প্রচ্ছদ শিক্ষাঙ্গন রাবির হলে নিয়ম ভেঙে ছাত্র তোলায় প্রাধ্যক্ষ-ছাত্রলীগের দ্বন্দ্ব চরমে

রাবির হলে নিয়ম ভেঙে ছাত্র তোলায় প্রাধ্যক্ষ-ছাত্রলীগের দ্বন্দ্ব চরমে

রাবি প্রতিনিধি: নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) মহিতার হলে ছাত্রলীগের তুলে দেওয়া এক শিক্ষার্থীকে হল থেকে বের করে দেওয়ায় ওই হলের প্রাধ্যক্ষ ড. মুহ. আলী আসগরের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলে তার সমালোচনা করেছেন শাখা ছাত্রলীগের নেতারা।

এর আগে হলটির দ্বিতীয় ব্লক উদ্বোধনের পর গত বছর ২৫ সেপ্টেম্বর প্রাধ্যক্ষ ড. মুহ. আলী আসগরের প্রশংসা করেছিল শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। অথচ ছাত্রলীগের তুলে দেওয়া শিক্ষার্থীকে বের করে দেওয়ার পর থেকেই প্রাধ্যক্ষের সমালোচনা করছেন তারা। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমও সরগরম ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।

হল সূত্রে জানা যায়, মতিহার হলের ১২০ নম্বর কক্ষে নিয়মবহির্ভূতভাবে প্রথম বর্ষের জনি মিয়া নামের এক শিক্ষার্থীকে তুলে দেয় হলের আরেক শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগ কর্মী মোহন কুমার মন্ডল। ওই শিক্ষার্থী (জনি) জানিয়েছিলেন, রাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনুর মাধ্যমে ছাত্রলীগ কর্মী মোহন কুমার তাকে হলে তোলে। পরে বিষয়টি জানতে পেরে গতকাল শুক্রবার বিকেলে হল প্রাধ্যক্ষ অভিযান চালিয়ে ওই শিক্ষার্থীকে জিনিসপত্রসহ হল ত্যাগের নির্দেশ দেন। এই ঘটনায় বিক্ষুব্ধ হয়ে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা ওইদিন সন্ধ্যায় হল ফটক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে।

এসময় তারা হল প্রাধ্যক্ষের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে থাকে। এরপর প্রক্টর এলে বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা শান্ত হয়। পরে প্রক্টর ওই শিক্ষার্থীকে ফের হলে তুলে দেন। এই ঘটনার পরপরই ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ওই প্রাধ্যক্ষের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শুরু করেন সমালোচনার ঝড়। এ বিষয় নিয়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের কয়েকটি ফেইসবুক অ্যাকাইন্টের মন্তব্য তুলে ধরা হল।

শুক্রবার রাতে রাবি ছাত্রলীগ সহ-সভাপতি মাহফুজুর রহমান এহসান তার ফেইসবুক অ্যাকাউন্টে লিখেছেন, ‘মতিহার হল প্রশাসনের নিয়মের দোহাই দিয়ে শিক্ষার্থীদের সাথে বিভিন্ন ধরণের স্বেচ্ছাচারিতা ও মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ পাচ্ছি।’

এই পোস্টটিতে নানা অভিযোগ নিয়ে রাবি ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান মিশু একটি মন্তব্য করেছেন। হলে অতিথি রাখা নিষিদ্ধকরণ, এক সিটে একাধিকজনকে বরাদ্দকরণ, ডিজিটাল ওয়াইফাইয়ের নামে ইন্টারনেট সেবা না থাকা, হলের করিডোরে সাইকেল চালালে আবাসিকতা বাতিলকরণ, হল কর্মচারীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারসহ নানা অভিযোগ করেন ছাত্রলীগ নেতা মেহেদী হাসান মিশু।

