছে অভিযোগ নিয়ে আসেনি।’

মহাখালী বাস টার্মিনালে বাড়তি ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ করেন রামিজ শাহী। একতা বাসে বগুড়ার ৩৫০ টাকার ভাড়া ঈদ উপলক্ষে ৬০০ টাকা নেওয়া হচ্ছে। যদিও টিকিটে লিখে দেওয়া হচ্ছে ৪৫০ টাকা।

লঞ্চবোঝাই অতিরিক্ত যাত্রী: গতকাল ভোর থেকে সদরঘাট টার্মিনালেও ছিল যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড়। সকাল ৬টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ছেড়ে যাওয়া ৭৯টি লঞ্চের বেশির ভাগের ছাদে অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই ছিল। বরগুনা, ঝালকাঠি, ভোলা ও হাতিয়াসহ বেশ কয়েকটি পথের যাত্রীরা লঞ্চ ছাড়ার অনেক আগেই লঞ্চে উঠে বসে থাকে।

ওয়াইজঘাট ও বাদামতলী এলাকায় টার্মিনালের পন্টুন ও আশপাশের এলাকার সড়কগুলোতে হকাররা পসরা সাজিয়ে বসে আছেন। এ ছাড়া সড়কে যত্রতত্র যানবাহন পার্কিংয়ের কারণে টার্মিনাল এলাকায় যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে।

ধানমন্ডির বাসিন্দা বিলকিস বেগম রাত পৌনে আটটার লঞ্চে যাবেন ঝালকাঠি। বেলা ১১টায় ঘাটে এসে হাজির। বিলকিস বলেন, ‘ঢাকার রাস্তায় যে জ্যাম। শুনলাম, যাত্রী ভরলেই লঞ্চ ছাইড়া দ্যায়। কোনো টাইমটেবিল নাই।’

বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান কমোডর এম মোজাম্মেল হক প্রথম আলোকে বলেন, যাত্রী পূর্ণ হলেই লঞ্চ ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। বাদামতলী ও ওয়াইজঘাট টার্মিনাল এলাকায় সড়কে হকার উচ্ছেদ ও যানজট নিরসনের জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দক্ষিণাঞ্চলের ৪১টি পথের যাত্রী বহনের জন্য ২০৯টি লঞ্চ চলাচল করছে।