প্রচ্ছদ শিক্ষাঙ্গন রাবিতে শহীদ ড. শামসুজ্জোহার প্রতিকৃতি মুছে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা

রাবিতে শহীদ ড. শামসুজ্জোহার প্রতিকৃতি মুছে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা

ঊনসত্তরের গণঅভ্যূত্থানে প্রথম শহীদ বুদ্ধিজীবী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন প্রক্টর ড. শামসুজ্জোহার প্রতিকৃতি মুছে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা।

বুধবার সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যায়ের শহীদ মিনার এলাকায় গিয়ে পুরো দেয়ালটি সাদা রঙ করা দেখা যায়।জানা গেছে, ড. জোহার চমৎকার এ প্রতিকৃতিটি গতবছর করিয়েছিল ছাত্র ইউনিয়নের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা। প্রতিকৃতিটির শিল্পী ছাত্র ইউনিয়নের নেতা আফরুকুন নাহার তানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার শিক্ষার্থী।

তিনি বলেন, ড. জোহা আমাদের শিক্ষক হিসেবে একজন আইডল। এখন যারা শিক্ষকতা করছেন, জোহা স্যারের মত খুব কম সংখ্যক শিক্ষকই আছেন। তার মাহাত্ম্য সবার মাঝে ধরে রাখতে সম্মান জানিয়ে এটি করা হয়েছিল। পরে ওই প্রতিকৃতির পাশেই ১৯৯৩ সালের ছাত্রশিবিরের হামলায় নিহত শহীদ তপন সরকারেরও আরেকটি প্রতিকৃতি আঁকা হয়েছিল। কিন্তু বুধবার রাতে হঠাৎ করেই খেয়াল করি দেয়ালটি মুছে দিয়েছে কে বা কারা।

তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, একজন শিক্ষক হিসেবে পেশাগত দিক থেকে শিক্ষার্থীদের প্রতি কেমন দায়িত্ব থাকে, বিশ্ববিদ্যালয় তথা রাষ্ট্রের প্রতি কেমন দায়িত্ব থাকে। এই জিনিসটা জীবিত রাখতেই আমরা এটা করেছিলাম। সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী আন্দোলনে তপন সরকারের ভূমিকা এ প্রজন্মের সামনে আনতে তারও প্রতিকৃতিটি আঁকা হয়েছিল। কিন্তু দেয়ালটি ষড়যন্ত্রমূলক মুছে দেয়া হয়েছে।

রাবি ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মিঠুন চন্দ্র মোহন্ত বলেন, প্রতিটি শিক্ষক-শিক্ষার্থীর মাঝে যে সম্পর্ক তাতে জোহা স্যার ও তপনের অবদান এখনো প্রাসঙ্গিক। জোহা স্যার ও তপনের প্রতিকৃতির সঙ্গে দেয়াল লিখন করার মাধ্যমে তাদের অবদান ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করা হয়েছিল।

তিনি আরও বলেন, শহীদ মিনার একটি জনসমাগমপূর্ণ এলাকা। শহীদদের সম্মান জানাতে এখানে অনেক মানুষের আনাগোনা হয়। যাতে করে সবার চোখে সহজেই পড়ে, তা ভেবেই এটি শহীদ মিনারের পিছনে করা হয়েছিল। কিন্তু ড. জোহা ও তপন কার চক্ষুশূল হলেন, বোঝা যাচ্ছে না। তবে এর দায় প্রশাসনের।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফোকলোর বিভাগের শিক্ষক ড. মো. আমিরুল ইসলাম বলেন, শহীদ ড. জোহা আন্দোলন-সংগ্রাম-প্রতিবাদের একটা প্রতীক। তাকে সামনে রেখে যারা আগামী দিনের সমাজ বদল করতে চায়, সত্যিকার অর্থেই যারা এই দেশে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা কায়েম করতে চায়, তাদের জন্য এটি একটা লড়াই। সেই লড়াই যে সবাইকে করতে হবে, চালিয়ে যেতে হবে এই দেঁয়াল লিখন ছিল তার আহ্বান। যারা মুছে দিক, তারা শুধু ড জোহাকে অপমান করেনি, নিজেদের অস্তিত্বকে অস্বীকারও করেছে।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রক্টর অধ্যাপক লুৎফর রহমান বলেন, ছাত্র ইউনিয়নের মৌখিক অভিযোগ পেয়েছি। প্রশাসন ড. জোহার প্রতিকৃতি মুছে দেয়ার কোনো নির্দেশনা দেয়নি। কে বা কারা এটা করেছে, খোঁজ নিচ্ছি।