প্রচ্ছদ খেলাধুলা শেষ পর্যন্ত প্রকাশ্যে নিজের হতাশার কথা জানালেন মুশফিক

শেষ পর্যন্ত প্রকাশ্যে নিজের হতাশার কথা জানালেন মুশফিক

আসরের উদ্বোধনী ম্যাচে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন রংপুর রাইডার্স অলআউট হয়েছিল মাত্র ৯৮ রানে, সে রান তাড়া করতে আবার চিটাগং ভাইকিংসের লেগেছিল ১৯ ওভার। দিনের পরের ম্যাচে ঢাকা ডায়নামাইটস ১৮৯ রান করলেও রাজশাহী কিংস অলআউট হয়ে যায় ১০৬ রানে।

টুর্নামেন্টের পরের তিনদিনেও রানবন্যার ম্যাচ দেখা যায়নি কোনো। ঢাকা ডায়নামাইটস নিজেদের দুই ম্যাচেই বড় সংগ্রহ (১৮৯ ও ১৯২) দাঁড় করালেও অন্য দলগুলোর রান করতে ধুঁকতে হয়েছে বেশ। এর অন্যতম কারণ দলগুলোর স্থানীয় ব্যাটসম্যানদের নিষ্প্রভতা। এখনো পর্যন্ত শেষ হওয়া সাত ম্যাচে স্থানীয় ক্রিকেটারদের কেউই করতে পাননি ফিফটি, খেলতে পারেননি দায়িত্বশীল কোনো ইনিংস।

বুধবার দিনের প্রথম ম্যাচে তরুণ আফিফ হোসেন ধ্রুবর ৪৫ রানের ইনিংসটিই এখনো পর্যন্ত বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানদের সেরা ইনিংস। এছাড়া ঢাকা ডায়নামাইটসের প্রথম ম্যাচে ১৪ বলে ৩৮ রানের তুফান চালিয়েছিলেন শুভাগত হোম। শেষ হওয়া সাত ম্যাচে স্থানীয় ক্রিকেটারদের ব্যাটিং পারফরম্যান্সের হাইলাইটস এ দুটি ইনিংসই।

কিন্তু বিদেশিদের মধ্যে হযরতউল্লাহ জাজাই, রাইলি রুশো, ডেভিড ওয়ার্নার কিংবা পল স্টার্লিংরা পেয়েছেন পঞ্চাশের দেখা। জাজাই দেখিয়েছেন মিরপুরের উইকেটে মেরে খেলে রান করা সম্ভব, আবার রুশো-ওয়ার্নাররা প্রমাণ করেছেন, ধরে খেলেও ইনিংস গোছানো সম্ভব। অথচ এই কাজটিই করতে পারেননি দেশের স্থানীয় ক্রিকেটাররা।

প্রথম ম্যাচের পর থেকেই এ না পারার কারণ হিসেবে বারবার তুলে ধরা হচ্ছিলো মিরপুরের স্লো এন্ড লো উইকেটের কথা। যেখানে শটস খেলা কঠিন, বল ব্যাটে আসে ধীরে। বড় শট খেলতে অপেক্ষা করতে হয় ব্যাটসম্যানদের। কিন্তু বিদেশি ব্যাটসম্যানদের অনেকেই উইকেটের সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে খেলেছেন ভালো ইনিংস। যা থেকে প্রমাণ হয়, উইকেট কঠিন হলেও সম্ভব ইতিবাচক ব্যাটিং।

এ কথার সঙ্গে একমত বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান এবং চিটাগং ভাইকিংসের অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম। তার মতে উইকেট বড় একটি ফ্যাক্টর হলেও, ‘স্মার্ট ক্রিকেট’ খেলে এখানেও ভালো করা সম্ভব। সে স্মার্ট ক্রিকেট কেমন? সে ব্যাখ্যাও দিয়েছেন মুশফিক।

