প্রচ্ছদ শিক্ষাঙ্গন রাবিতে বিসিএস ফরম পূরণে প্রতারণা, আটক-৩

রাবিতে বিসিএস ফরম পূরণে প্রতারণা, আটক-৩

রাবি প্রতিনিধি: ৪০তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার ফরম পূরণে প্রতারণা করে প্রায় দুই লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) ক্যাম্পাসের ভেতরের দুই কম্পিউটার দোকানদারের বিরুদ্ধে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় তিন শতাধিক শিক্ষার্থীর আবেদন ফরম ভুলভাবে পূরণ করে দেওয়ায় পরীক্ষায় তাদের বসতে পারা নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

বৃহস্পতিবার সকালে প্রতারণার বিষয়টি প্রক্টরকে জানানো হলে অভিযুক্ত তিনজনকে আটক করে প্রক্টর অফিসে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। পরে বেলা দুইটার দিকে প্রাথমিক সত্যতার ভিত্তিতে মতিহার থানা পুলিশ তাদের আটক করে।

আটককৃতরা হলেন, মোস্তাক আহমেদ মামুন। সে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন মার্কেটের স্পন্দন কম্পিউটার দোকানের মালিক। অপর দু’জন হলেন, আরিফ হোসেন ও রফিকুল ইসলাম। মামুনের দোকানের পাশেই তাদের ভাই ভাই কম্পিউটারের দোকান।

প্রক্টর অফিস সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ কর্ম কমিশন (পিএসসি) থেকে বিসিএস ফরম পূরণের ক্ষেত্রে সাধারণ শিক্ষার্থীদের আবেদনের জন্য সাতশ ৫টাকা এবং প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য একশ ৫টাকা ফরমের দাম নির্ধারণ করা হয়। অভিযুক্তরা ফরম পূরণে একদিন সময় লাগে এমন কথা বলে আবেদনকারীদের রোল/রেজিস্ট্রেশন নম্বর লিখে রেখে তাদেরকে পরদিন এসে প্রবেশপত্র সংগ্রহ করতে বলতেন। পরে অভিযুক্তরা ওয়েবসাইটে শিক্ষার্থীদের যাবতীয় তথ্য প্রদানের আগে একটি নকল প্রবেশপত্র বের করে আবেদনকারীদেরকে দিয়ে দেয়। এরপর তারা আবেদনকারীদের প্রতিবন্ধী দেখিয়ে ওয়েবসাইটে তাদের ফরম পূরণ করে দেয়। এতোদিন এভাবে প্রতারণা করে তারা প্রায় তিন শতাধিক শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ছয়’শ করে টাকা প্রায় দুই লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।

ভুক্তভোগী আবেদনকারীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গত বুধবার রাতে এক আবেদনকারী তার প্রবেশপত্রের সঙ্গে মোবাইলে আসা ইউজার আইডি কোডটির মিল না থাকায় বিষয়টি তার এক বন্ধুকে জানায়। পরে তারা বেশ কয়েকজনের সঙ্গে কথা বললে তাদের একই সমস্যা দেখতে পান। পরে বৃহস্পতিবার সকালে সাংবাদিকসহ ভুক্তভোগীরা অভিযুক্তদের দোকানে এসে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন। পরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে অভিযোগ দেন। এর প্রেক্ষিতে তাদেরকে আটক করে প্রক্টর দপ্তরে জিজ্ঞাসাবাদ করে পরে তাদের পুলিশে দেওয়া হয়।

প্রতারণার ব্যাপারে অভিযুক্ত এক দোকানী মামুনের সাথে কথা বললে তিনি জানান, আমি ইচ্ছা করে অতিরিক্ত মুনাফা লাভের আশায় এ কাজ করেছি। আমার ভুল হয়েছে। আমি সব টাকা ফিরিয়ে দেবো। আর রফিকুল ও আরিফ কাজে নতুন হওয়ায় তারা আমার কাছ থেকে শিক্ষার্থীদের আবেদন করতে বলেছিলো। এ বিষয়ে তারা কিছুই জানে না দাবি তার।

পরে প্রক্টর দপ্তরে তিনি নগদ ৮০ হাজার টাকা ফেরত দেয় এবং বাকি টাকা শীঘ্রই পরিশোধ করবে জানান তিনি।

এ ঘটনায় ৪০তম বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবে কিনা এমন শঙ্কা প্রকাশ করেন ভূক্তভোগী শিক্ষার্থীরা। তবে পিএসসির বরাত দিয়ে রাবির ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. লায়লা আরজুমান বানু ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের আশ্বস্ত করে করে বলেন, পিএসসির সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। আজ সন্ধ্যা ৬ টার মধ্যে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের একটি তালিকা পাঠানোর কথা জানিয়েছে তারা। পাঠানোর পর পিএসসি প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিবে এবং শিক্ষার্থীদের জন্য টাকা প্রদানের ৭২ ঘন্টা সময় বাড়ানো হবে।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর অধ্যাপক ড. লুৎফর রহমান বলেন, বিষয়টি শিক্ষার্থীরা আমাকে জানালে আমি দ্রুত অভিযুক্তদে ধরে এনে আমার অফিসে জিজ্ঞাসাবাদ করি। পরে প্রাথমিক সত্যাতার ভিত্তিতে তাদের পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছি। এবং তাদের কাছ থেকে ৮০ হাজার টাকা উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে।

মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহাদত হোসেন বলেন, প্রক্টর দপ্তর থেকে আমরা তিন দোকানিকে প্রতারণার অভিযোগে আটক করেছি। তারা এখন থানায় আছে। রফিকুল ও আরিফকে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। তাদের বিরুদ্ধে প্রমাণ না পেলে ছেড়ে দেওয়া হবে। আর কেউ যদি মামুনের বিরুদ্ধে মামলা করে তাহলে আমরা তার বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেবো বলে জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।