এর আগে হলটির দ্বিতীয় ব্লক উদ্বোধনের পর গত বছর ২৫ সেপ্টেম্বর প্রাধ্যক্ষের ড. আলী আসগরের প্রশংসা করে ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন ওই হলের আবাসিক শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগ সহ-সভাপতি। তাতে তিনি লিখেন, ‘স্যারের অক্লান্ত পরিশ্রম এবং দায়িত্বশীলতার কারণেই এত দ্রুত মতিহার হলের নতুন ব্লকগুলো নির্মাণ, সৌন্দর্য্য বর্ধন, সিসিটিভি স্থাপনের মাধ্যমে নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণসহ সার্বিক উন্নয়ন এবং নতুন অনেক ছাত্রের আবাসনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ছাত্রদের প্রতি স্যারের দায়িত্বশীলতা সত্যিই প্রশংসনীয়।’ পোস্টটিতে ছাত্রলীগের নেতা রফিকুল প্রাধ্যক্ষ ও হলের হাউজ টিউটরকে রাবি ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে ধন্যবাদও জানান।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক আবাসিক শিক্ষার্থী বলেন, স্যার খুব কড়া। এই জন্যই হলে সিট নিয়ে অনিয়ম নেই। উনি নিয়মের মধ্যে থাকেন বলে আমরা বৈধভাবেই কোন নেতার সুপারিশ ছাড়াই সিট পেয়েছি, যেখানে অন্য হলে আসন বরাদ্দ থাকা সত্বেও শিক্ষার্থীরা সিট পায় না।

তিনি আরও বলেন, প্রভোস্ট স্যার যেভাবে হলটাকে সাজিয়েছেন, সুন্দর একটা বাগান করেছে তা সত্যিই প্রশংসনীয়। হলের ইন্টারনেট সেবা ও ডাইনিংয়ের খাবারও অন্য হলের চেয়ে ভালো।

এ বিষয়ে রাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু বলেন, আমার কাছে সমস্যা নিয়ে জনি নামের ওই ছেলেটি এসেছিল। সেজন্য তাকে মতিহার হলে তুলে দিয়েছি। কিন্তু প্রাধ্যক্ষ তাকে পুলিশ দিয়ে বের করে দিবে এটা কেমন কথা?

তিনি আরও বলেন, এর আগেও প্রভোস্ট স্যারের বিরুদ্ধে আন্দোলন হয়েছিল। গতকালকেও (শুক্রবার) শিক্ষার্থীরা নানা অভিযোগ নিয়ে স্যারের কাছে গিয়েছিল। আমরা এ বিষয়ে ভিসি স্যারের সঙ্গে কথা বলব।

অভিযোগগুলোর ব্যাপারে প্রাধ্যক্ষ ড. মুহ. আলী আসগর বলেন, যে অভিযোগগুলো হয়েছে সেগুলো আমার হলের ছেলেরা করেনি। আমার বিশ্বাস, হলের ছেলেরা আমার কার্যক্রমে সন্তুষ্ট। অভিযোগগুলো বাহিরের ছেলেরা করছে। সুতরাং একটা ঘটনাকে ধামাচাপা দেয়ার জন্যে এখন এমন সব অভিযোগ করছে যেগুলো সত্য নয়।

প্রাধ্যক্ষ বলেন, যেখানে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীরা হলে সিটের জন্য আবেদনই করতে পারেনা। সেখানে তারা (ছাত্রলীগ) বিনা অনুমতিতে তাদের ইচ্ছা মতো ছাত্র তুলে দেয় কিভাবে?

তিনি আরও বলেন, হলের ইন্টারনেট সুবিধা সবচেয়ে ভালো। এটা হলে এলেই যে কেউ বুঝবে। আর আমি যদি কর্মচারীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করতাম তাহলে হলের এতসব উন্নয়ন হত না। হল পরিচালনার স্বার্থে আবাসিকতা দেওয়া বা অন্য কাজে আমাকে কঠোর হতে হয়। কিন্তু দুর্ব্যবহারের অভিযোগ সত্য নয়।