বুধবার সিলেটের বিপক্ষে ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘এটা (উইকেটের প্রভাব) তো অবশ্যই। আপনি যদি কুমিল্লা-রংপুরের ম্যাচ দেখেন, ওখানে কিন্তু একই কথা হয়েছে। এই উইকেটে প্রতি বলে বড় শট খেলা কঠিন। আজ ডেভিড ওয়ার্নারের মত প্লেয়ার দেখেন, ও কিন্তু ১৬০-৭০ স্ট্রাইক রেটে খেলে থাকে। আজ সে ৩০ বলে ৩০ রানে ছিল, পরে সেটা পুষিয়ে নিয়েছে। যদিও আফিফ দারুণ ইনিংস খেলেছে, সেখানে প্রেশার কিছুরা কমেছে। যদি সে স্ট্রাগল করত তাহলে ওয়ার্নারকে অবশ্যই চান্স নিতে হত।’

তিনি আরও বলেন, ‘এখানে যারা বুদ্ধি দিয়ে স্মার্ট ক্রিকেট খেলতে পারবে তারাই রান করতে পারবে। যাদের পাওয়ার হিটিং এর সামর্থ্য আছে তাদের বাড়তি সুবিধা থাকে। প্রথম দিকে যদি রান কমও থাকে তাহলে পরে কভার করে ফেলতে পারে। এখানে আপনি ২০০ স্ট্রাইকে না, হয়তো আপনি ১৩০-৪০ স্ট্রাইক রেট রান করলে উইনিং টোটাল হবে। ব্যাটসম্যানরা যদি ১৫০ রানও করতে পারি, তাহলে দিনে বা রাতে উইনিং টোটাল হবে।’

এ সময় স্থানীয় ক্রিকেটারদের না পারার কারণ ব্যাখ্যা করতে মুশফিক বলেন, ‘যারা জাতীয় দলের বাইরে আছে তাদের এখানে ভালো করাটা কঠিন। সারা বছর কিন্তু এই একটা (টি-টোয়েন্টি) টুর্নামেন্টই তারা খেলে। এমনকি অনুশীলন ম্যাচও খেলে না। তারা এসেই ক্লিক করাটা তাদের জন্য একটু কঠিন হয়ে যায়। আমরা যারা জাতীয় দলে খেলি আমাদের সঙ্গে তুলনা করলে তো বটেই, আমরা সারা বছরই তিনটা ফরম্যাটে খেলি। এমনকি বাংলাদেশেও খেলি। আমাদের জন্য তুলনামূলক সহজ। এরপরও যারা এসেই ভালো খেলছে তারা আউটস্ট্যান্ডিং। আমরাও তাদের কাছ থেকে শিখতে পারি, তারা কিভাবে খেলছে। হয়ত কারো কারো হারানোরও কিছু থাকে না। অনেককে বাড়তি দায়িত্ব নিয়ে খেলতে হয়। আমার মনে হয় যত দিন যাবে জাতীয় দলের খেলোয়াড়রাও আরও বড় বড় ইনিংস খেলবে এবং তারাই লিড দেবে।’

মুশফিক মনে করেন উইকেট যেমনই হোক, খেলোয়াড়রা যদি নিজেদের মানিয়ে নেয়ার ক্ষমতা বাড়াতে পারে তাহলে যেকোনো জায়গায়ই রান করা সম্ভব। তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয় উইকেটের চেয়ে প্লেয়ারদের এডাপ্টিবিলিটি বাড়ানো উচিত। বিশ্বে যেসব টি-টোয়েন্টি খেলা হয়, অনেক রান হয়। আমাদের এখানে একটু ভিন্ন। আমরা তো জানি আমাদের এখানে কি কন্ডিশন, কি এখান থেকে আসতে পারে। বোলার বা ব্যাটসম্যান কি আশা করতে পারে। আমাদের মানিয়ে নেওয়ার সামর্থ্য আরও বাড়ানো উচিত। সে অনুযায়ী যদি খেলতে পারি তাহলে এই স্কোরগুলো আরও বড় হত। সেটা হলে দর্শকরাও আরও বেটার ম্যাচ দেখতে পারবে।’