প্রচ্ছদ আজকের সেরা সংবাদ রাষ্ট্র মেরামতে সুজনের ১৮ সংস্কার প্রস্তাব

রাষ্ট্র মেরামতে সুজনের ১৮ সংস্কার প্রস্তাব

রাজনৈতিক সংস্কৃতি, নির্বাচন পদ্ধতি, সংবিধান সংশোধন, বিকেন্দ্রীকরণ ও স্থানীয় সরকার, স্বাধীন বিচার বিভাগ প্রতিষ্ঠা, নির্বাচন কমিশন সংস্কারসহ ১৮টি প্রস্তাব দিয়েছে সুশাসনের জন্য নাগরিক—সুজন।

এসব সংস্কার প্রস্তাবের আলোকে জাতীয় সনদ তৈরি করার দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি। দেশের চলমান সংকট থেকে উত্তরণের জন্য এসব সংস্কার জরুরি বলে মনে করছে তারা।

আজ বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর মহাখালীর ব্র্যাক সেন্টারে বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কার ও নাগরিক ভাবনা শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় এসব সংস্কার প্রস্তাব তুলে ধরে সুজন।

অনুষ্ঠানের শুরুতে ‘রাষ্ট্র মেরামতের লক্ষ্যে রাজনৈতিক সংস্কার’ শিরোনামে প্রস্তাব পাঠ করেন সুজনের প্রধান সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার। এতে বলা হয়, ১৯৯০ সালে তিন জোটের রূপরেখা স্বাক্ষর সফল হলেও ব্যর্থ হয়েছে তার বাস্তবায়ন। তিন জোটের রূপরেখার আদলেই নতুন জাতীয় সনদ স্বাক্ষর করতে উদ্যোগ নিতে হবে।

গোলটেবিলে অংশ নেওয়া সব বক্তাই সংস্কারের পক্ষে তাঁদের মতামত তুলে ধরেন। সবার শেষে অনুষ্ঠানের সভাপতি সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এম হাফিজউদ্দিন খান বলেন, রাষ্ট্রের মেরামত জরুরি হয়ে পড়েছে। দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়, এটা বারবার প্রমাণিত হয়েছে। তাই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মতো কিছু একটা বের করতে হবে।

অনুষ্ঠানে সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ ছাড়া সমস্যার সমাধান হবে না।

এম সাখাওয়াত হোসেন আরও বলেন, উদার গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ক্রমেই সংকুচিত হয়ে পড়ছে। সংক্রামক ব্যাধির মতো উগ্রপন্থীদের উত্থান ঘটছে বিশ্বজুড়ে। তাই এখানেও এমন শঙ্কা আছে।

সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, শাসনব্যবস্থা প্রায় ভেঙে পড়েছে। এভাবে চলতে থাকলে দেশ অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত হবে। তাই আলোচনার মতামতের ভিত্তিতে সংস্কার প্রস্তাব সংশোধন করে সারা দেশে জনমত তৈরি করা হবে।

মানবাধিকার কর্মী হামিদা হোসেন বলেন, আইয়ুব খানের সময়েও অনেকটা স্বাধীনভাবে লেখা হয়েছে। এরশাদের সময়ে প্রকাশ্যে প্রতিবাদ হয়েছে। অথচ আজ মানবাধিকার লঙ্ঘনের কথাও স্পষ্ট করে বলা যায় না। নানান ধরনের চাপের মধ্যে থাকতে হয়।

বেলার প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, কোনো ধরনের বিরুদ্ধ মত প্রকাশ করা যাচ্ছে না। দুই-তৃতীয়াংশ আসন নিয়ে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই জনগণের মূল্যায়ন কমে গেছে। কিন্তু জনগণের মধ্যে অসন্তোষ থাকলে কোনো উন্নয়ন টেকসই হবে না।

গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকী বলেন, সবার রাজনীতি করার সুযোগ তৈরি করতেই সংস্কার করতে হবে।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন অধ্যাপক সি আর আবরার, সংরক্ষিত আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী রুমিন ফারহানা, নাগরিক ঐক্যের কেন্দ্রীয় সদস্য জাহেদ উর রহমান, সিপিবির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুল্লাহ আল ক্বাফি রতন প্রমুখ।

সুজনের সংস্কার প্রস্তাবে বলা হয়, মূল সংবিধানে রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার ও ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ ছিল। কিন্তু সংবিধানের সেই অসাম্প্রদায়িক চরিত্র ধরে রাখা যায়নি। ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচন ছিল একতরফা ও বিতর্কিত। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও ব্যাপক কারচুপি ও মানুষের ভোটাধিকার হরণের অভিযোগ উঠেছে। আইন সংশোধন ও নির্বাচন পদ্ধতির পরিবর্তন করতে হবে। সংখ্যাগত দিক থেকে বিরোধীদের শক্তি যত সীমিতই হোক, তাদের গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নেওয়া আবশ্যক। বিচার বিভাগের সত্যিকারের পৃথককরণ ও আইনের শাসন কায়েম করতে হবে। নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতার জন্য প্রয়োজন কমিশন গঠন, আইন প্রণয়ন ও তা যথাযথভাবে অনুসরণ করা।

রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য সৃষ্টি, ৭০ অনুচ্ছেদের সংস্কার দাবিও তোলা হয়েছে প্রস্তাবে। এতে আরও বলা হয়, দলের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন বিলুপ্ত করা, জনপ্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনকে দলীয়করণের প্রভাবমুক্ত করা, ন্যায়পাল নিয়োগ করা, গণমাধ্যমের ওপর সব নিবর্তনমূলক বাধা-নিষেধের অবসান ঘটানো, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের নিবর্তনমূলক সব ধারা সংশোধন করা এবং গুম, অপহরণ ও বিচারবহির্ভূত হত্যার অবসানের মাধ্যমে মানবাধিকার লঙ্ঘনের সংস্কৃতির অবসান করা। ঋণখেলাপিসহ লুটপাটকারীদের পৃষ্ঠপোষকতার পরিবর্তে বিচারের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করার কথাও বলা হয়েছে সংস্কার প্রস্তাবে।