প্রচ্ছদ আর্ন্তজাতিক মজলুম জননেতার ৪২তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ

মজলুম জননেতার ৪২তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ

মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী। ‘মজলুম জননেতা’ উপাধিতে যাকে এক ডাকে সবাই চেনেন। আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের অগ্রনায়কের ৪২তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ।

১৯৭৬ সালের এই দিনে ঢাকার তৎকালীন পিজি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন। পরে টাঙ্গাইলের সন্তোষে তাকে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়।

তিনি ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। মওলানা ভাসানী নামে তিনি সাধারণ মানুষের আপনজনে পরিনত হয়েছিলেন। তিনি মাওপন্থী কম্যুনিস্ট তথা বামধারা রাজনীতির আদর্শে বিশ্বাসী ছিলেন।

তিনি ১৯২৯ সালে আসামের ধুবড়ী জেলার ব্রহ্মপুত্র নদের ভাসান চরে প্রথম কৃষক সম্মেলন করেন। এখান  থেকে তার নাম রাখা হয় ‘ভাসানীর মওলানা’। এরপর থেকে তার নাম আবদুল হামিদ খানের শেষে ‘ভাসানী’ যুক্ত হয়।

মওলানা ভাসানী ছিলেন আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের অগ্রনায়ক, মুক্তিযুদ্ধে প্রবাসী বিপ্লবী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের চেয়ারম্যান। রাজনৈতিক জীবনে তিনি আজীবন শোষিত মানুষের পক্ষ নিয়েছেন। তিনি নিপীড়িত নির্যাতিত মানুষের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে সব সময় থেকেছেন আপসহীন নেততৃত্বের ভূমিকায়।

মওলানা ভাসানী ১৯৪৭ সালে ভারত-পাকিস্তান বিভক্ত ও ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। তিনি দেশের মানুষের কাছে ‘মজলুম জননেতা’ হিসেবে সমধিক পরিচিত।

মওলানা ভাসানীর জন্ম ১৮৮০ সালের ১২ ডিসেম্বর সিরাজগঞ্জ  জেলার ধানগড়া গ্রামে। তার বাবার নাম হাজী শরাফত আলী ও মায়ের নাম মজিরন বিবি। মক্তব থেকে শিক্ষাগ্রহণ করে কিছুদিন মক্তবেই শিক্ষকতা করেন। ১৮৯৭ সালে পীর সৈয়দ নাসীরুদ্দীনের সঙ্গে আসাম যান। ১৯০৩ সালে তিনি আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। ইসলামিক শিক্ষার উদ্দেশ্যে ১৯০৭ সালে দেওবন্দ যান। দুই বছর  সেখানে অধ্যায়ন করে আসামে ফিরে আসেন। ১৯১৭ সালে  দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস ময়মনসিংহ সফরে এলে তার ভাষণ শুনে ভাসানী অনুপ্রাণিত হন।

মওলানা ভাসানীর রাজনৈতিক জীবন বর্ণাঢ্য। ১৯১৯ সালে কংগ্রেসে যোগদান করে খেলাফত ও অসহযোগ আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে কারাভোগ করেন। ১৯২৬ সালে আসামে প্রথম কৃষক-প্রজা আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটান।

১৯৪৪ সালে মাওলানা ভাসানী আসাম প্রাদেশিক মুসলিম লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৪৫-৪৬ সালে আসাম জুড়ে ‘বাঙ্গাল খেদাও’ নামে দাঙ্গা চলাকালে বাঙালিদের রক্ষায় ব্যাপক ভূমিকা রাখেন তিনি। ১৯৪৯ সালে পূর্ববঙ্গের প্রথম বিরোধী রাজনৈতিক দল পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৪৯ সালে পূর্ববঙ্গে খাদ্যাভাব দেখা দিলে ভুখা মিছিলে নেতৃত্ব দেন। বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে ১৯৫২ এর ৩০ জানুয়ারি ঢাকা  জেলার বার লাইব্রেরি হলে তার সভাপতিত্বে সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা কর্মপরিষদ গঠিত হয়। রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের কারণে গ্রেফতার হয়ে ১৬ মাস কারানির্যাতনের শিকার হন। ১৯৭৬ সালের ১৬ মে ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণের প্রতিবাদে ঐতিহাসিক লং মার্চে নেতৃত্ব দেন। এভাবে পদে পদে জাতির গুরুত্বপূর্ণ সময়ে তার বলিষ্ঠ নেতৃত্ব দেখতে পাওয়া যায়।

মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। প্রদত্ত বাণীতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর আদর্শকে ধারণ করে দেশপ্রেম ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হওয়ার জন্য নতুন প্রজন্মের প্রতি আহান জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, মওলানা ভাসানী ভারতীয় উপমহাদেশের রাজনীতিতে এক অবিস্মরণীয় নাম। তার (ভাসানী) নেতৃত্বের ভিত্তি ছিল সমাজের খেটে খাওয়া মেহনতি মানুষ, কৃষক-শ্রমিক-সাধারণ জনগণ। কৃষক-শ্রমিক ও সাধারণ জনগণের অধিকার এবং স্বার্থ রক্ষার জন্য তিনি আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন।

রাষ্ট্রপতি বলেন, মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী সবসময় ব্যক্তি স্বার্থের ঊর্ধ্বে জাতীয় স্বার্থকে প্রাধান্য দিতেন। তিনি অত্যন্ত সাদাসিধে জীবনযাপন করতেন।

প্রদত্ত বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘পাকিস্তানি ঔপনিবেশিক শাসকদের অত্যাচার-নিপীড়নের বিরুদ্ধে তিনি ছিলেন উচ্চকণ্ঠ। বাঙালি জাতিসত্তা বিকাশে তাঁর গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে।’

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে তাঁর আদর্শিক ঐক্য ও রাজনৈতিক ঘনিষ্ঠতা ছিল উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, শোষণ ও বঞ্চনাহীন ও প্রগতিশীল, গণতান্ত্রিক এবং অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গঠনের জন্য তিনি আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন।

রাজধানী ঢাকাসহ টাঙ্গাইলের সন্তোষে নানা কর্মসূচির মধ্যদিয়ে আজ দিবসটি পালিত হচ্ছে। এ উপলক্ষে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে সন্তোষে তার মাজারে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন এবং আলোচনা সভা।