প্রচ্ছদ জাতীয় যে কারণে তাবলিগ জামাতের দুগ্রুপে দ্বন্দ্ব

যে কারণে তাবলিগ জামাতের দুগ্রুপে দ্বন্দ্ব

টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে শনিবার সকালে মাওলানা সা’দ আহমাদ কান্ধলভী ও মাওলানা যোবায়ের আহমেদপন্থীদের মধ্যে পাঁচ দিনের জোড় ইজতেমা অনুষ্ঠান কেন্দ্র করে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।

শনিবার সকালে মাওলানা সা’দপন্থীরা ইজতেমা ময়দানে গেলে ময়দানের প্রতিটি গেটে তালাবদ্ধ দেখতে পেয়ে তারা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। একপর্যায়ে সা’দপন্থীরা ময়দানের গেট ভেঙে ঢোকার চেষ্টা করলে উভয়পক্ষের মুসল্লিদের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। একপর্যায়ে তারা গেট ভেঙে ময়দানে প্রবেশ করে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন।

তাবলিগ জামাতের দুগ্রুপের দ্বন্দ্ব শনিবারের সংঘর্ষের মধ্য দিয়ে সহিংস রূপ নিয়েছে। তবে এ দ্বন্দ্ব চলছে বেশ কিছু দিন ধরেই। আর এই দ্বন্দ্বের প্রধান কারণ তাবলিগ জামাতের কেন্দ্রীয় নেতা ভারতীয় সা’দ কান্দলভী।

তাবলিগ জামাতের বিভক্তি সৃষ্টির মূল কারণ সা’দ কান্দলভীর কিছু সংস্কারমূলক বক্তব্য।

তিনি বলেন, ‘ধর্মীয় শিক্ষা বা ধর্মীয় প্রচারণা অর্থের বিনিময়ে করা উচিত নয়’-যার মধ্যে মিলাদ বা ওয়াজ মাহফিলের মতো কর্মকাণ্ড বলে মনে করা হয়।

সা’দ কান্দলভী আরও বলেন, ‘মাদ্রাসাগুলোর শিক্ষকদের মাদ্রাসার ভেতরে নামাজ না পড়ে মসজিদে এসে নামাজ পড়া উচিত-যাতে মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ে’

কিন্তু তার বিরোধীরা বলছেন-সা’দ কান্দলভী, যা বলছেন, তা তাবলিগ জামাতের প্রতিষ্ঠাতা নেতাদের নির্দেশিত পন্থার বিরোধী এবং আহলে সুন্নাত ওয়া’ল জামাতের বিশ্বাস ও আকিদার বাইরে।

কিন্তু সাদের সমর্থকরা বলছেন-তাদের নেতার বক্তব্য বা সংস্কারের প্রস্তাব মানতে না পেরেই বাংলাদেশে সংগঠনটির কর্মকাণ্ডকে ‘রাজনৈতিক চেহারা’ দেয়া হয়েছে।

ভারতীয় উপমহাদেশে সুন্নি মুসলমানদের বৃহত্তম সংগঠন এই তাবলিগ জামাতের মধ্যে এই দ্বন্দ্ব প্রথম প্রকাশ্য রূপ পায় ২০১৭ সালের নভেম্বরে, যখন তাদের মূল কেন্দ্র কাকরাইলে দুদল কর্মীর মধ্যে হাতাহাতি হয়।

এর পর এ বছর জুলাই মাসে ঢাকায় কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামের আমির শাহ আহমদ শফীর উপস্থিতিতে তাবলিগ জামাতের একাংশের এক সম্মেলনে সাদকে বাংলাদেশে নিষিদ্ধ করা হয়।

আর এ কারণে সা’দ কান্দলভী বিশ্ব ইজতেমায় যোগ দিতে ঢাকায় এসেও ইজতেমা প্রাঙ্গণে যেতে পারেননি।

এ বিরোধ এখন ছড়িয়ে পড়েছে সারা বিশ্বের তাবলিগ জামাতের অনুসারীদের মধ্যে। ব্রিটেন, আমেরিকা এবং ইউরোপের দেশগুলোতে তাবলিগ জামাতের নেতৃত্বের বিভক্তি দেখা দিয়েছে অনেক দিন আগেই।

বিরোধ মেটানোর চেষ্টা থাকলেও তাতে এখনও ইতিবাচক ফল দেখা যাচ্ছে না।