প্রচ্ছদ শিক্ষাঙ্গন রাবিতে সাংবাদিক হত্যাচেষ্টা : মামলা তদন্তে গড়িমসি

রাবিতে সাংবাদিক হত্যাচেষ্টা : মামলা তদন্তে গড়িমসি

রাবি প্রতিনিধি: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) কর্মরত সাংবাদিক আরাফাত রহমানের ওপর হামলার ১৪ মাস পেরোলেও এখনও অভিযোগপত্র দিতে পারেনি পুলিশ। এ ঘটনায় পর্যাপ্ত প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও এখনও অভিযোগপত্র গঠন না করায় পুলিশের বিরুদ্ধে তদন্তে গড়িমসির অভিযোগ তুলেছেন আরাফাত ও তার সহকর্মীরা।

এরই মধ্যে এ মামলায় দায়িত্বপ্রাপ্ত তদন্ত কর্মকর্তা এসআই রায়হান প্রমোশন পেয়ে জয়পুরহাটে গেছেন। এখন মামলাটির দায়িত্ব পেয়েছেন মতিহার থানার এসআই শাহাবুল ইসলাম। অভিযোগপত্র দিতে দেরী হওয়ার কারণ জানতে চাইলে এসআই রায়হান বলেন, ‘সিনিয়র অফিসারের সিদ্ধান্ত ছাড়া মামলাটি নিষ্পত্তি করা যাবে না।’

গত বছর ১০ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে বাস ভাঙচুরের ছবি তোলায় ডেইলি স্টারের রাবি প্রতিনিধি আরাফাতের ওপর হামলা চালানো হয়। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের চারজনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও দশজনের বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টার মামলা দায়ের করেন আরাফাত। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছেও একটি লিখিত অভিযোগ করেন তিনি।

ওই চারজন হলেন রাবি ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি আহমেদ সজীব, সাংগঠনিক সম্পাদক হাসান লাবন, আইন বিষয়ক সম্পাদক সাইফুল ইসলাম বিজয়, এবং তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক মাহমুদুর রহমান কানন।

আরাফাতের ওপর হামলার পর থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত সাংবাদিকরা সুষ্ঠু তদন্ত ও দ্রুত আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র চেয়ে আসছে। কিন্তু ১৪ মাস পেরিয়ে গেলেও এখনও কোন অভিযোগ গঠন করতে পারেনি মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। হামলার এক বছরের মাথায় তদন্ত কর্মকর্তা মতিহার থানার এসআই রায়হান জুলাই মাসে প্রতিবেদন জমা দেয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু তারও দুই মাস পেরিয়ে গেলেও সেই প্রতিবেদন তিনি জমা করতে পারেন নি। এরই মধ্যে এসআই রায়হানের প্রমোশন পেয়ে জয়পুরহাটে গেছেন।

রাবি রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি শিহাবুল ইসলাম বলেন, ওই সময়ে হামলার ছবি, ভিডিও থাকা সত্ত্বেও তদন্ত নিয়ে গড়িমসি দেখতে পাচ্ছি। হামলার এক বছর হওয়ার দিন তদন্ত কর্মকর্তা বলেছিলেন, এ মাসেই তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিবেন। কিন্তু তারপরেও দুই মাস পার হয়ে গেছে। এখনো তদন্ত প্রতিবেদন পেলাম না।

আরাফাত বলেন, আমার ওপর যারা হামলা করেছিলো, তারা পরবর্তীতে বিভিন্ন হামলার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। আর জড়িত থাকার প্রমাণও রয়েছে। তবুও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কিংবা পুলিশ কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। অথচ তারা দায়িত্ববান হলেই মামলাটির অগ্রগতি হতে পারতো।

এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ করলেও তারা নীরব ভূমিকা পালন করছে বলে অভিযোগ করেন শিহাবুল ও আরাফাত। আরাফাতের অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে রাবি প্রক্টর ড. লুৎফর রহমান বলেন, আমি দায়িত্ব নেয়ার পর এমন কোন অভিযোগ দেয়নি। তাই সে সম্পর্কে আমার জানা নেই।

মামলার বিষয়ে এসআই রায়হান বলেন, মামলাটি এখনও তদন্তাধীন। বিষয়টি সিনিয়র অফিসাররা দেখতে চাচ্ছে। একবার আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম যে মামলাটা শেষ করে দেই। কিন্তু সিনিয়র অফিসাররা বললেন যে বিষয়টা দেখতে হবে। দেখে তারপর নিষ্পত্তি করা হবে।

তিনি আরও বলেন, এখন মামলার দায়িত্বে আছেন এসআই শাহাবুল। (তার ক্ষেত্রেও) ওই একই অবস্থা, সিনিয়র অফিসারের সিদ্ধান্ত ছাড়া মামলাটি নিষ্পত্তি করা যাবে না।

মামলার অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে মতিহার থানার এসআই শাহাবুল বলেন, যেহেতু এখানে দুই পক্ষই শিক্ষার্থী তাই বিষয়টি আরও গভীর ভাবে তদন্ত করা হচ্ছে। তাই একটু সময় লাগছে। আশা করি এক দুই মাসের মধ্যে মামলার অভিযোগ গঠন করা হবে।